১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

মস্কোতে হামলা : ইউক্রেনের দিকেও আঙুল তুললেন পুতিন

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন - ছবি : বিবিসি

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, মস্কোর ক্রোকাস সিটি হলে হামলাকারী‘সন্ত্রাসীদের’ জন্য ইউক্রেনে কারা অপেক্ষা করছিল, সেই প্রশ্নটি অনিবার্যভাবে সামনে চলে আসছে এবং এর উত্তর জানা জরুরি।

হামলা শেষে‘সন্ত্রাসীরা’ কেন ইউক্রেনেই যাওয়ার চেষ্টা করল, সেটি নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তিনি।

মস্কো হামলার বিষয়ে অনুষ্ঠিত রুশ সরকারের একটি বৈঠকে পুতিন এসব কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস।

পুতিন বলেন, এটা স্পষ্ট যে, যারা কিয়েভের শাসকদের সমর্থন করছে, তারা সন্ত্রাসের সহযোগী হতে চায় না এবং সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষকও হতে চায় না। কিন্তু তারপরও অনেক প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।’

অবশ্য রুশ প্রেসিডেন্টের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে কিয়েভ।

তারা বলছে, হামলা ঠেকানোর ব্যর্থতাকে আড়াল করতেই পুতিন ইউক্রেনের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছেন।

এদিকে, হামলার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩৯ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন রাশিয়ার অপরাধ তদন্ত কমিটির প্রধান আলেকজান্ডার ব্যাস্ট্রিকিন। এর আগে মৃতের সংখ্যা ছিল ১৩৩।

হামলায় আহত শতাধিক মানুষ বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে, যাদের কয়েক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলেও জানানো হয়েছে।

এছাড়া ক্রোকাস সিটি হলে আগুন ধরানোর জন্য হামলাকারীরা পেট্রোল ব্যবহার করেছিল বলেও জানিয়েছেন ব্যাস্ট্রিকিন।

তিনি বলেন,‘তারা প্লাস্টিকের বোতলে পেট্রোল নিয়ে এসেছিল। তারপর সেটি ব্যবহার করেই তারা হলটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।’

অভিযুক্ত বন্দুকধারীদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে, হামলার প্রস্তুতির সাথে সম্পর্কিত বেশ কিছু জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন রাশিয়ার অপরাধ তদন্ত কমিটির প্রধান।

হামলাকারীরা একটি ভাড়াবাড়িতে থাকত, যে বাড়ির মালিককেও গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাস্ট্রিকিন।

সব মিলিয়ে হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত ১১ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

‘উগ্রপন্থীদের' কথা স্বীকার

মস্কোতে হামলার ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছেন যে, ‘উগ্র পন্থীরাই’ হামলাটি চালিয়েছে।

তা সত্ত্বেও এই হামলার সাথে কোনো না কোনোভাবে ইউক্রেনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে এখনও মনে করছেন তিনি।

কিন্তু যে প্রশ্নটি এখন উঠছে, সেটি হল : এই হামলার ফলে কারা লাভবান হয়েছে?

পুতিন বলেন,‘রাশিয়া ও তার জনগণের বিরুদ্ধে কারা অপরাধ সংঘটিত করেছে, তা আমরা জানি। কিন্তু এটি করার জন্য কারা তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিল, সেটিই আমাদের আগ্রহের বিষয়।’

গত শুক্রবারের ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠী। হামলাকারীদের ছবিও প্রকাশ করেছে তারা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও জানিয়েছে যে, ওই হামলার সাথে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীই জড়িত এবং এটি নিয়ে সন্দেহ করার কোনো কারণ নেই।

কিন্তু রুশ কর্মকর্তারা বলার চেষ্টা করছেন যে নৃশংস এই হামলার পেছনে কোনো না কোনোভাবে ইউক্রেনের হাত রয়েছে।

এর আগে গত শনিবার টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দাবি করেন যে, মস্কো হামলায় জড়িত চার ‘বন্দুকধারীকে’ গ্রেফতার করা হয়েছে, যারা ইউক্রেনে পালানোর চেষ্টা করছিলেন।

তিনি এটাও দাবি করেছিলেন যে,‘সীমান্ত অতিক্রম করানোর উদ্দেশ্যে ইউক্রেন অংশে তাদের (হামলাকারীদের) জন্য একটি জায়গা প্রস্তুত রাখা হয়েছিল।’

কিয়েভ অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শনিবার বলেছেন, হামলা ঠেকানোর ব্যর্থতাকে আড়াল করতেই ইউক্রেনের ওপর দায় চাপাচ্ছেন পুতিন।

তিনি বলেন, এটা সুস্পষ্ট যে, পুতিন অন্য কারো ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছেন। এটি তার পুরনো কৌশল।’

জেলেনস্কি আরো বলেন,‘এর আগেও আমরা রাশিয়ায় এরকম ভবনধ্বস, গুলি ও বিস্ফোরণের ঘটনা দেখেছি এবং প্রতি বারই সে অন্যের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করেছে।’

হামলাকারীরা কারা?

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, মস্কোয় হামলাকারী সন্দেহে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তারা সবাই মধ্য এশিয়ার দেশ তাজিকিস্তানের নাগরিক। এই দেশটি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নেরই অংশ ছিল।

গত রোববার সন্দেহভাজন হামলাকারীদের আদালতে নেয়া হয়।

মস্কো আদালতের আনুষ্ঠানিক টেলিগ্রাম চ্যানেলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে।

তারা হলেন দালেরদজন মিরজোয়েভ, সাইদাক্রামি মুরোদালি রাচাবালিজোদা, শামসিদিন ফারিদুনি এবং মুহাম্মাদসোবির ফায়জভ।

মিরজোয়েভ তার সব দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

কিন্তু আদালতে নেয়ার সময় অভিযুক্তদের সবার চেহারায় নির্যাতনের চিহ্ন দেখা গেছে।

ফলে তারা যদি দোষ স্বীকারও করে থাকে, আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী সেটি খুব একটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।

কারণ নির্যাতনের ভয়ে অনেক সময় মানুষ অন্যায় না করেও দোষ স্বীকার করতে পারে।

রুশ কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে মার্চের শুরুতে অভিযুক্তদের একজনকে মস্কোর ক্রোকাস সিটি হলে নজরদারি করতে দেখা গেছে।

তখন মস্কোতে বড় কোনো জনসমাগমস্থলে হামলা হতে পারে বলে রাশিয়াকে সতর্ক করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।

যদিও যুক্তরাষ্ট্রের এই সতর্ক বার্তাকে তখন ‘মিথ্যা প্রচারণা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিল ক্রেমলিন।

রুশ কর্মকর্তারা এখন বলছেন যে, হামলাকারীদের মধ্যে অন্তত দু’জন মস্কোতে হামলা চালানোর উদ্দেশ্যে কিছুদিন আগে রাশিয়ায় আসে।

রাশিয়ায় হামলা কেন?
এই হামলার পরই প্রশ্ন উঠেছে আইএস কেন রাশিয়াকে তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করল। এ নিয়ে নানা রকম মন্তব্য পাওয়া যাচ্ছে বিশ্লেষকদের কাছ থেকে।

তারা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে এই গোষ্ঠীটি তাদের কর্মকাণ্ড নাটকীয়ভাবে বাড়িয়েছে। যার একটি হল মস্কোর এ হামলা।

বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গোষ্ঠীটি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরোধিতা করে আসছিল।

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সোফান সেন্টারের কলিন ক্লার্ক বলেন,‘দুই বছর ধরেই রাশিয়াকে টার্গেট করেছিল আইএসকে। এই সংগঠনটি তাদের প্রচার প্রচারণায় বিভিন্ন সময় টার্গেট করে রাশিয়ার সমালোচনা করতে শুরু করেছিল।’

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, মুসলিম বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকাসহ বিভিন্ন কারণে আইএসকের টার্গেটে পরিণত হয়েছে রাশিয়া।

ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের গবেষক মাইকেল কুগেলম্যান রয়টার্সকে জানিয়েছে,‘রাশিয়াকে নিয়মিতভাবে মুসলিমবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকা দেশ হিসেবে দেখে থাকে আইএস’।

যে কারণে রাশিয়া এই হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে বলে মনে করছেন কুগেলম্যান।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement