২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সবাইকে ছাড়িয়ে তারকা পেরিসিচ

ইভান পেরিসিচ। ছবি - সংগৃহীত

মস্কোর লুজনিকি স্টেডিয়াম। গত ১১ জুলাই রাশিয়া বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমি ফাইনাল। এই ম্যাচে সবার দৃষ্টি ছিল ইংলিশ অধিনায়ক হ্যারী কেন, ক্রোয়েশিয়ান তারকা দলপতি মডরিচ, রাকিটিচ এবং মানজুকিচের দিকে। আগের দুই খেলায় ট্রাইব্রেকার ঠেকানো ক্রোয়েট কিপার সুবাসিচও ছিলেন এই তালিকায়। মানজুকিচ অবশ্য জয়সূচক গোল করেছেন। তবে সবাইকে টপকে লুজনিকি স্টেডিয়ামের নায়ক হয়ে গেলেন ইভান পেরিসিচ। অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। এই লেফট উইংগারের পা থেকেই সমতা সূচক গোল। এরপর দলের ঐতিহাসিক সেমিফাইনাল জয়ের গোলটিও তার পাস থেকে। সারা ম্যাচে তার দাপটে তটস্থ থেকেছে ইংলিশ ডিফেন্ডাররা। কোনো ভাবেই তাকে আটকাতে পারছিল না।

দলে এই পেরিসিচের মূল পরিচয় মিডফিল্ডার হিসেবে। তবে তাকে ব্যবহার করা হয় দ্বিতীয় স্ট্রাইকার পজিশনেও। অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবেও খেলেন মিনি। খুবই চতুর এবং লড়াকু এই ফুটবলার। পুরো ১২০ মিনিট এক দমে খেলেছেন। যখনই তার পায়ে বল তখনই তার ড্রিবলিং এবং সাথে গতির উপস্থিতি দেখা গেছে। মুহুর্তেই ভেঙ্গে ফেলেছেন বিপক্ষ ডিফেন্স লাইন। সমতা সূচক গোল করার একটু পরেই ৭১ মিনিটে তার আরেকটি শট অল্পের জন্য লক্ষ্যে যায়নি। ইংলিশ ডিফেন্ডার এবং গোলরক্ষককে সেই শট পরাস্ত করলেও শেষ পর্যন্ত বাথা হয়ে দাঁড়ায় সাইড পোস্ট। সে বল জালে গেলে হয়তো টানা তৃতীয় ম্যাচ ১২০ মিনিট খেলতে হতো না এই বলকান অঞ্চলের দলকে।

৬৮ মিনিটে সমতা সূচক গোলের সময় বেশ চালাকির আশ্রয় নিয়েছিলেন ইতালীর ক্লাব ইন্টার মিলানে খেলা এই ফুটবলার। বলটি যখন ডান প্রান্তের সাইড লাইনের কাছে ক্রোয়েট ফুটবলারের কাছে তখন বাম প্রান্তে প্রায় সাইড লাইনের কাছে পেরিসিচ। ইংল্যান্ডের কোনো খেলোয়াড়ই ভাবেননি এই খেলোয়াড়ই যে তাদের অগ্রবর্তী অবস্থানে থাকতে দেবে না। বলটি যখন ক্রস হয়ে ইংল্যান্ডর পোস্টের সামনে শূন্যে ভাসছিল তখনও তিনি নেই দৃশ্য পটে। দুই ডিফেন্ডারের পেছনে নিরীহ একজন হিসেবে দাঁড়িয়ে। কিন্তু এরপরইে গতি বেড়ে যায় তার। মুহুর্তেই ছুটে এসে প্রায় বুক সমান উচ্চতায় বাম পা তুলে বলে পা লাগান তিনি। ব্যাস তাতেই কাজ। বল ইংলিশ কিপার পিকফোর্ডকে বোকা বানিয়ে ক্রোয়েটদের উল্লাসে ভাসায়। ইংলিশ ডিফেন্ডার কেইল ওয়াকার ভেবে ছিলেন তিনি অনায়াসে হেডে বল ক্লিয়ার করতে যাচ্ছেন। অথচ বল তার মাথায় আসার আগেই বলে লাগে পেরিসিচের পায়ের ছোঁয়া।

১০৯ মিনিটে ক্রোয়েশিয়ার জয় সূচক গোলটিতেকও তার অবদান। তার ব্যাক হেডের বল চলে যায় অফসাইড ট্র্যাপ ভেঙ্গে ফেলা মারিও মানজুকিচের কাছে। এরপর বলকান অঞ্চলের দেশটির ইতিহাস গড়া মুহুর্ত। এক গোল দিয়েই এই বিশ্বকাপে ম্যাচ সেরা হয়েছেন কয়েক ফুটবলার। সেখানে গোল করে, গোল করিয়ে এবং সারাক্ষন ভালো খেলা এই ফুটবলারকে ম্যাচ অফ দ্য ম্যাচের পুরস্কার কি না দিয়ে পারে বিচারকরা।

ম্যাচ শেষে এই ফুটবলারে মতে, কেউ ভাবেনি ক্রোয়েশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলবে। আমিও তা ভাবিনি। কিন্তু আমরা তা করে দেখিয়েছি। এখন আমরা স্বপ্ন পূরনের খুব কাছে। এটা আমাদের ফুটবলার এবং সমর্থকদের জন্য বিশাল গর্বের।’ আরো জানান , ‘এই নিয়ে আমরা তিন ম্যাচে প্রথমে পিছিয়ে পড়েও পরে ম্যাচ জিতেছি। এটা টিম স্পিরিটেরই ফসল।’ ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সের কাচে হেরেই সেমিতে বিদায় ক্রোয়েশিয়ার। এবার ফাইনালে পাচ্ছে তাদের। পেরিসিচের মতে, ৯৮তে আমরা হেরেছিলাম। তবে এবার হবে ভিন্ন কাহিনী। আমরা এখন অনেক বেশী উজ্জিবীত।’

১৯৮৯ সালে পৃথিবীতে আসা পেরিসিচ ২০১১ সালে জাতীয় দলের জার্সী গায়ে তোলেন। ২০১২ এবং ২০১৬ এর ইউরোতে খেলেছেন। অংশ নেন ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপেও। সিনিয়র জাতীয় দলের হয়ে ৭২ ম্যাচে ২০ গোল তার।


আরো সংবাদ



premium cement