১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইউক্রেনজুড়ে আবারো রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

ইউক্রেনজুড়ে আবারো রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা - ছবি : সংগৃহীত

ইউক্রেনজুড়ে আবারো রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে এটি ছিল দ্বিতীয় হামলা। ইউক্রেনের ওপর সর্বশেষ রুশ এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রধান টার্গেট ছিল মধ্যাঞ্চলীয় শহর দেনিপ্রোর কাছের ছোট একটি শহর পাভলোরার্ড।

ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে পাভলোরার্ডের কিছু গুদামের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গুদামে কী ছিল তা পরিষ্কার নয়।

ভোররাতের দিকে গুদামটিতে ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়ার পর বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড শুরু হয়। আশাপাশের কয়েক ডজন বাড়ি ধ্বংস হয়। আহত হয় ৩৪ জন।

ওই হামলার কয়েক ঘণ্টা পরই রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেন জুড়ে এয়ার রেইড সাইরেন বেজে ওঠে।

ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বলেছে, তারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় রাশিয়ার ছোড়া ১৮টি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের ১৫টি আকাশে থাকতেই গুলি করে ধ্বংস করে দিয়েছে।

তবে রণাঙ্গন থেকে ৭০ মাইল দূরে পাভরোহার্ড শহরের দিকে টার্গেট করে ছোঁড়া রুশ ক্ষেপণাস্ত্র আকাশে ধ্বংস করা সম্ভব হয়নি বলে মনে হচ্ছে।

সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ছবিতে দেখা গেছে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করার পর বিশাল এলাকাজুড়ে আগুন জ্বলছে।

ইউক্রেনের স্থানীয় সামরিক প্রশাসন এই হামলাকে “ট্র্যাজিক একটি রাত এবং সকাল” বলে বর্ণনা করে জানিয়েছে শহরের এক শিল্পাঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করেছে।

তাদের দেয়া হিসাবে শহরের মোট ১৯টি বহুতল আ্যাপার্টমেন্ট ভবন, ২৫টি বাড়ি, ছটি স্কুল এবং কিন্ডারগার্টেন এবং পাঁচটি দোকান বিধ্বস্ত হয়েছে।

রুশ অধিকৃত একটি এলাকার মস্কোর নিয়োগ করা একজন কর্মকর্তা, ভ্লাদিমির রোগভ, টেলিগ্রাম চ্যানেলে লিখেছেন সর্বশেষ রুশ হামলায় রেল অবকাঠামো এবং জ্বালানি তেলের ডিপো টার্গেট করা হয়েছে।

উল্লেখ্য যে শনিবার ক্রাইমিয়ার সেভাস্তোপোল বন্দরে রুশ নৌবাহিনীর জন্য জ্বালানি সংরক্ষণের ডিপোতে ড্রোন হামলার পর দিনই ইউক্রেনের রেল অবকাঠামো এবং জ্বালানি তেলের ডিপো টার্গেট করে এই হামলা চালানো হলো।

ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে ইউক্রেনের সংবাদ সংস্থা আরবিসি জানিয়েছে, রোববারের ড্রোন হামলায় ১০টি স্টোরেজ ট্যাংকে রুশ নৌবাহিনীর ব্ল্যাক সি ফ্লিটের জন্য মজুদ করে রাখা সব তেল পুড়ে গেছে।

রাশিয়া এই হামলার জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করেছে। তবে ইউক্রেন ওই ড্রোন হামলার কথা স্বীকার করেনি।

সোমবার ভোরে পাভলোরার্ডে ওই হামলার কয়েক ঘণ্টা পরে রাজধানী কিয়েভেও এয়ার রেড অ্যালার্ট জারী করা হয়। স্থানীয় সময় ভোর চারটা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে থেকে থেকেই সাইরেনের শব্দ শোনা যায়।

কিয়েভের সামরিক প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয় রাজধানীকে টার্গেট করে ছোড়া সবগুলো ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন আকাশেই ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।

খেরসন অঞ্চলের ইউক্রেন নিয়ন্ত্রিত এলাকায় রাতভর ৩৯টি রুশ গোলা আঘাত করেছে বলে সেখানকার স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে। এসব গোলা ভূমিতে মোতায়েন দূরপাল্লার কামান ছাড়াও ড্রোন এবং বিমান থেকে ছোড়া হয়।

প্রশাসনের জানিয়েছে একজন নিহত হয়েছে।

গত কয়েক দিনে রাশিয়া ইউক্রেনের ভেতর হামলা বাড়িয়ে দিয়েছে। শুক্রবার কেন্দ্রাঞ্চলীয় শহর উমানে রুশ নিহত হয়েছে প্রায় ২৫ জন।

শুক্রবারের হামলার পর রাশিয়া বলেছিল ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর একটি রিজার্ভ ইউনিটকে টার্গেট করা হয়। যদিও ইউক্রেনীয় পক্ষ বলেছে রুশ হামলায় একটি আবাসিক ভবনে বেসামরিক লোকজন নিহত হয়েছে- যাদের মধ্যে ছিল চারটি শিশু।

এদিকে ইউক্রেন বলছে রুশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা হামলার পরিকল্পনা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। পশ্চিমা বিভিন্ন দেশে থেকে নতুন অস্ত্র এবং সরঞ্জাম এসে পৌঁছানোর পর এই হামলার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, রাশিয়া তাদের হামলা বাড়ানোর এবং দখল করা জায়গায় নিয়ন্ত্রণ সংহত করার পরিকল্পনা নিচ্ছে বলে জানা গেছে। সামরিক কম্যান্ডের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বে আবারও রদবদল করা হয়েছে।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী জেনারেল মিজিনতসেভকে– যিনি সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন– তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। মাত্র গত সেপ্টেম্বরে তাকে নিয়োগ করা হয়।

রণাঙ্গনের সম্মুখ সারির রুশ সেনা ইউনিটগুলো অনেকদিন ধরেই অভিযোগ করছে প্রয়োজন মত অস্ত্র-সরঞ্জাম তারা পাচ্ছেনা। এমনকি খাবার এবং পোশাকের ঘাটতির কথাও তারা জানিয়েছে।

অন্যদিকে সোমবার ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পূর্বাঞ্চলীয় বাখমুট শহরের কিছু অবস্থান থেকে তাদের সৈন্যরা রুশ সৈন্যদের হটিয়ে দিয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে এই শহরটি রুশরা কার্যত অবরোধ করে রেখেছে।

ইউক্রেনের স্থলবাহিনীর কম্যান্ডার জেনারেল ওলেকসান্দার সিরিসকি টেলিগ্রাম চ্যানেলে বলেন বাখমুটের পরিস্থিতি 'খুবই জটিল' – কিন্তু 'শত্রুরা শহরের দখল নিতে ব্যর্থ হচ্ছে।'
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement