১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
নয়া দিগন্তের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে এনামুল হক শামীম

নদীভাঙনের কষ্টটা আমাকে একটু বেশি পীড়া দেয়

-

এ কে এম এনামুল হক শামীম একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-২ আসন থেকে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৬৫ সালের ১০ নভেম্বর শরীয়তপুর জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী আলহাজ মো: আবুল হাসেম মিয়া এবং মা বেগম আশ্রাফুন নেছা একজন রতœগর্ভা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করা এনামুল হক শামীম জাকসুর ভিপি ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট, সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন। রাজনৈতিক মামলায় বহুবার কারাবরণকারী এ নেতা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আছেন। বর্তমান সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা এনামুল হক শামীম একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, বন্যা পরিস্থিতি, নদীভাঙন কবলিত মানুষের সুখ-দুঃখ, নদীভাঙন কবলিত মানুষকে নিয়ে তার ভাবনাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নয়া দিগন্তের সাথে খোলামেলা আলোচনা করেছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক মনিরুল ইসলাম রোহান।
নয়া দিগন্ত : নদীভাঙন রোধে সরকারের প্রস্তুতি সম্পর্কে কিছু বলুন?
এনামুল হক শামীম : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সমন্বিতভাবে কাজ করার ফলে নদীভাঙন রোধ করা সম্ভব হচ্ছে। এবার ভাঙন রোধে আগাম প্রস্তুতি থাকায় হাওরাঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ তাদের ফসল কেটে ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছে। যে কারণে স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল ও গ্রাম নদীতে বিলীন হয়নি। আমাদের পূর্ব প্রস্তুতি ছিল বলেই নদীভাঙন রোধ সম্ভব হয়েছে।
নয়া দিগন্ত : আপনি নিজেই নদীভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষ, দায়িত্ব পাওয়ার পর ভাঙন রোধে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন?
এনামুল হক শামীম : নদীভাঙন রোধে আমাকে বা আমাদের (মন্ত্রণালয়ের) কোনো পদক্ষেপ নিতে হয়নি। বর্তমান মেয়াদ ছাড়াও গত দুই মেয়াদে সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের জন্য তিনি গাইড লাইন তৈরি করে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর গাইড লাইন আমরা ফলো করছি। তবে এ কথা সত্য, আমি নদীভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ। কাজেই নদীভাঙনের কষ্টটা আমাকে একটু বেশি পীড়া দেয়। অনেকের চেয়ে আমার উপলব্ধিটা একটু ভিন্ন। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই বিশেষ করে ফেব্রুয়ারি থেকে আমরা নদীভাঙন কবলিত এলাকাকে চিহ্নিত করি। এর মধ্যে ৬৫০টি এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছিল। ৬৫টি এলাকা সবচেয়ে বেশি ভাঙনকবলিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এসব জায়গায় ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করি। নদীভাঙন কবলিত এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সবার ছুটি বাতিল করা হয়। আমাদের একটাই পদক্ষেপ ছিল নদীভাঙন থেকে মানুষকে রক্ষা করা। আমি ছাড়াও প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, সচিব কবির বিন আনোয়ার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মাহফুজুর রহমানসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে নদীভাঙন রোধে যা যা করণীয়, সেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করি। আমরা টিমওয়ার্ক করে কাজ করছি। আমাদের টিম লিডার জননেত্রী শেখ হাসিনা। কাজেই তার নিদের্শ বাস্তবায়নে আমরা সমন্বয় করে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি; যে কারণে নদীভাঙন কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি।
নয়া দিগন্ত : নদীভাঙন রোধে আগাম প্রস্তুতি নিয়েছেন কি না?
এনামুল হক শামীম : আগাম প্রস্তুতি হিসেবে নদীভাঙন কবলিত এলাকায় কমপক্ষে ১০ হাজার জিও ব্যাগ (কিছু কিছু জায়গার ১৫ হাজার) রাখা হয়েছিল। ভাঙন দেখা দেয়ার সাথে সাথে তা ফেলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয়েছে। গত কয়েক দিন আগেই চাঁদপুর, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। সাথে সাথে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয়েছে। ফলে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রক্ষা পেয়েছে। না হলে পানিতে বিলীন হয়ে যেত। আমরা বাঁধ সংস্কার বা নির্মাণ কোনো কাজেই গাফিলতি সহ্য করব না। এটা সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
নয়া দিগন্ত : নদীভাঙনের ফলে মানুষের জীবন মানের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কী?
এনামুল হক শামীম : নদীভাঙনে ক্ষয়ক্ষতি হয়নি এমন দাবি করছি না। নদীভাঙন হয়েছে, ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে। এতে নদীভাঙন কবলিত মানুষের জীবন মানের ব্যাঘাত ঘটেছে। কিন্তু অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এবার খুবই কম ভেঙেছে। কারণ আমাদের আগাম প্রস্তুতি ছিল। আমরা সবাই আন্তরিক ছিলাম।
