১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সাহায্যকে জেলেন্সকির স্বাগত, মস্কোর হুঁশিয়ারি

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সাহায্যকে জেলেন্সকির স্বাগত, মস্কোর হুঁশিয়ারি - সংগৃহীত

ইউক্রেন এবং পশ্চিমা দেশের নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সংসদের নিম্নকক্ষ হাউস অফ রেপ্রেসেন্টাটিভ-এ সামরিক সাহায্য প্যাকেজের অনুমোদনকে রোববার স্বাগত জানিয়েছে। অন্যদিকে, রাশিয়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, সাহায্য বিলের অনুমোদন ইউক্রেনকে ‘আরো ক্ষতিগ্রস্ত’ করবে এবং আরো মৃত্যু ডেকে আনবে।

ইউক্রেনীয় নেতা এবং বিশ্লেষকরা বলছেন, বহুল-প্রতীক্ষিত ৬১ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সাহায্য প্যাকেজ যুদ্ধের তৃতীয় বছরে রাশিয়ার ধাপে ধাপে অগ্রসর হওয়ার গতি কমিয়ে দিতে সহায়তা করবে। তবে কিয়েভকে পাল্টা আক্রমণ চালানোর অবস্থানে যেতে আরো সাহায্যর প্রয়োজন হবে।

কয়েক মাস কড়া বাধার পর ডেমক্র্যাট আর রিপাবলিকানরা এক জোট হয়ে শনিবার হাউসে ইউক্রেন, ইসরাইল এবং তাইওয়ান এর জন্য ৯৫ বিলিয়ন ডলারের একটি প্যাকেজ অনুমোদন করে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকি, যিনি আগে বলেছিলেন যে- তার দেশ আমেরিকান সহায়তা না পেলে যুদ্ধে পরাজিত হবে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতাদের সিদ্ধান্তের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

‘ইউক্রেন দ্বিতীয় আফগানিস্তান হবে না’
টেলিভিশন চ্যানেল এনবিসির ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে জেলেন্সকি বলেন, এই সাহায্য প্যাকেজ ‘ক্রেমলিনকে একটি শক্তিশালী বার্তা দেবে যে- ইউক্রেন দ্বিতীয় আফগানিস্তান হবে না।’

জেলেন্সকি এনবিসিকে বলেন, এই সাহায্য দিয়ে ‘কার্যকর অস্ত্র সংগ্রহ করতে হবে।’ তিনি দূরপাল্লার অস্ত্র এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উপর জোর দেন।

তিনি বলেন, এগুলো দিয়ে ইউক্রেন ‘রাশিয়ার পুরদমে আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা ভেঙ্গে’ দিতে পারবে। রাশিয়ার আক্রমণের জন্য ইউক্রেনীয় বাহিনী প্রস্তুতি নিচ্ছে।

সাহায্য প্যাকেজের বিল সেনেটে যাবে যেখানে মঙ্গলবারের মধ্যেই অনুমোদন পাবার সম্ভাবনা আছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, তিনি বিলটি পাওয়া মাত্র সাক্ষর করবেন।

তারপরও, সাহায্য যেখানে প্রয়োজন, সেই রণাঙ্গনে পৌঁছাতে কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে।

এ’ধরনের সাহায্য প্যাকেজ ইউক্রেনের আর কত দিন ধরে প্রয়োজন হতে পারে, এমন একটি প্রশ্নের জবাবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট অতীতে প্রতিশ্রুত সাহায্য আসায় বিলম্বের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ‘সব নির্ভর করবে আমরা কখন অস্ত্রগুলো হাতে পাবো,’ জেলেন্সকি এনবিসিকে বলেন।

‘ইউক্রেনেকে এফ-১৬ জঙ্গি বিমান দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল এক বছর আগে,’ তিনি বলেন। ‘এক বছর পার হয়ে গেছে। এই জেটগুলো এখনো আমরা ইউক্রেনে পাইনি।’

সাহায্যের অভাবে গোলাবারুদের ঘাটতি
ইউক্রেন বাহিনীতে গোলাবারুদের ঘাটতির জন্য সাহায্যর অভাবকে দায়ী করা হয়েছে। গত ছয় মাসে ইউক্রেনীয় কমান্ডাররা গোলাবারুদের ব্যবহার কমিয়ে দেয়- রুশ বাহিনী এই সুবিধা ব্যবহার করে আভডিভকা শহর দখল করে এবং চাসিভ ইয়ার শহরের দিকে ধীরে আগাচ্ছে।

‘এগুলো দিয়ে আমরা (রুশ বাহিনীকে) থামাতে পারবো এবং আমাদের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে পারবো,’ বলছেন পদাতিক সৈন্য অলেক্সানডর। তিনি আভডিভকায় যুদ্ধ করেছেন।

‘রাশিয়ানরা আমাদের দিকে একের পর এক দলে দলে এগিয়ে আসে- আমরা ক্লান্ত হয়ে যাই, গোলাবারুদ ফুরিয়ে যায়, আমাদের অবস্থান থেকে সরে আসতে বাধ্য হই। বার বার এই চিত্রের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে,’ অলেক্সানডর এপিকে বলেন।

‘গোলাবারুদের ঘাটতির মানে হচ্ছে, তারা যখন আক্রমণ করে তখন আমাদের দায়িত্বে থাকা এলাকা আমরা ধরে রাখতে পারি না।’

অন্যান্য পশ্চিমা নেতারা, যারা আমেরিকান সাহায্যর ঘাটতি পুড়নের চেষ্টা করছিলেন, এই সাহায্য প্যাকেজকে স্বাগত জানিয়েছেন।

‘ইউক্রেন ন্যাটো মিত্রদের দেয়া অস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করছে। এর ফলে ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায় আমরা সবাই আরো নিরাপদ থাকব,’ সামরিক জোট ন্যাটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টল্টেনবার্গ সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ এ কথা লেখেন।

ইউরোপিয়ান কমিশন প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডের লেয়েন বলেন যে- ‘রাশিয়ার বিরুদ্ধে যত সমর্থন ইউক্রেন পাবে, সবই তার প্রাপ্য।’

তার বিবৃতিতে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ-এর কথার প্রতিধ্বনি ছিল, যিনি সাহায্য প্যাকেজকে ‘এই সময়ে একটি শক্তিশালি বার্তা’ হিসেবে বর্ণনা করেন।

রাশিয়া কী বলছে?
ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ শনিবার সাহায্যের অনুমোদনকে ‘প্রত্যাশিত এবং অনুমানযোগ্য’ বলে বর্ণনা করেন।

এই সিদ্ধান্ত ‘যুক্তরাষ্ট্রকে আরো ধনী করবে, ইউক্রেনকে আরো ধ্বংস করবে এবং এর ফলে আরো অনেক বেশি ইউক্রেনীয় মারা যাবে। এসব কিয়েভের দোষ,’ পেসকভকে উদ্ধৃত করে রাশিয়ান বার্তা সংস্থা রিয়া নভস্তি বলে।

‘এই নতুন সাহায্য প্যাকেজ কাওকে বাঁচাবে না। বরং, এর ফলে হাজার হাজার মানুষ মারা যাবে, সংঘাত দীর্ঘায়িত হবে এবং আরো দুঃখ আর ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে আসবে,’ রাশিয়ার সংসদ ডুমার কমিটি অন ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ারস এর প্রধান লিওনিদ স্লুটস্কি সামাজিক মাধ্যম টেলিগ্রামে লেখেন।

‘বেশি দেরি, যথেষ্ট না’
ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা কেন্দ্র দ্য ইন্সটিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ ওয়ার বলেছে, আমেরিকান সাহায্য রণাঙ্গনে পৌঁছে দেয়ার জটিলতার মানে হলো যে- ‘যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সাহায্য, যা দিয়ে ইউক্রেন ফ্রন্টলাইন স্থিতিশীল করতে পারবে, সেটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে এবং ইউক্রেনীয় বাহিনী আগামী সপ্তাহগুলোতে আরো কিছু পরাজয়ের মুখে পড়বে।’

‘তবে যদি যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য দ্রুত চলে আসে, তাহলে তারা সম্ভবত রাশিয়ার আক্রমণকে প্রতিহত করতে পারবে,’ ইন্সটিটিউট তাদের সর্বশেষ পর্যালোচনায় বলে।

ব্রিটিশ গবেষণা কেন্দ্র রয়াল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইন্সটিটিউট (রুসি)-এর মিলিটারি সায়েন্স ডিরেক্টর ম্যাথিউ সাভিল বলেন, এই সাহায্য যদিও প্রয়োজনীয়, ‘সেটা সম্ভবত শুধু এই বছর ইউক্রেনীয় অবস্থান স্থিতিশীল করতে সহায়তা করবে এবং ২০২৫ সালের কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুতি শুরু করা যাবে।’

‘এই বছর কী সাহায্য পাওয়া যাবে তা জানা থাকলে ইউক্রেন এই বছরের প্রতিরক্ষা নিয়ে পরিকল্পনা করতে পারবে, বিশেষ করে যদি ইউরোপিয়ানদের গোলাবারুদ সরবরাহ শুরু হয়। কিন্তু ২০২৫ সালের জন্য আরো পরিকল্পনা এবং অর্থায়ন প্রয়োজন হবে এবং এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন রয়েছে,’ তিনি বলেন।

ইউক্রেনের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ কিয়েভ-মহলিয়া একাডেমীর অধ্যাপক অলেক্সি হারান বলেন, ইউক্রেনীয়রা যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশের সাহায্যের জন্য কৃতজ্ঞ কিন্তু ‘সমস্যা হচ্ছে, সত্যি কথা বলতে, অনেক দেরি হয়ে গেছে এবং এটা যথেষ্ট না।’

‘যুদ্ধের এটা তৃতীয় বছর এবং আমাদের এখনো কোনো নতুন বিমান বাহিনী নেই। আমাদের আকাশ প্রতিরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র নেই। সম্প্রতি আমাদের আর্টিলারি শেলেরও ঘাটতি ছিল,’ তিনি বলেন।

‘সেজন্য পরিস্থিতি এত বেশি কঠিন এবং রাশিয়ানরা এটা ব্যবহার করে তাদের আক্রমণ শুরু করেছে,’ হারান বলেন।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় রোববার জানায়, তাদের সৈন্যরা দনেতস্ক অঞ্চলে আরো একটি লোকালয়, বহডানিভকা দখল করেছে। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করেনি।
সূত্র : ভয়েস অফ আমেরিকা


আরো সংবাদ



premium cement