২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

কসোভোয় সার্ব ও আলবেনিয়ান সরকারের মধ্যে আবার উত্তেজনা কেন?

- ছবি - বিবিসি

গাড়ির একটি লাইসেন্স প্লেটকে কেন্দ্র করে কসোভোর জাতিগত সার্ব এবং আলবেনিয়ান নেতৃত্বাধীন সরকারের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে শুরু করেছে।

কসোভো যুদ্ধের ২৩ বছর পরে আবার সার্ব এবং আলবেনিয়ান গোষ্ঠীর মধ্যে এ নিয়ে সংঘর্ষ শুরু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।

যদিও উভয়পক্ষ ২৩ নভেম্বর উত্তেজনা কমাতে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে।

কসোভো হচ্ছে ইউরোপের ভূমিবেষ্টিত ছোট্ট একটি দেশ। এর চারদিকে রয়েছে বলকানের চারটি দেশ- আলবেনিয়া, নর্থ মেসিডোনিয়া, মন্টেনিগ্রো এবং সার্বিয়া।

অনেক সার্ব মনে করেন, এটাই হচ্ছে তাদের জাতির উৎপত্তিস্থল।

কিন্তু কসোভোতে যে ১৮ লাখ মানুষ বসবাস করে, তাদের ৯২ শতাংশ আলবেনিয়ান আর ছয় শতাংশ সার্বিয়ান। বাকিদের মধ্যে আছে বসনিয়াক, গোরান, টার্কস এবং রোমা।

যেভাবে স্বাধীনতা পেয়েছিল কসোভো
১৯৯০ এর দশকে যুগোস্লাভিয়া থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার পর স্বায়ত্তশাসন এবং স্বাধীনতা দাবি করেছিল কসোভো। কিন্তু এর জবাবে যে জাতিগত আলবেনিয়ানরা স্বাধীনতা চেয়েছিল, তাদের ওপর সার্বিয়া ভয়ানক দমন-পীড়ন অভিযান শুরু করে।

সেটির অবসান ঘটে ১৯৯৯ সালে, যখন নেটো সার্বিয়ার বিরুদ্ধে বোমা হামলা অভিযান শুরু করে।

এরপর কসোভো থেকে সার্বিয়ার সৈন্যদের সরিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু কসোভোর অনেক আলবেনিয়ান এবং সার্বের কাছে সেই বিরোধ এখনো শেষ হয়নি।

নেটো নেতৃত্বাধীন কসোভো ফোর্স এখনো সেখানে মোতায়েন রয়েছে। বর্তমানে সেখানে ৩৭৭০ সৈন্য মোতায়েন রয়েছে।

২০০৮ সালে একতরফাভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে কসোভো।

এখন জাতিসঙ্ঘের ১৯৩টি দেশের মধ্যে ৯৯টি দেশ কসোভোর স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। যাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭ দেশের মধ্যে ২২টি দেশ রয়েছে। কিন্তু রাশিয়া ও চীন-এখনো জাতিসঙ্ঘে কসোভোর সদস্য হওয়া আটকে রেখেছে।

আর সার্বিয়া কখনোই কসোভোকে স্বীকৃতি দেবে না বলে অঙ্গীকার করেছেন সেদেশের প্রেসিডেন্ট অ্যালেক্সান্ডার ভুসিস।

সার্বিয়া অথবা কসোভো- কোনো দেশই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য নয়। তবে ২০১২ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে সদস্য পদের জন্য আবেদন করেছে সার্বিয়া।

আর কসোভো জানিয়েছে, তারা ২০২২ সালের শেষ নাগাদ ইইউ সদস্য পদের জন্য আবেদন করবে।

নতুন করে কী উত্তেজনা তৈরি হয়েছে?
বহুদিন ধরেই কসোভোর সার্ব সংখ্যালঘু গোষ্ঠী আর আলবেনিয়ান নেতৃত্বাধীন সরকারের মধ্যে খারাপ সম্পর্ক যাচ্ছে।

২০২২ সালে এই উত্তেজনা ‘আইন অমান্য’ কর্মসূচিতেও গড়িয়েছিল।

কসোভোর সরকার চায়, সেদেশের সার্ব এলাকার লোকজন গাড়িতে সার্বিয়ার ইস্যু করা লাইসেন্স প্লেট ব্যবহার করে, তা বদলে কসোভোর লাইসেন্স নাম্বার ব্যবহার করবে।

কিন্তু সেসব এলাকার বাসিন্দা প্রায় ৫০ হাজার সার্ব কসোভার নাম্বার প্লেট ব্যবহার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, কারণ তারা কসোভোর স্বাধীনতা স্বীকার করে না।

এই বছর গ্রীষ্মকালে সার্বিয়া সীমান্তবর্তী, কসোভোর উত্তরাঞ্চলে জাতিগত সার্বরা রাস্তাঘাট অবরোধ করে রেখেছিল। বিক্ষোভের অংশ হিসাবে তার গোলাগুলি করেছিল বলেও জানা গেছে। ফলে কসোভোর সরকার নতুন আইনের প্রয়োগ স্থগিত করেছে।

উত্তেজনা কমাতে দুই পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতায় মধ্যস্থতা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

এই চুক্তি অনুযায়ী, সার্বিয়ার নাম্বার প্লেট থাকা গাড়িগুলোকে জরিমানা করা বন্ধ করবে কসোভো। আর কসোভোর কোনো শহরের কোনো গাড়ির জন্য নতুন করে রেজিস্ট্রেশন ইস্যু করবে না সার্বিয়া।

রাশিয়ার সম্পৃক্ততা আছে?
গত অগাস্ট মাসে কসোভোর সরকার দাবি করেছিল যে, সার্বিয়া সেখানে জাতিগত উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা করছে আর রাশিয়া সেটি সমর্থন করছে।

সার্বিয়া আর রাশিয়া দীর্ঘদিনের মিত্র দেশ।

ইউক্রেনের রাশিয়ার হামলা শুরুর পর ইউরোপীয় দেশগুলো যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তাতে যোগ দিতে রাজি হয়নি সার্বিয়া।

গত মে মাসে সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ভুসিস রাশিয়ার সাথে একটি গ্যাস সরবরাহ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন, যাকে তিনি তার দেশের জন্য ‘উপকারী’ চুক্তি বলে বর্ণনা করেছেন।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা কসোভো সরকারকে দায়ী করে বলেছেন, তারা ‘ভিত্তিহীন বৈষম্যমূলক আইন’ বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছে।

কসোভোর প্রেসিডেন্ট ভিজোসা ওসমানী বলেছেন, ভ্লাদিমির পুতিন হয়তো কসোভোকে ব্যবহার করে ইউক্রেনের বর্তমান সঙ্কটকে বিস্তৃত আর ইউরোপকে আরো অস্থিতিশীল করে তুলতে পারেন।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement