২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

কিয়েভে বিদ্যুৎ বিপর্যয় : সরিয়ে নিতে হতে পারে শহরের বাসিন্দাদের

রাশিয়ান বিমান হামলায় কয়েক সপ্তাহজুড়ে লাখ লাখ ইউক্রেনীয় বিদ্যুৎ ও পানির সঙ্কটে - ছবি : সংগৃহীত

রাশিয়ান হামলায় কিয়েভে বিদ্যুৎ সরবরাহের বড় ধরনের বিপর্যয়ের পর শহরের মেয়র বলছেন সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি অচল হয়ে গেলে বাসিন্দাদের শহর ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোকে লক্ষ্য করে রাশিয়ান বিমান হামলায় কয়েক সপ্তাহজুড়ে লাখ লাখ ইউক্রেনীয় বিদ্যুৎ ও পানির সঙ্কটে রয়েছে।

ওভারলোড এড়াতে এবং স্থাপনাগুলো মেরামতের জন্যেও সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখা হচ্ছে।

বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সঞ্চালন ব্যবস্থায় রাশিয়ার আক্রমণে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার প্রায় ৪০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

শহরের অন্য এক কর্মকর্তা সতর্ক করেছেন যে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরো বন্ধ হয়ে গেলে পানি সরবরাহ এবং পয়ঃনিষ্কাশন কাজও বন্ধ করে হয়ে যাবে।

যুদ্ধকালীন সময়ে মানবিক আচরণের রূপরেখা নিরূপণ করে দেয়া জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী যুদ্ধে ‘বেসামরিক ব্যবস্থাপনায়’ হামলা চালানো উচিত নয়।

ইউক্রেনীয় টেলিভিশনে দেয়া এক বক্তৃতায় মেয়র ভিটালি ক্লিচকো রাশিয়ার কর্তৃক অবকাঠামো হামলাকে ‘সন্ত্রাস’ এবং ‘গণহত্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ‘ইউক্রেনীয়দের কোনো দরকার নেই। তার এলাকা দরকার, আমাদেরকে ছাড়া ইউক্রেনকে দরকার’, বলেন সাবেক এই হেভিওয়েট বক্সার।

তিনি বলেন, ‘তাই এখন যা কিছু ঘটছে (অবকাঠামোর উপর হামলা) তা গণহত্যা। তার কাজ হল আমাদের মৃত্যু নিশ্চিত করা, ঠাণ্ডায় জমে যাওয়া বা আমাদের জায়গা জমি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা যাতে তিনি সবকিছুর দখল নিতে পারেন।’

শীতকালে কিয়েভের গড় তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে চলে যায় এবং রাতে তা আরো অনেক কমে যায়।

ক্লিচকো বলেন, বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ অব্যাহত রাখার জন্য কর্তৃপক্ষ ‘সবকিছু’ করছে। তবে তিনি নিশ্চিত করছেন যে ভিন্ন পরিস্থিতির জন্যেও প্রস্তুতি রয়েছে।

শহরের মেয়র বলেন, কিয়েভের ত্রিশ লাখ বাসিন্দাদের শহরতলিতে বসবাসকারী বন্ধু বা আত্মীয়দের সাথে থাকার আয়োজন করা উচিত যাদের এখনো পানি ও বিদ্যুৎ রয়েছে। যাতে করে কিয়েভের বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে ‘সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির’ জন্য তাদের একটি পরিকল্পনা থাকে।

তিনি যোগ করেছেন যে, কর্তৃপক্ষ জ্বালানী, খাদ্য, পানি মজুদ করছে এবং বাসিন্দাদেরও তা করা উচিত। শহরজুড়ে কমপক্ষে এক হাজার আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে, যেখানে মানুষজন জরুরি অবস্থায় উষ্ণতা পেতে সক্ষম হবে।

মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে একটি পোস্টে কিয়েভের নিরাপত্তা-বিষয়ক পরিচালক রোমান চাচুক মেয়রের মন্তব্যের মতো একই রকম বার্তা দিয়েছেন।

তিনি জোর দিয়েছেন যে, শহরের কর্তৃপক্ষ সকল পরিকল্পনা করছে তবে ‘এই মুহূর্তে মানুষজনকে সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে কথা বলার কোনো কারণ নেই’।

কিয়েভের বাসিন্দারা বলেছেন, তারা জানেন যে বিদ্যুৎ চলে যেতে পারে এবং জরুরি সরবরাহ দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠতে পারে।

দিমিত্রো বিবিসিকে বলেন, পরিস্থিতি খারাপ হলে তিনি ইতোমধ্যে কিয়েভ ছেড়ে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। তিনি জ্বালানি মজুদ করেছেন, জেনারেটর কিনেছেন এবং তার পরিবারকে কিয়েভের উপকণ্ঠে তার দাদা-দাদির বাড়িতে নিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন।

তিনি বলেন যে দুই সপ্তাহ আগে ‘কর্তৃপক্ষ যখন উষ্ণতা আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে’ তারপরেই তিনি এসব পরিকল্পনা করতে শুরু করেন।

তিনি বলেণ, ‘আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে শেষ পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকবে না’।

অন্য এক বাসিন্দা ৩৬ বছর বয়সী আনাস্তাসিয়া বলেন যে বিদ্যুৎ পুরো চলে গেলেও তিনি শহরেই থাকবেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের রক্ষকরা মাটিতে ঘুমায়, তাই আমরা ঠাণ্ডার মধ্যেও আমাদের অ্যাপার্টমেন্টেই চালিয়ে নেবো’।

খেরসনে গুরুত্বপূর্ণ বাঁধে হামলা ও বিদ্যুৎ বিপর্যয়

অধিকৃত খেরসনে রাশিয়া সমর্থিত কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ ও পানির ক্ষতির কথা জানিয়েছে। সেজন্যে তারা কাছাকাছি পাওয়ার লাইন এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁধে ইউক্রেনীয়দের ধর্মঘটকে দায়ী করেছে।

তারা বাসিন্দাদের ‘শান্ত থাকার’ আহ্বান জানিয়ে বলেছেন ‘দ্রুত’ পরিস্থিতির সমাধান করা হবে। তবে ইউক্রেনের আঞ্চলিক প্রশাসনের প্রধান বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য রাশিয়াকে দায়ী করেছেন।

ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় জলবিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কাখোভকা বাঁধের ক্ষতির কারণে এর কাছাকাছি এলাকায় কিছুটা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কথা জানিয়েছে রাশিয়ার গণমাধ্যম। তবে ইউক্রেন এই প্রতিবেদনের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি। কাখোভকা বাঁধে হামলার বিষয়ে নিরপেক্ষ সূত্র থেকে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইউক্রেন সতর্ক করেছে যে রুশ বাহিনী বাঁধটি উড়িয়ে দিতে চায়, যাতে আশেপাশের এলাকার হাজার হাজার মানুষ বিধ্বংসী বন্যার কবলে পড়ে।

যুদ্ধের প্রথম দিকেই রাশিয়া খেরসন দখল করে নেয়। কিন্তু ইউক্রেনীয় বাহিনী অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে তারা এটিকে পুনরুদ্ধার করার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। খেরসন ওই বাঁধটির নিচের দিকে নদীর ভাটি অঞ্চলে অবস্থিত।

দোনেৎস্কে বড় ক্ষতি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি তার রাতের টেলিভিশন ভাষণে বলেছেন, ইউক্রেনের পূর্বে দোনেৎস্ক অঞ্চলে ‘ভয়াবহ’ হামলায় রাশিয়া ‘বড় ধরনের ক্ষতির’ সম্মুখীন হয়েছে।

রাশিয়া সম্পর্কিত খবরের স্বাধীন মিডিয়া আউটলেট হিসেবে পরিচিত 'দ্য ইনসাইডার' জানিয়েছে যে চার দিনে পাভলিভকা এলাকায় রাশিয়ান মেরিনদের একটি ব্রিগেডের ৩০০ সদস্য নিহত, আহত বা নিখোঁজ হয়েছে।

রাশিয়াপন্থী টেলিগ্রাম চ্যানেলের পোস্টগুলো এই ব্রিগেডের ভয়ানক পরিস্থিতির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।

জেলেনস্কি আরো সতর্ক করে দিয়েছেন যে রাশিয়া ‘আমাদের অবকাঠামো, শক্তির উপর ব্যাপক আক্রমণের সম্ভাব্য পুনরাবৃত্তির জন্য তাদের শক্তিকে আরো জোরালো করছে।’

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement