২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জার্মানিতে ইসলামবিদ্বেষের শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা

জার্মানিতে ইসলামবিদ্বেষের শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা। - ছবি : সংগৃহীত

২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ডে দুটি মসজিদে হামলার পর জাতিসঙ্ঘ ১৫ মার্চকে ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে টু কমব্যাট ইসলামোফোবিয়া’ ঘোষণা করে। জার্মানিতে বাস করা প্রায় ৫৫ লাখ মুসলমানের অনেকেই বলছেন, তারা প্রতিদিন ইসলামোফোবিয়া বা ইসলামবিদ্বেষের মুখোমুখি হন।

জার্মানির এরফুর্টে আহমদিয়া মুসলিমদের একটি মসজিদে মিনার তৈরি হচ্ছে। এই কাজের সাথে জড়িত আছেন এরফুর্ট-রিট এলাকার ডেপুটি মেয়র সুলেমান মালিক। ৩৪ বছর বয়সী মালিকের জন্ম পাকিস্তানে। তবে ১৮ বছর ধরে জার্মানিতে বাস করছেন।

মালিক জানান, মিনার তৈরি কাজের জন্য একটি ক্রেন ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু ওই কোম্পানি পরে বর্ণবাদ, ডানপন্থী, মৌলবাদ ও ইসলামোফোবিয়ার শিকার হওয়ার আশঙ্কায় কাজ থেকে সরে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত একটি কোম্পানি কাজ করতে রাজি হয়। তবে কেউ নির্মাণকাজের ছবি বা ভিডিও তুলতে পারবে না বলে শর্ত দিয়েছিল।

মসজিদ এলাকায় শূকরের মরদেহ ছুড়ে মারার মতো ঘটনা ঘটেছে বলেও জানান মালিক। এছাড়া গাড়ি করে নির্মাণকাজের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় জানালা খুলে চিৎকার করে গালি দেয়া, রাস্তার অপর পাশে ক্যাথলিক প্রার্থনার নামে ‘বিক্ষোভকারীদের‘ জড়ো হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে

মিনার নির্মাণকাজের প্রতি সমর্থন জানানোয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রায়ই উপহাস করা হয়।

সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতা

জার্মানির সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতা দেয়া আছে। তবে ‘জার্মান কাউন্সিল অফ এক্সপার্ট অন ইন্টিগ্রেশন অ্যান্ড মাইগ্রেশন‘-এর সর্বশেষ জরিপে অংশ নেয়া প্রায় ১৫ হাজার উত্তরদাতার তিন ভাগের এক ভাগ থেকে শুরু করে অর্ধেক উত্তরদাতা মুসলমানবিরোধী ও ইসলামবিরোধী মনোভাব প্রকাশ করেছে।

প্রায় প্রতি সপ্তাহে জার্মানির কোথাও না কোথাও মুসজিদে গ্রাফিতি এঁকে দেয়া কিংবা মসজিদের ক্ষতি করার ঘটনা ঘটছে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জার্মানির হেসে রাজ্য ৪৩ বছর বয়সী এক শ্বেতাঙ্গ একটি শিশা বার, বার ও কিয়স্কে হামলা চালিয়ে নয়জনকে হত্যা করেছিলেন।

জার্মানির সেন্ট্রাল কাউন্সিল অফ মুসলিমের মহাসচিব আব্দাসসামাদ আল ইয়াজিদি বলছেন, ইসলামোফোবিয়া বা ইসলামবিদ্বেষ বিষয়টি জার্মান সমাজের মূলধারা ঢুকে গেছে। অর্থাৎ এটি অনেকটা গ্রহণযোগ্য হয়ে গেছে, যা প্রকাশ্যে প্রকাশ করা যায় বলে মনে করেন তিনি।

ইয়াজিদি জানান, তিনি জার্মানিতে মুসলমানদের বিষয় দেখাশোনা করার জন্য একজন কমিশনার নিয়োগ দিতে জার্মানির কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ইহুদিদের দেখাশোনা করাসহ বিভিন্ন বিষয়ের জন্য জার্মানিতে প্রায় ৩৫ জন কমিশনার আছেন। কিন্তু কপট যুক্তি দেখিয়ে মুসলমানদের জন্য কমিশনার নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না।

তিনি বলেন, ‘মানুষ স্বীকার করতে চায় না যে সমাজে মুসলিমবিরোধী বর্ণবাদ সমস্যা রয়েছে। তবে মুসলমানরা এটি অনুভব করে।’

অন্য দেশে এমন কর্মকর্তা আছেন। যেমন ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো গত জানুয়ারিতে ইসলামবিদ্বেষ ঠেকানোর জন্য প্রথমবারের মতো একজন কমিশনার নিয়োগ দিয়েছেন। ইউরোপিয় ইউনিয়ন ২০১৫ সালে মুসলিমবিরোধিতা ঠেকানোর জন্য সমন্বয়কারীর পদ তৈরি করে।

সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement