২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

'ইউক্রেনে মস্কোপন্থী এক সাবেক এমপিকে ক্ষমতায় বসাতে পরিকল্পনা করছে রাশিয়া'

ইউক্রেন সীমান্তের কাছে রুশ ট্যাংকের মহড়া - ছবি : সংগৃহীত

ব্রিটেনের অভিযোগ, ইউক্রেনে একজন মস্কোপন্থী ব্যক্তিকে দেশটির সরকার প্রধান হিসেবে ক্ষমতায় বসানোর পরিকল্পনা করছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

ব্রিটেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যক্তিটির নামও প্রকাশ করেছে - যা বেশ অস্বাভাবিক এক ঘটনা। বলা হচ্ছে সাবেক পার্লামেন্ট সদস্য ইয়েভেন মুরায়েভই হচ্ছেন ক্রেমলিনের পছন্দের ওই ব্যক্তি। রাশিয়া তাকে ইউক্রেনের রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসাতে চায়।

রাশিয়া এখন ইউক্রেন সীমান্তে এক লাখেরও বেশি সেনা মোতায়েন করেছে। তবে রাশিয়া ইউক্রেনের ভেতরে ঢুকে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে - এমন কথা মস্কো অস্বীকার করেছে।

সামরিক অভিযানের কথা অস্বীকার করলেও পুতিনের দাবি, তাকে পশ্চিমা দেশগুলোর এ গ্যারান্টি দিতে হবে যে ইউক্রেনকে কখনোই ন্যাটোর সদস্য করা হবে না। যুক্তরাষ্ট্র এমন কোনো অঙ্গীকার করতে অস্বীকার করেছে।

কিন্তু পশ্চিমা ও ইউক্রেনের গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, ২০২২ সালের প্রথম দিকেই কোনো এক সময় রাশিয়া সামরিক অভিযান চালাতে পারে।


কে এই মুরায়েভ?

মুরায়েভ একটি সংবাদমাধ্যমের মালিক এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনে তার রাজনৈতিক দল পাঁচদএর কম ভোট পাওয়ায় তিনি ইউক্রেনের পার্লামেন্টে তার সদস্যপদ হারান।

তিনি অবশ্য নিজেই অবজারভার পত্রিকাকে এক সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছেন, তার কাছে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতরকে 'বিভ্রান্ত' বলে মনে হয়েছে। এসব কথা খুব একটা যৌক্তিক নয়। আমাকে রাশিয়ায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সেখানে আমার পিতার প্রতিষ্ঠানের যে অর্থ আছে - তাও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

কিন্তু যুক্তরাজ্যে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ভাদিম প্রিস্টাইকো বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে রাশিয়া একজন মস্কোপন্থী নেতাকে ইউক্রেনের ক্ষমতায় বসাতে চাইছে।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতর আরো চারজন ইউক্রেনীয় রাজনীতিবিদের নাম প্রকাশ করেছে যারা তাদের ভাষায় রুশ গোয়েন্দা সংস্থার সাথে যোগাযোগ রাখেন।

ইউক্রেনে মার্কিন অস্ত্রের চালান পৌঁছেছে

রাশিয়ার হুমকি মোকাবিলার জন্য ইউক্রেনকে ৯০ টন পরিমাণ সামরিক সাহায্য পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট বাইডেন গত ডিসেম্বরে ইউক্রেনকে ২০ কোটি ডলারের যে নতুন সামরিক সহায়তা দেবার অঙ্গীকার করেছিলেন, এটা হচ্ছে তার আওতায় পাঠানো প্রথম চালান।

কিয়েভে মার্কিন দূতাবাস বলছে, এর মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সামনের কাতারের সদস্যদের জন্য গোলাবারুদ, যা রাশিয়া কোনো অভিযান চালালে তার মোকাবিলায় ব্যবহৃত হবে।

ইউক্রেনে মার্কিন অস্ত্রশস্ত্র পাঠানোর জন্য গত কয়েক দিনে এস্তোনিয়া, লাতভিয়া ও লিথুয়ানিয়া যে প্রস্তাব করেছিল তা-ও অনুমোদন করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

রুশ-মার্কিন উত্তেজনা প্রশমনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের মধ্যে জেনেভায় একটি বৈঠক হয়েছে - তবে তাতে কোনো ফল হয়নি।

ভ্লাদিমির পুতিন কী চান?

রুশ প্রেসিডেন্ট বহু দিন ধরেই দাবি করে আসছেন যে ১৯৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্র তৎকালীন সোভিয়েত নেতা মিখাইল গরবাচেভের কাছে একটা নিশ্চয়তা দিয়েছিল যে ন্যাটো জোটকে পূর্ব দিকে আর সম্প্রসারণ করা হবে না, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ওই অঙ্গীকার রক্ষা করেনি।

ওই সময় থেকে এ পর্যন্ত সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন বা তার প্রভাব-বলয়ের অংশ ছিল - এমন অনেক পূর্ব ইউরোপিয়ান দেশ ন্যাটো জোটের সদস্য হয়েছে। এর মধ্যে পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, লাৎভিয়া ও এস্তোনিয়ার সরাসরি সীমান্ত রয়েছে রাশিয়ার সাথে।

রাশিয়া মনে করে, এর ফলে তাদের সীমান্তের কাছে ন্যাটোর সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্রের উপস্থিতি তার নিরাপত্তার প্রতি সরাসরি হুমকি সৃষ্টি করছে।

পুতিন চান, পশ্চিমা দেশগুলোকে এ প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে ইউক্রেনকে কখনো ন্যাটো সদস্য করা হবে না এবং পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর অস্ত্রশস্ত্র দেয়া ও সামরিক মহড়া চালানো বন্ধ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের কোনো অঙ্গীকার করতে অস্বীকার করেছে।

এর আগে ২০১৪ সালে ইউক্রেনের রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ক্ষমতাচ্যুত হলে রাশিয়া ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অঞ্চল দখল করে নেয়। এরপর থেকে পূর্ব ইউক্রেনের রুশ-সমর্থিত বিদ্রোহীদের সাথে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর যুদ্ধ চলছে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement