২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বাখমুতের পূর্বাংশ দখল করে নেয়ার দাবি ওয়াগনার বাহিনীর

যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বাখমুত শহরের ৯০ ভাগ বাসিন্দা এখান থেকে পালিয়ে গেছে। - ছবি : বিবিসি

রাশিয়ার ভাড়াটে সৈন্য বাহিনী ওয়াগনারের প্রতিষ্ঠাতা বলছেন তার যোদ্ধারা ইউক্রেনের বাখমুত শহরের সমগ্র পূর্বাঞ্চল দখল করে নিয়েছে।

ইয়েভগেনি প্রিগোঝিন বুধবার (৮ মার্চ) টেলিগ্রামে করা পোস্টে বলেছেন, বাখমুতকা নদীর পূর্ব দিকের পুরোটাই এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে।

প্রিগোঝিন বলেন, ‘বাখমুতকা শহরের পূর্ব পাশের সবকিছুই এখন ওয়াগনার বাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে।’

এই নদী বাখমুত শহরটিকে দু‘ভাগে বিভক্ত করে রেখেছে। শহরটির কেন্দ্র নদীর পশ্চিম পাশে।

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্ভবত ইউক্রেনীয় সৈন্যদের ওই অঞ্চল থেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার পর রুশপন্থী ওয়াগনার গ্রুপের সৈন্যরা সেখানে ঢুকে পড়েছে।

ওয়াগনার গ্রুপের প্রধানের এই দাবি যদি সত্য হয়, তাহলে এর অর্থ হচ্ছে রুশ সৈন্যরা এখন শহরটির অর্ধেকেরও বেশি নিয়ন্ত্রণ করছে।

বলা হচ্ছে, বাখমুত শহর দখল করে নিতে পারলে সেটা হবে রাশিয়ার জন্য গত ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে বড় ধরনের বিজয়।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ইউক্রেনের যোদ্ধারা এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

রয়টার্স বলছে, গত সপ্তাহে কিয়েভ কৌশলগত কারণে বাখমুত থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু ইউক্রেনের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতারা এখন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া এবং রুশ বাহিনীতে যত বেশি সম্ভব ক্ষতিসাধনের ওপর জোর দিচ্ছেন।

এ মাসের শুরুর দিকে প্রিগোঝিন দাবি করেছিলেন তারা শহরটিকে চারদিক থেকে ‘ঘিরে ফেলেছে’ এবং ইউক্রেনীয় সৈন্যদেরকে শহর থেকে সরিয়ে নেয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এর আগে বলেছিলেন এই শহরের কৌশলগত গুরুত্ব খুব কম। তবে এখন বলছেন বাখমুতের পতন হলে রুশ সৈন্যদের জন্য ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো দখল করে নেয়ার ‘পথ উন্মুক্ত’ হবে।

ক্ষয়-ক্ষতির হিসাব
ইউক্রেনের পূর্ব দিকে অবস্থিত বাখমুত শহর দখলের জন্য গত ছয় মাস ধরে রাশিয়ার সৈন্যদের সাথে ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের তীব্র লড়াই হচ্ছিল।

পশ্চিমা কর্মকর্তারা বলছেন, এই শহর দখলের লড়াই-এ রাশিয়ার ২০ থেকে ৩০ হাজার সৈন্য হতাহত হয়েছে।

পশ্চিমা একজন কর্মকর্তা বলেন, ইউক্রেনের জন্য বাখমুতের এই যুদ্ধ ‘প্রচুর সংখ্যক রুশ সৈন্যকে হত্যার অনন্য সুযোগ।’

অন্যদিকে রাশিয়া দাবি করছে, বাখমুতের যুদ্ধে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীরও ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।

রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু মঙ্গলবার টেলিগ্রামে দেয়া এক পোস্টে দাবি করেন শুধুমাত্র ফেব্রুয়ারি মাসেই ইউক্রেনের ১১ হাজার সৈন্য নিহত হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘কিয়েভের সরকার তাদের নিজেদের লোকজনকে উপেক্ষা করছে তা বিস্ময়কর।’

তবে পশ্চিমা কর্মকর্তারা রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর দেয়া এই হিসাব প্রত্যাখ্যান করেন। বরং তারা দাবি করছেন, বাখমুত শহর দখলের যুদ্ধে যে ওয়াগনার বাহিনী রুশ সৈন্যদের নেতৃত্ব দিচ্ছে সেটি সৈন্য ও যুদ্ধাস্ত্র সঙ্কটে ভুগছে।

বলা হচ্ছে, যুদ্ধে শহরটি প্রায় বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। শহরে যত বাসিন্দা ছিল, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তাদের প্রায় ৯০ ভাগ অন্যত্র চলে গেছে।

পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস অঞ্চলের এই শহরটিতে এখন বিধ্বস্ত ভবন আর গাছপালা ছাড়া তেমন কিছুই নেই।

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সেই রেজনিকফ স্টকহোমে ইইউর প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের এক বৈঠকের আগে বলেছেন রুশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য জরুরি ভিত্তিতে তাদের গোলার প্রয়োজন। এ ব্যাপারে তিনি ইউরোপিয়ান সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বাখমুত কেন গুরুত্বপূর্ণ
পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলের দোনেৎস্ক ও লুহানস্কে রসদ-পত্র সরবরাহের জন্য একটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ পথের ওপর এই বাখমুত শহরের অবস্থান।

এই শহরের নিয়ন্ত্রণ দখল করতে পারলে রাশিয়া এই এলাকাটিকে ক্রামাটরস্ক ও স্লোভিয়ানস্কের মতো দুটি বড় শহরের দিকে এগিয়ে যাবার জন্য ভিত্তি তৈরি করতে পারবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাখমুত শহরে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারলে রাশিয়ার পক্ষে পুরো ডনবাস অঞ্চল দখল করে নেয়া আরো সহজ হয়ে উঠবে।

বাখমুত দখল করার জন্য লড়ছে রাশিয়ার ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপ তার প্রতিষ্ঠাতা রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইয়েভগেনি প্রিগোঝিন।

বহু রুশ কারাবন্দীকে এই বাহিনীতে সৈনিক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং তারা সহিংস যুদ্ধের জন্য সুপরিচিত। ইউক্রেনের যুদ্ধ ছাড়াও আফ্রিকার কিছু সংঘাতে তারা জড়িত।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement