১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাশিয়ার বিরুদ্ধে ফসফরাস বোমা হামলার অভিযোগ

বাখমুতের আকাশ সাদা মেঘে ঢেকে যায় - ছবি - বিবিসি

অবরুদ্ধ শহর বাখমুতে রাশিয়া ফসফরাস বোমা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে ইউক্রেন। দেশটির সেনাবাহিনীর প্রকাশ করা ড্রোন ফুটেজে দেখা গেছে যে পুরো বাখমুত জ্বলছে।

দেখে ধারণা করা হচ্ছে, যে শহরজুড়ে সাদা ফসফরাসের বৃষ্টি হয়েছে।

সাদা ফসফসরাস সমৃদ্ধ অস্ত্র নিষিদ্ধ নয়, তবে বেসামরিক এলাকায় এর ব্যবহার যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।

এ অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করলে একটি এলাকায় দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে যা নেভানো খুবই কঠিন। এর আগেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে এ ধরণের অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।

বাখমুত শহর কৌশলগতভাবে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও গত কয়েক মাস ধরেই রুশ বাহিনী শহরটি দখলের চেষ্টা করছে।

পশ্চিমা কর্মকর্তাদের ধারণা, বাখমুতে কয়েকমাস ধরে চলতে থাকা অভিযানে ইতোমধ্যেই কয়েক হাজার রুশ সৈন্য মারা গেছে।

ফসফরাস হামলা নিয়ে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের করা এক টুইটে উল্লেখ করা হয় যে ‘অগ্নিসংযোগকারী গোলা দিয়ে বাখমুতের অদখলকৃত এলাকাগুলোয়’ হামলা করা হয়েছে।

ঠিক কোন সময় এই হামলা চালানো হয়েছে, তা এখনো পরিস্কার নয়।

ইউক্রেন যে ভিডিও ফুটেজটি প্রকাশ করেছে, যেটিকে একটি নজরদারি করার ড্রোনের ফুটেজ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে- সেটিতে উঁচু ভবনগুলোতে দাউদাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যায়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট হওয়া অন্যান্য ফুটেজে দেখা যায়, বড় এলাকাজুড়ে আগুন জ্বলছে আর রাতের আকাশ সাদা মেঘে ঢেকে আছে।

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশ করা ড্রোন ফুটেজটি বিশ্লেষণ করেছে বিবিসির একটি দল।

তারা নিশ্চিত হয়েছে যে হামলার জায়গাটি হলো বাখমুত শহরের কেন্দ্রের পশ্চিমে, একটি শিশু হাসপাতালের কাছে।

এই হামলায় কোনো ধরণের অগ্নিসংযোগকারী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছে ওই বিশ্লেষণে। কিন্তু হামলায় ফসফরাসের ব্যবহার হয়েছে কিনা, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেননি বিশ্লেষকরা।

ফসফরাস বোমা নিয়ে যে কারণে বিতর্ক
ইউক্রেনে এর আগেও সাদা ফসফরাস ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে।

যুদ্ধের শুরুর দিকে মারিউপোল দখলের যুদ্ধসহ আরো কয়েকবার তারা এই অস্ত্র ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

মস্কো কখনোই যুদ্ধে ফসফরাস বোমা ব্যবহার করার অভিযোগ স্বীকার করেনি।

গত বছর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ফসফরাস বোমা ব্যবহারের অভিযোগ তুললে ক্রেমলিনের প্রেস সচিব দিমিত্রি পেসকভ মন্তব্য করেন যে যুদ্ধে ‘রাশিয়া কখনোই আন্তর্জাতিক রীতি’ ভঙ্গ করেনি।

সাদা ফসফরাস মোমের মত একটি পদার্থ যা আট শ’ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পুড়ে এবং অক্সিজেনের সংস্পর্শে এলে জ্বলে ওঠে।

এটি উজ্জল সাদা ধোঁয়ার কুণ্ডলি তৈরি করে।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে যে এই রাসায়নিক যে ধরণের জখম তৈরি করে, তার ‘ভয়াবহতার জন্য কুখ্যাত।’

