২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ডিজিটাল পাল্লা দিয়ে চলছে ডিজিটাল চুরি

-

আধুনিকায়নের সাথে পাল্লা দিয়ে ব্যবসায়-বাণিজ্যে ডিজিটাল পাল্লার ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। তবে মানগত দিক বিবেচনা না করেই বাড়ছে এই ব্যবহার। আর ডিজিটাল পাল্লার অপব্যবহারে বাড়ছে ডিজিটাল চুরিও। অসাধু ব্যবসায়ীদের ডিজিটাল কারসাজিতে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতা। উপযুক্ত দাম দেয়ার পরও পরিমাণ মতো পণ্য না পেয়ে ঠকছেন অহরহ। কিন্তু কারসাজি ধরতে না পেরে সব কিছুই মেনে নিতে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের। তাছাড়া বিএসটিআই বা সরকারের অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কোনোরূপ চেকিং না করায় এবং কোনো ফি আদায় না করায় সরকারও বঞ্চিত হচ্ছে মোটা অঙ্কের রাজস্ব থেকে।
সনাতন ওয়িং পাল্লার পাশাপাশি ওজন পরিমাপের জন্য বর্তমানে ডিজিটাল স্কেলের ব্যবহার ব্যাপক হারে বাড়ছে। হাতের কারসাজির পাশাপাশি সনাতন পদ্ধতির পাল্লায় কম ওজনের বাটখারা ব্যবহার করে ক্রেতাদের ঠকানোর অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সে কারণে ডিজিটাল স্কেলকে মনে করা হচ্ছিল অপেক্ষাকৃত নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য। ক্রেতা-বিক্রেতাদের আগ্রহের কারণে গত কয়েক বছরে নগর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ডিজিটাল স্কেলের ব্যবহার বেড়েছে। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা অল্প সময়ের ব্যবধানেই ডিজিটাল স্কেলকে বিতর্কিত করে তুলেছে। এ মেশিনে নানান কারসাজির মাধ্যমে ওজন-পরিমাপে কম দেয়া হচ্ছে।
পণ্যে সঠিক ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিত করার দায়িত্বে নিয়োজিত বিএসটিআইর মেট্রোলজি বিভাগ সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, সনাতন পদ্ধতির পাল্লার চুরি ঠেকাতে ডিজিটাল স্কেলের অনুমোদন দেয় সরকার। নিয়মানুযায়ী সনাতন পাল্লা ও বাটখারার মতো ডিজিটাল পাল্লার ক্ষেত্রেও বিএসটিআই থেকে নির্দিষ্ট ফি’র বিনিময়ে বিশেষ স্ট্যাম্প নেয়ার কথা। কিন্তু আমদানিকারক ও পরিবেশকেরা এ আইনটি মান্য না করায় নানারূপ সমস্যা দেখা দিয়েছে। ওজন-পরিমাপে কম দেয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে অহরহ।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ডিজিটাল পাল্লার পরিমাপে কম পণ্য দেয়ার জন্য একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী পলিথিন পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছে। ডিজিটাল মেশিনটি ধুলাবালির আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য তারা পলিথিন ব্যবহার করে। পলিথিন দিয়ে মেশিনটি ঢেকে রাখে। ওই মেশিনের ওপর কোনো পণ্য স্বাভাবিক অবস্থায় আলতোভাবে রাখা হলে স্বাভাবিক ওজন দেয়। আবার একটুচাপ দিয়ে কিংবা পলিথিনের ওপর সামান্য ঘষে পণ্যটি রাখা হলে ঘর্ষণের মাত্রার ভিত্তিতে বাড়তি ওজন দেখায় স্কেলটি। এতে করে ক্রেতার বোঝার কোনো উপায়ই থাকে না যে, হাতের চাপের মাধ্যমে অসাধু বিক্রেতা ডিজিটাল মেশিনটিকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এমনই এক ডিজিটাল চুরি প্রমাণিত হয় সম্প্রতি রাজধানীর মালিবাগে।
ডিজিটাল পাল্লায় চুরিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজধানীর খিলগাঁও বাজারের ক্রেতা সোলায়মান বলেন, ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি সনাতনী পাল্লা দিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা ওজনে কম দেয়। তারা হাতের কারসাজি দেখায়, আবার বাটখারায়ও ভেজাল দেয়। আগের দিনে পাল্লার নিচে ভারী লোহার পাথর লুকিয়ে রেখে কিংবা বাটখারার ওজন কমিয়ে ধোকা দেয়া হতো সহজেই। তাই দোকানদাররা যাতে ওজনে কম দিতে না পারে সেজন্য ডিজিটাল যুগে ডিজিটাল মেশিন এলো। কিন্তু এখন দেখছি ডিজিটাল পাল্লায়ও ভেজাল ঢুকে গেছে। তিনি বলেন, ওজনে কম দেয়া যাদের চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট্য তাদের কাছে ডিজিটাল কী আর এনালগই বা কী।
অসাধু ব্যবসায়ীদের ডিজিটাল কারচুপির অভিনব এক কৌশল ধরা পড়েছে সম্প্রতি ঠাকুরগাঁয়। জেলার একমাত্র সুগন্ধি ধানের বাজার সদরের বড় খোঁচাবাড়িতে ডিজিটাল মেশিনে প্রতি বস্তায় (৮০ কেজি) বিভিন্নভাবে ৪ থেকে ৫ কেজি ধান বেশি নেয়া হয়। এতে বস্তাপ্রতি প্রায় ২০০ টাকা কমের অভিযোগ ওঠে। অন্য বাজারে বস্তাসহ ধান বিক্রি হয় ৮১ থেকে ৮২ কেজি। আর বড় খোঁচাবাড়ি বাজারে বিক্রি হয় ৮৩ থেকে সাড়ে ৮৩ কেজি। আবার ডিজিটাল মেশিনে ২ থেকে ৩ কেজি কম হচ্ছিল সব বস্তাতেই। চাষিরা বাড়িতে ডিজিটাল মেশিনে ৮৩ কেজি মেপে নিয়ে গেলে ওই বাজারের ব্যবসায়ীদের মেশিনে হয় ৭৯ থেকে ৮১ কেজি। ব্যবসায়ীরা গালিগালাজ করলেও ডিজিটাল মেশিনের কারণে কৃষকেরা কেউ প্রতিবাদ করেন না। শহর থেকে কিছুটা দূরে বাজারটি বসে শনি ও মঙ্গলবার সকালে। খুব সকালে প্রশাসন যাবে না সে সুযোগে নির্ভয়ে সাধারণ চাষিদের প্রতারিত করছেন ব্যবসায়ীরা।
ডিজিটাল পাল্লার ডিজিটাল চুরি ঠেকাতে পাল্লার ওপর বিএসটিআইর সিল থাকা বাধ্যতামূলক করার দাবি জানিয়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। যেনতেন কোম্পানির মাধ্যমে নি¤œমানের ডিজিটাল স্কেল আমদানি ও বিপণন বন্ধ করতে কৌশলী হওয়ার পরামর্শ দেন তারা। পাশাপাশি ডিজিটাল মেশিনের মাপ নিয়ে সন্দেহ হলে আশপাশের সনাতনী পাল্লায় তা যাচাই করে নেয়ার পরামর্শ অভিজ্ঞদের।

 


আরো সংবাদ



premium cement