নয়া দিগন্ত : এ পর্যন্ত নদীভাঙন কবলিত কতটি এলাকা পরিদর্শন করেছেন?
এনামুল হক শামীম : এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৫টি নদীভাঙন কবলিত জায়গা পরিদর্শন করেছি। এরই মধ্যে কোথাও কোথাও একাধিকবার গিয়েছি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেÑ চট্টগ্রামের আনোয়ারা, মিরেরসরাই, সিতাকুণ্ডু, নোয়াখালীর হাতিয়া, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইলের সদর, নাগরপুর, দেলদুয়ার, ভুয়াপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, মুন্সিগঞ্জ, ফেনী, চাঁদপুর সদর ও মতলব, গাইবান্দা, সাতক্ষীরা, বগুড়া, সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, মিরপুর বেড়িবাঁধ। এসব জায়গায় পরির্দশনের পর ভাঙন রোধে আগাম প্রস্তুতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
নয়া দিগন্ত : উত্তরাঞ্চলে এবার বেশ কিছু জেলায় ভয়াবহ বন্যায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ভেঙে গেছে, এতে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে?
এনামুল হক শামীম : ক্ষতির নির্দিষ্ট পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। কাজ চলছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর আমরা সঠিক তথ্য দিতে পারব। এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকলে সাথে সাথে কাজ করব।
নয়া দিগন্ত : আপনি সম্প্রতি কয়েকটি জেলায় সফর করেছেনÑ সেখানে প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিলÑ ‘ত্রাণ চাই না-বাঁধ নির্মাণ করুন’ এ প্রসঙ্গে কিছু বলবেন কী?
এনামুল হক শামীম : দেখুন, আগে মানুষ ত্রাণের জন্য দীর্ঘ লাইন দিয়ে বসে থাকত। মানুষ অভাবী ছিল। এখন আর অভাবী মানুষ নেই। এটাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফলতা। কারণ দেশের মানুষের উন্নয়ন হয়েছে বলেই আজকে মানুষ ত্রাণ চায় না। তারা বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান। আমরা সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, বগুড়ায় গিয়ে এমন চিত্র দেখেছি। এসব এলাকায় আমি ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা: এনামুর রহমান সরেজমিন পরিদর্শন করে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছি। যেসব জায়গায় বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে, তাৎক্ষণিক জিও ব্যাগ ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ভাঙন রোধ ও ত্রাণ তৎপরতায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ছাড়াও সেনাবাহিনী, পুলিশ, সিভিল প্রশাসন আমাদের যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও নিয়মিত মনিটরিং করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে সবাই আন্তরিক ছিল বলেই আমরা নদীভাঙন রোধে কাজ করতে সক্ষম হচ্ছি।
নয়া দিগন্ত : বিএনপি নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেÑ আপনি বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?
এনামুল হক শামীম : গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই নির্বাচনে বিএনপিও অংশগ্রহণ করেছে। ৩০০ আসনেই তারা প্রার্থী দিয়েছে। যদিও জনগণ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। বিএনপির ভরাডুবি হয়েছে তাদের অতীতের জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচির কারণে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে নির্বাচন বানচাল করার জন্য যে জ্বালাও-পোড়াও করেছে, এটা জনগণ ভালোভাবে নেয়নি। অরাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। গত নির্বাচনে তাদের যে কয়েকজন প্রার্থী জিতেছেন, তারা এখন শপথ নিয়ে জাতীয় সংসদে ভূমিকা রাখছেন। তাহলে বিএনপি কেন নতুন নির্বাচনের দাবি করছেন, তা বোধগম্য নয়। তাদের এই দাবি অমূলক। আন্তর্জাতিক বিশ্ব একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। ভারত, চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরবসহ বিশ্ব সম্প্রদায় আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছে। আমরা সরকার গঠন করেছি। ফলে আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপিকে ওই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
নয়া দিগন্ত : আপনাকে ধন্যবাদ।
এনামুল হক শামীম : আপনাকেও ধন্যবাদ।

 


আরো সংবাদ



premium cement
তোকে যদি এরপর হলে দেখি তাহলে খবর আছে, হুমকি ছাত্রলীগ নেতার বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা করা হয়নি : প্রধানমন্ত্রী দাওয়াতী ময়দানে সকল নেতাদের ভূমিকা রাখতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেল শ্রমিকদের মাঝে ইসলামের আদর্শের আহ্বান পৌঁছাতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে বিমানবন্দরের টার্মিনালে ঢুকে গেলো বাস, ইঞ্জিনিয়ার নিহত গোয়ালন্দে প্রবাসীর স্ত্রী-সন্তানকে মারধর, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন সিরিয়ায় আইএস-এর হামলায় সরকার সমর্থক ২০ সেনা সদস্য নিহত ফরিদপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু জনসমর্থনহীন সরকার জনগণের আওয়াজ নির্মমভাবে দমন করে : রিজভী

সকল