২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

শিল্পকর্ম বানিয়ে চমকে দিয়েছেন এমিলিয়া

নিজের বানানো শিল্পকর্ম হাতে এমিলিয়া রায় - ছবি: নয়া দিগন্ত

পলিথিন, চুল ও তুলা দিয়ে নানা শিল্পকর্ম বানিয়ে চমকে দিয়েছেন বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের রাহুৎপাড়া গ্রামের এমিলিয়া রায়। নিভৃত পল্লীতে থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ শতাধিক বিখ্যাত মানুষের ভাস্কর্য নির্মাণ করেছেন তিনি। নান্দনিক এ শিল্পকর্ম দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে এসে মানুষ তার বাড়িতে ভীড় জমায়।

ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকা, কবিতা-গান ও কণ্ঠ দেয়ার প্রতি প্রচন্ড ঝোঁক ছিল এমিলিয়ার। এসএসসি পাশ করার পরেই বিয়ে হয় আলফ্রেড রায়ের সাথে। সংসার জীবনে প্রবেশ করে লেখাপড়া থেমে গেলেও থেমে যায়নি তার শিল্পীসত্ত্বা। বিয়ের পরে স্বামীর সংসারেও নতুন করে এমিলিয়া শুরু করেন ছাত্রজীবনে তার সেই সৃজনশীল কর্ম। দাম্পত্য জীবনে দুই ছেলে ও তিন মেয়ের জননী এমিলিয়া রায়। স্বামী মারা যাবার পরে স্বাবলম্বী ছেলে মেয়েদেরও দেখভালের দ্বায়িত্ব কাধে নিয়েছেন ৬৫ বছরের এমিলিয়া রায়।

১৯৯০ সালের কোন একদিন রান্না করা গরম কড়াইয়ের পাশে রাখা পলিথিন ব্যাগ গলতে দেখে ওই পলিথিনের মাধ্যমেই নতুন কিছু করার ইচ্ছে জাগে তার মনে। সেদিন থেকে ফেলে দেয়া পলিথিন ব্যাগ সংগ্রহ করে তা আগুনে পুড়িয়ে শুরু করেন ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ। একে একে নির্মাণ করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মাদার তেঁরেসা, রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রাসেল ও মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়া পাকিস্তানী সেনা ও তাদের দোসরদের মাধ্যমে নির্যাতনের এতিহাসিক ভাস্কর্য। ছোট বড় মিলে শতাধিক ভাস্কর্য রয়েছে তার নিজের সংগ্রহ শালায়।

শুধু পলিথিন দিয়ে ভাস্কর্য নির্মাণ নয়; গুণী শিল্পী এমিলিয়া তুলা দিয়ে আঁকা ছবির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন মুক্তিযুদ্ধের বিভিষীকাময় দৃশ্যগুলো। এছাড়াও মানুষের চুল সংগ্রহ করে তা দিয়ে তৈরি করেছেন বঙ্গবন্ধুর মুখমন্ডল সম্বলিত অপরূপ বাংলাদেশের মানচিত্র। বর্তমানে বার্ধক্যজনিত কারণে হাঁটাচলায় সমস্যা হলেও থেমে নেই এমিলিয়া রায়ে শিল্পকর্ম। নিরলসভাবে নির্মাণ করে চলেছেন ভাস্কর্য।

জীবনে শেষ ইচ্ছা নিজের হাতে তৈরী করা ভাস্কর্যগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেয়ার কথা জানিয়ে শিল্পী এমিলিয়া রায় বলেন, ঘাতকের বুলেটে নির্মম হত্যার শিকার হওয়ার আগে শেখ রাসেলের বাঁচার আকুতিভরা নিপুণ ভাস্কর্যটি নিজের কাছেই রাখবো। কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তার তিন বছরের ছেলে তিনু রায় অসুস্থ হয়ে ডাক্তারের অভাবে বিনা চিকিৎসায় চোখের সামনে ধুকে-ধুকে মারা যায়। শেখ রাসেলের আকুতিভরা ভাস্কর্যর মধ্যে তিনি খুঁজে পেতে চান নিজের হারানো ছেলে তিনুকে।


আরো সংবাদ



premium cement