এটি অত্যন্ত আঠালো ও এটি কোথাও লাগলে সেখান থেকে মুছে ফেলা খুবই কঠিন। ব্যান্ডেজ খুলে ফেলার পরও জখমে আবার আগুন জ্বলে ওঠার আশঙ্কা থাকে।

বেসামরিক এলাকায় আগুন লেগে যেতে পারে – এমন অগ্নিসংযোগকারী অস্ত্রের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে তৈরি করা ‘কনভেনশন অন সার্টেইন কনভেনশনাল ওয়েপন’ চুক্তিতে স্বাক্ষর রয়েছে রাশিয়ার।

কিন্তু মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, সাদা ফসফরাসের ব্যবহার এই চুক্তির অধীনে পড়ে না।

কারণ এর প্রাথমিক ব্যবহার হয় ‘সেনা অভিযান গোপন রাখার জন্য ধোঁয়ার কুণ্ডলি তৈরি করতে।’

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বক্তব্য অনুযায়ী, ইরাক ও সিরিয়ায় আইএস যোদ্ধাদের ওপর আমেরিকান সেনাবাহিনী এই ধরণের অস্ত্র ব্যবহার করেছে।

সংস্থাটি বলছে, গত ’১৫ বছরে এই অস্ত্র বারবার ব্যবহার হয়েছে।’

বাখমুত রণাঙ্গন সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে
যুদ্ধের আগে বাখমুতের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৮০ হাজার। এখন ওই অঞ্চলে বেসামরিক নাগরিক নেই বললেই চলে।

এই হামলার এক দিন আগেই রাশিয়ার প্যারামিলিটারি গ্রুপ ওয়াগনারের কমান্ডার ঘোষণা দিয়েছিলেন যে অস্ত্র সরবরাহ নিয়ে জটিলতা থাকায় ১০ মে তারা বাখমুত থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে।

কমান্ডার ইয়েভগেনি প্রিগোঝিন মন্তব্য করেন যে যুদ্ধক্ষেত্রে নিহতের সংখ্যা ‘জ্যামিতিক হারে বাড়ছে।’ তার এই সিদ্ধান্তের জন্য রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দায়ী করেন তিনি।

শনিবার কমান্ডার প্রিগোঝিন বলেন যে রাশিয়ার আধা স্বায়ত্ত্বশাসিত অঞ্চল চেচনিয়ার নেতা রমজান কাদিরভ বাখমুট শহরে ওয়াগনারের জায়গা নিতে রাজি হয়েছেন।

তিনি ওয়াগনার সেনাদের পরিবর্তে তার নিজের সেনা সেখানে পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন প্রিগোঝিন। তবে তার এমন দাবি স্বত্ত্বেও ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, বাখমুতে ওয়াগনার আরো সৈন্য মোতায়েন করছে।

রাশিয়ায় আগামী মঙ্গলবার হতে যাওয়া বিজয় দিবস উদযাপনের আগে তারা বাখমুত দখল করতে চায় বলে দাবি করেছে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা।

ইউক্রেনের ডেপুটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হানা মালিয়ার মন্তব্য করেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি যে তারা রণাঙ্গনে থাকা পুরো ওয়াগনার বাহিনীকেই বাখমুতের দিকে নিয়ে আসছে।’

এমন সময় এই হামলার ঘটনা ঘটলো যখন ইউক্রেন বড় ধরণের হামলা করার পরিকল্পনা করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ওয়াগনার প্রধান প্রিগোঝিনি নিজেই মন্তব্য করেছেন যে তার ধারণা অনুযায়ী ১৫ মে’র মধ্যে ওই আক্রমণ পরিচালিত হবে।

রাশিয়ার প্রায় নিয়ন্ত্রণে থাকা জাপোরিশা অঞ্চলেও আক্রমণ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শুক্রবার রাশিয়ার নিয়োগ করা জাপোরিশার গভর্নর ওই এলাকার রণাঙ্গণের কাছে থাকা গ্রামগুলো থেকে মানুষ সরিয়ে নেয়ার আদেশ দিয়েছেন।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে বিএনপি : কাদের রৌমারীতে বড়াইবাড়ী সীমান্তযুদ্ধ দিবস পালিত

সকল