২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাজধানী কিয়েভে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা

পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে আধুনিক অস্ত্র ইউক্রেনে এসে পৌঁছানো এবং সেগুলো ব্যবহারের বিষয়ে সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দিতে গিয়ে তাদের পাল্টা হামলা শুরু করতে দেরি হচ্ছে - ছবি : বিবিসি

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের ওপর শনিবার রাতে আবারো বড় ধরনের ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এতে কমপক্ষে একজন নিহত হয়েছে বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিচকো বলেছেন, রাশিয়ার ছোঁড়া ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ একটি পেট্রোল স্টেশনের কাছে পড়লে এক ব্যক্তি নিহত হয়। এ সময় আরো একজন নারী আহত হয়েছেন।

ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনী বলছে, সব মিলিয়ে রাশিয়া ৫৪টি কামিকাজে ড্রোন দিয়ে ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়েছে এবং ৫২টি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলছেন শুধুমাত্র রাজধানী কিয়েভেই ৪০টি রুশ ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে।

এই তথ্য নিরপেক্ষ সূত্র থেকে যাচাই করে দেখা সম্ভব হয়নি।

প্রায় ১৫ মাস আগে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করার পর সাম্প্রতিককালে রাশিয়া কিয়েভকে লক্ষ্য করে হামলা জোরদার করেছে। এ মাসেই ১০ বারের মতো হামলা চালিয়েছে।

বলা হচ্ছে, সর্বশেষ এই ড্রোন আক্রমণ ছিল ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর কিয়েভের ওপর সবচেয়ে বড় হামলা।

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়া এখন ইউক্রেনের রাজধানীর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দেয়ার চেষ্টা করছে।

আজ রোববার সকালেও ইউক্রেনের উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় ১২টি এলাকায় বিমান হামলার সতর্ক সঙ্কেত বেজে ওঠে।

সোশাল মিডিয়াতে দেয়া এক পোস্টে রাজধানী কিয়েভের মেয়র ক্লিচকো তার শহরের বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

কিয়েভের ওপর আরো সম্ভাব্য হামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামনে আরো কঠিন রাত অপেক্ষা করছে।

তিনি বলেন, ওপর থেকে ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ রাজধানীর অন্তত দু’টি বহুতল ভবনের ওপর পড়লে সেগুলোতে আগুন ধরে যায়।

কিয়েভের কর্মকর্তারা রাজধানীর দক্ষিণাঞ্চলে কয়েকটি গুদাম-ঘরেও আগুন লাগার কথা জানিয়েছেন।

কয়েকজন ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা অভিযোগ করছেন, কিয়েভের বাসিন্দারা যখন এই শহরের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, ঠিক তখনই রাশিয়া পরিকল্পিত এই আক্রমণ চালিয়েছে।

দেড় হাজার বছর আগে কিয়েভ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং প্রতি বছর এই দিনটি ‘কিয়েভ ডে’ বা ‘কিয়েভ দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। যুদ্ধ শুরুর আগে এই দিনটি ছিল ইউক্রেনীয়দের কাছে জনপ্রিয় ছুটির দিন।

কিয়েভের পশ্চিমে ঝিটোমির শহরেও বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।

খারকিভ অঞ্চলের গভর্নর বলেছেন, রাশিয়ার গোলাবর্ষণে সেখানে দু’জন প্রাণ হারিয়েছেন।

ইউক্রেনের আঞ্চলিক অফিসগুলো থেকে বলা হচ্ছে, খারকিভ ও ঝাপোরিশায় চালানো রুশ হামলায় অন্তত সাতজন আহত হয়েছে।

সাম্প্রতিককালে ইউক্রেনের ওপর রাশিয়া যেসব হামলা চালিয়েছে, সেগুলোতে ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক মিসাইল ছাড়াও কামিকাজে ড্রোনও ব্যবহার করা হয়েছে।

ইউক্রেন যখন রাশিয়ার ওপর পাল্টা আক্রমণ চালানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, ওই সময় কিয়েভ লক্ষ্য করে সর্বশেষ এই আক্রমণ চালানো হলো।

শনিবার ইউক্রেনের শীর্ষস্থানীয় একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেছেন যে রুশ বাহিনীর ওপর পাল্টা আক্রমণ শুরু করতে তারা প্রস্তুত।

ইউক্রেনের শক্তিশালী জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা পরিষদের সেক্রেটারি ওলেক্সেই দানিলভ বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দখলদার বাহিনী যেসব ইউক্রেনীয় এলাকা দখল করে নিয়েছে, সেগুলো পুনর্দখলের লক্ষে আগামীকাল, পরশু অথবা এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের পাল্টা অভিযান শুরু হয়ে যেতে পারে।

ইউক্রেন কয়েক মাস ধরেই রাশিয়ার ওপর পাল্টা আক্রমণের পরিকল্পনা করছে।

কিন্তু পশ্চিমা মিত্রদের থেকে আধুনিক অস্ত্র এসে পৌঁছানো এবং সেগুলো ব্যবহারের বিষয়ে সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দিতে গিয়ে তাদের পাল্টা হামলা শুরু করতে দেরি হচ্ছে।

এই পরিকল্পনাকে ইউক্রেনের জন্য বড় পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইউক্রেনের সম্ভাব্য এই অভিযান থেকেই প্রমাণ হবে, আমেরিকা ও নেটো জোট থেকে পাওয়া অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামাদি দিয়ে তারা যুদ্ধের মোড় কতটা ঘুরিয়ে দিতে পারে।

একইসাথে ইউক্রেনের এই পাল্টা আক্রমণ মোকাবেলায় রাশিয়াও ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে তাদের দখল করে নেয়া এলাকাগুলোতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে।

যুক্তরাজ্যে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আন্দ্রেই কেলিন বলেছেন, তাদের দেশের প্রচুর সম্পদ রয়েছে। এখনো তারা গুরুতর হামলা শুরু করেনি।

তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ করার কারণে এই যুদ্ধ এমন মাত্রায় ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি।

তিনি বলেন, ‘দ্রুত হোক, কিংবা পরেই হোক, এই যুদ্ধ নতুন এক মাত্রা অর্জন করবে, যার কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা সেটা চাই না।’ সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement