২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

অনিয়মিতদের ফেরাতে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের উপর ইইউর চাপ

- ছবি : সংগৃহীত

অনিয়মিত অভিবাসীদের ফেরত না নেয়া দেশগুলোর উপর ভিসা কঠোরতা আরোপ করবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সেই সাথে ফেরত নেয়ার প্রক্রিয়া উন্নততর করতে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের সাথে নতুন চুক্তির পরিকল্পনাও করেছে তারা।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে যেসব আশ্রয়প্রার্থীর আবেদন বাতিল হয়েছে, তাদেরকে নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের সংখ্যা বাড়াতে চায় ইইউ। এতে বিদ্যমান যে প্রক্রিয়া আছে তার পূর্ণ ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন সুইডেনের অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রী মারিয়া মলমের স্ট্যানেরগার্ড।

বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত ফল দিচ্ছে না। এ বিষয়ে কাউন্সিলের কাছে ভিসা কড়াকড়ি আরোপের প্রস্তাব জমা দিতে ইউরোপীয় কমিশনকে আহ্বান জানিয়েছে সদস্য রাষ্ট্রগুলো। বৃহস্পতিবার স্টকহোমের বৈঠকে সদস্যরা একমত হয়েছেন বলেও জানান তিনি।

বর্তমানে সভাপতি হিসেবে ইইউ বৈঠকের নেতৃত্ব দিচ্ছে সুইডেন। দেশটির কট্টর-ডানপন্থি সরকার অনিয়মিত অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে ভিসা, পররাষ্ট্রনীতি ও উন্নয়ন সহযোগিতাকে শর্ত হিসেবে ব্যবহারের বিষয়ে ইইউকে আগে থেকেই চাপ দিয়ে আসছে।

অনিয়মিত অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ইইউর কঠোর অবস্থানের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে জোট কমিশনের প্রধান উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েনের বক্তব্যেও। ফেব্রুয়ারিতে স্টকহোমে জোটের সম্মেলন শুরুর আগে ইইউ দেশগুলোর নেতাদের কাছে পাঠানো চিঠিতে তিনি বিষয়টি আলোচ্যসূচিতে রাখার কথা উল্লেখ করেন।

লাইয়েন জানান, বছরের প্রধমার্ধে ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলো একটি পাইলট প্রকল্পে স্বাক্ষর করতে পারে। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো আশ্রয় আবেদন ও যোগ্য প্রার্থীদের আশ্রয় প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা এবং যারা যোগ্যতা অর্জন করবেন না তাদের অবিলম্বে ফেরত পাঠানো।

অভিবাসীরা যেসব দেশ থেকে আসে, সেগুলোর মধ্য থেকে নিরাপদ দেশের একটা তালিকা তৈরির প্রস্তাব তার। অর্থাৎ যেসব দেশ নিরাপদ বিবেচিত হবে সেসব দেশের আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন গৃহীত হওয়ার সম্ভাবনা তখন কমে যাবে। ভূমধ্যসাগর ও বলকান অভিবাসন রুটে সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করার কথাও বলেন তিনি।

বিভিন্ন দেশের সাথে চুক্তির পরিকল্পনা
কিছু দেশের সাথে নতুন করে প্রত্যাবর্তন সংক্রান্ত চুক্তির পরিকল্পনা কথাও জানিয়েছেন ইইউ কমিশন প্রধান।

বার্তা সংস্থা এএফপি লাইয়েনের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া উন্নততর করতে ও বহিঃর্গমন প্রতিরোধ করতে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিসর, মরক্কো, টিউনিশিয়া ও নাইজেরিয়ার সাথে অভিবাসন চুক্তি করার পরিকল্পনা করেছে ইইউ।

ইইউ স্বরাষ্ট্র কমিশনার ইলভা ইয়োহানসন বলেন, গত বছর প্রায় দশ লাখ আশ্রয় আবেদনের প্রেক্ষিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ব্যাপক চাপে রয়েছে। এর বাইরে ইউক্রেন থেকে ৪০ লাখ শরণার্থীর আগমনে দেশগুলোর আশ্রয়ের সক্ষমতা আরো কমেছে।

নিয়ম অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশের পর অনিয়মিত অভিবাসীরা জোটভুক্ত দেশগুলোতে আশ্রয় আবেদনের সুযোগ পান। প্রথমবার আবেদন বাতিল হলে তার বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগও রয়েছে। এরপরও তা বাতিল হলে ফেরত যাওয়ার বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়। এক্ষেত্রে স্বেচ্ছায় ফেরত যাওয়াদের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের নানা সহায়তা প্রকল্প রয়েছে। এই সুযোগ নিয়ে কেউ ফেরত না গেলে তাকে জোরপূর্বক ফেরত পাঠাতে পারে দেশগুলো।

তবে ইউরোপীয় কমিশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ফেরত যাওয়ার নির্দেশের তুলনায় কার্যকর প্রত্যাবর্তনের হার অনেক কম। ২০২১ সালে তিন লাখ ৪০ হাজার ৫০০ জনকে ফেরত যাওয়ার নির্দেশের বিপরীতে সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে মাত্র ২১ শতাংশ।

বাংলাদেশের অবস্থান
গত কয়েক বছরে ইউরোপীয় ইউনিয়নে অনিয়মিত উপায়ে বাংলাদেশীদের অভিবাসন বেড়েছে। বর্তমানে সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগর হয়ে পাড়ি জমানোদের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে আছেন দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির নাগরিকেরা। এছাড়া বলকান রুট হয়েও ইইউ সদস্য দেশগুলোতে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন অনেকে। তাদের মধ্যে আশ্রয় আবেদন বাতিল হওয়া কয়েক শ’ জনকে গত কয়েক বছরে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে জার্মানি, গ্রিসসহ বিভিন্ন দেশ।

অভিবাসীদের ফেরত নিতে ঢাকার উপরে ব্রাসেলসের চাপ রয়েছে। বৈধ কাগজবিহীন অভিবাসীদের ফেরাতে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ায় ২০২১ সালের ১৫ জুলাই বাংলাদেশীদের ভিসা প্রক্রিয়ায় সাময়িক কড়াকড়ি আরোপের প্রস্তাব করে ইউরোপীয় কমিশন। এই প্রস্তাবে বাংলাদেশ ছাড়াও ইরাক ও গাম্বিয়াকেও ওই সময় যুক্ত করা হয়।

বার্তা সংস্থা এএফপি অবশ্য জানিয়েছে এখন পর্যন্ত ইইউ শুধু গাম্বিয়ার উপরই ভিসা কড়াকড়ি আরোপ করেছে। এতে দেশটির নাগরিকদের জন্য শেঙেন ভিসা পাওয়া কঠিন ও ব্যয়বহুল হয়েছে। বাংলাদেশ ও ইরাকের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাব করা হলেও তা কার্যকর হয়নি।

গত নভেম্বরে বাংলাদেশ সফরকালে ইলভা ইয়োহানসন বলেছেন ভিসা নিষেধাজ্ঞার হুমকির পর ঢাকা অনিয়মিত অভিবাসীদের গ্রহণে রাজনৈতিকভাবে আরো উদার হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে বৈধ কাগজবিহীন অভিবাসীদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের সাথে ইইউর স্ট্যান্ডার্ড অব প্রসিডিউর (এসওপি) চুক্তি হয়। তা বাস্তবায়নে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশকে বিভিন্ন সময়ে চাপ দিয়ে এসেছে ইইউ।


সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement