১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনাভাইরাস : ব্রিটেনের কিছু মসজিদ কেন রমজানে নারীদের জন্য বন্ধ

ব্রিটেনের কিছু মসজিদ রমজানে নারীদের জন্য বন্ধ - ছবি সংগৃহীত

বিশ্ব জুড়ে কোটি কোটি মুসলিম এখন রমজান মাসে রোজা রাখছেন। কিন্তু যুক্তরাজ্যের কিছু মসজিদ এই রমজানের সময় নারীদের মসজিদের ভেতরে গিয়ে নামাজ পড়তে দিচ্ছে না। কেউ কেউ বলছেন, এটা বদলানোর সময় এসেছে।

ধর্মীয় সব আনুষ্ঠানিকতা পালনের মতো সময় আলমাস কদাচিৎও পান। আলমাস তার তিন সন্তানকে একা একা বড় করছেন ও একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। পবিত্র রমজান মাসে রোজা রাখাটা তার কাছে এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

‘আমি বিশেষ করে সপ্তাহান্তে তারাবীর নামাজ পড়বো বলে ঠিক করেছিলাম, যখন আমি একটু বেশি সময় পাই। কিন্তু আমি যখন আমার স্থানীয় মসজিদের মানুষের সাথে কথা বললাম, তারা বললেন, মসজিদের ভেতর কোনো বয়স্ক মানুষ, শিশু এবং নারীকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না, বলছিলেন তিনি।

এরকম বিধিনিষেধের মধ্যে আলমাস একা পড়েননি। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অনেক মসজিদ এই রমজান মাসে মসজিদে মেয়েদের জন্য যে আলাদা নামাজ পড়ার জায়গা, তা বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বেশিরভাগ মসজিদ বলছে করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধের কারণেই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তারাবীর নামাজ পড়তে হয় কেবল রমজান মাসে। কিন্তু আলমাসের মতো নারীরা যে কেবল তারাবীর নামাজ পড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তা নয়, অনেকে তাদের মসজিদে নামাজই পড়তে পারেন না, এমনকি শুক্রবারের জুমার নামাজও নয়।

দ্বিতীয় শ্রেণী
বাড়িতে যদিও অনেক পরিবার এক সাথেই নামাজ পড়ে, মসজিদে সাধারণত নারী-পুরুষকে আলাদাভাবে নামাজ পড়তে হয়। অনেকে বিশ্বাস করেন, এর ফলে তারা নামাজে আরো বেশি করে মনঃসংযোগ করতে পারেন।

অনেক সময় একই জায়গাতেই পুরুষের পেছনে নারীরা নামাজ পড়েন। তবে সচরাচর মসজিদে পুরুষ এবং নারীর জন্য নামাজ পড়ার স্বতন্ত্র কক্ষ থাকে। প্রধান হলটিতে পুরুষরা নামাজ পড়েন, আর নারীদের জন্য থাকে বিকল্প একটি কক্ষের ব্যবস্থা।

তবে সব মসজিদে আবার মেয়েদের জন্য আলাদা রুম থাকে না। ব্রিটেনে যত মসজিদ আছে, তার এক চতুর্থাংশে মেয়েদের জন্য আলাদা নামাজ পড়ার জায়গা নেই। আর যেসব মসজিদে এরকম ব্যবস্থা আছে, সেখানে পুরুষ এবং নারীদের জন্য বরাদ্দ করা জায়গা সমান নয়।

মসজিদগুলোতে সবার সমান অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে 'ওপেন মাই মস্ক' নামের একটি সংস্থা। যৌথভাবে এটি পরিচালনা করেন অনিতা নায়ার।

তার মতে, মসজিদে সাধারণত নারীদের জন্য বরাদ্দ করা হয় কোনো দ্বিতীয় শ্রেণির জায়গা। এটি পুরুষদের নামাজ পড়ার জায়গার তুলনায় ছোট, কখনো বেজমেন্টে (মাটির নিচের তলায়), কোনো তালাবদ্ধ দরোজার পেছনে অথবা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয় এমন কোনো জায়গায়। আর মেয়েদের এই নামাজ পড়ার জায়গা হয়তো খোলা থাকে কেবল বিশেষ কোনো সময়ে।

মহামারির কারণে এই সমস্যা এখন আরো জটিল হয়েছে।

‘আমরা এমন রিপোর্ট পেয়েছি যে এই মহামারির সময়, অনেক মসজিদ, যেখানে আগে মেয়েদের নামাজ পড়তে দেয়া হতো সেখানে তাদের এখন বাদ রাখা হয়েছে যাতে করে পুরুষরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ পড়তে পারে। তাদের ধারণা, মেয়েদের নামাজ পড়ার জায়গায় এসব নিয়মনীতি মানা হচ্ছে কিনা সেটা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা তারা করতে পারবে না’ বলছেন তিনি।

বিবিসি ব্রিটেনের ২৯টি বড় মসজিদের মানুষের সাথে যোগাযোগ করেছে রমজান মাসে তাদের এ সংক্রান্ত নীতি আসলে কী তা জানতে।

এই ২৯টি মসজিদের মধ্যে ৫টিতে নারীদের জন্য নামাজ পড়ার আলাদা কোনো জায়গার ব্যবস্থাই নেই।

ছয়টি মসজিদ বলেছে, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিধির কারণে তারা মসজিদে নারীদের নামাজ পড়তে দিতে পারছে না। ১২টি মসজিদ নারীদের জন্য খোলা আছে, আর সাতটি মসজিদ বিবিসির প্রশ্নের কোনো জবাব দেয়নি। এর মধ্যে আছে লন্ডনের গ্রীনিচ ইসলামিক সেন্টার ও বায়তুল ফাতাহ মসজিদ, লুটনের জামিয়া আল আকবরিয়া ও স্কটল্যান্ডের লানার্কশায়ার মসজিদ।

আলমাসের মসজিদটির নাম মিল্টন কিন্স ইসলামিক সেন্টার। কেন এটি মেয়েদের জন্য খোলা নেই, বিবিসির এই প্রশ্নে কোনো মন্তব্য করতে শুরুতে তারা রাজি হয়নি।

তবে এই সেন্টার থেকে পরে জানানো হয়, তারা মেয়েদের নামাজ পড়ার জন্য খোলা আছে, তবে সীমিত আকারে। তাদের ওয়েবসাইটে যে ২০২১ সালের রমজানে মসজিদে ‘বয়স্ক, শিশু এবং নারীদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না’ বলে উল্লেখ আছে, সেটি নাকি কেবল একটি পরীক্ষামূলক সময়ের জন্য করা হয়েছিল।

কিন্তু আলমাস বলছেন, ‘যেটা খুব হতাশাজনক, তা হচ্ছে, মসজিদটির নিচ তলায় মেয়েদের জন্য একটি নির্ধারিত জায়গা এবং তিনটি বড় রুম আছে। আমি এই মসজিদে আসে এমন অনেক নারীকে চিনি, যারা বিধবা এবং যারা তাদের সন্তানের সাথে থাকেন না। অনেক নারী আছেন, যাদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা আছে।’

‘এই সিদ্ধান্ত যদি আমার ওপর প্রভাব ফেলে থাকে, আমি কল্পনা করতে পারি এসব নারীর ওপর এর কী প্রভাব পড়ছে।’

এটা করা সম্ভব
ব্রিটেনের মসজিদগুলোতে নারীদের আরো বেশি প্রবেশাধিকারের দাবিতে প্রচারণা চালাচ্ছেন জুলি সিদ্দিকী। তিনি তার নিজের মসজিদের একটি ভিডিও ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করেছেন। লন্ডনের কাছে স্লাও এলাকার জামিয়া মসজিদ অ্যান্ড ইসলামিক সেন্টারটি রমজান মাসে মেয়েদের জন্য খোলা নেই।

ইনস্টাগ্রামে এটি শেয়ার করার পর তিনি ব্রিটেনের বিভিন্ন এলাকার নারীদের কাছ থেকে একই ধরনের অভিজ্ঞতার শত শত বার্তা পেয়েছেন।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলো আমি বুঝতে পারি। আমাদের মসজিদে অনেক জায়গা আছে, মসজিদের মধ্যে অবশ্যই নারীদের জন্য ব্যবস্থা করা সম্ভব। কাজেই একটা বিষয় পরিষ্কার করা দরকার-এটা কোভিডের ব্যাপার নয়, তার চেয়ে ভিন্ন কিছু। এটি মানসিকতার ব্যাপার। পুরুষরা এই মানসিকতার কারণেই ধরে নেয় যে মেয়েরা মসজিদে নামাজ পড়তে পারবে কীনা, সেটা তারা ঠিক করে দিতে পারে।

তবে জুলি সিদ্দিকীর মসজিদ বিবিসিকে জানিয়েছে, তারা এই সিদ্ধান্তটি নিয়েছিল মসজিদের নারী স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে পরামর্শের পর। এই স্বেচ্ছাসেবকরা বলেছিল, নারীদের জন্য যেরকম ব্যবস্থাদি থাকা দরকার, সেটা নিয়ে তাদের উদ্বেগ ছিল। মসজিদটি বলছে, তারা কোনো স্বেচ্ছাসেবককে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে না।

রমজান মাসে নারীদের মসজিদে ঢোকার ওপর বিধিনিষেধ জারি করা আরেকটি মসজিদ, লণ্ডনের বায়তুল ফাতাহ মসজিদ জানায়, মেয়েদের মসজিদে এসে জামাতে নামাজ পড়তে হবে, ইসলামে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু পুরুষদের জন্য এরকম নিয়ম আছে।

কিছু মুসলিম বিশ্বাস করেন, প্রতিদিন জামাতে নামাজ পড়া পুরুষদের জন্য বাধ্যতামূলক, কিন্তু মেয়েদের জন্য ব্যাপারটা ঐচ্ছিক। তারা ঘরে নামাজ পড়তে পারেন।

এক বিবৃতিতে মসজিদটি জানিয়েছে, বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার সাথে সাথেই নারীরা আবার মসজিদে এসে নামাজ পড়তে পারবেন।

লেস্টারের একটি মসজিদের একজন ইমাম শেখ ইব্রাহীম মোগরা বলেছেন, মসজিদে নারী ও পুরুষের উভয়ের নামাজ পড়ার জন্য সমান ব্যবস্থা রাখতে হবে। তবে তিনি একথাও বলেন, কোন কোন রীতিতে মেয়েদের মসজিদে এসে নামাজ পড়ার পরিবর্তে ঘরে বসেই নামাজ পড়া শ্রেষ্ঠ বলে মনে করা হয়। কাজেই এই বিষয়ে মুসলিমদের অবস্থান দ্বিধাবিভক্ত।

কিছু মসজিদ অবশ্য তাদের অবস্থান বদল করেছে। হাউন্সলো জামিয়া মসজিদ অ্যান্ড ইসলামিক সেন্টার শুরুতে কেবল পুরুষদের জন্য খোলা থাকবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু রমজান মাসে মসজিদে মেয়েদের প্রবেশাধিকার নিয়ে যখন অনলাইনে নানা আলোচনা শুরু হলো, তখন মসজিদটি তাদের অবস্থান বদলায়।

মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেনের প্রেসিডেন্ট জারা মোহাম্মদ বলেছেন, তাদের পরামর্শ হচ্ছে মসজিদে যেন নারী এবং পুরুষ-উভয়ের জন্যই সমান এবং ন্যায্য ব্যবস্থা রাখা হয়। এটি রমজান বা বছরের অন্য যে কোনো সময়ের জন্যই।

তিনি বলেন, মসজিদের উন্নয়ন ও এর ভূমিকা নির্ধারণে নারীকেও যুক্ত করতে হবে। আমরা এই বিষয়ে গঠনমূলক সংলাপে উৎসাহ দেই। মসজিদে নারীরা যেন আরো বেশি করে যেতে পারে এবং তাদের জন্য আরো বেশি সুযোগ তৈরি করা যায়, সেটা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সমাধানের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনায় উৎসাহ দেই।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
৬ জেলায় বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ, মর্টার শেলের শব্দে প্রকম্পিত সীমান্ত এলাকা হামলার ব্যাপারে ইসরাইল নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে : নেতানিয়াহু ইরানের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে পাশ্চাত্যের দেশগুলো সিদ্ধিরগঞ্জে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, নগদ টাকাসহ ৮০ লাখ টাকার মালামাল লুট প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী পরীমণির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন স্থায়ী যুদ্ধবিরতি না হওয়ায় গাজায় মানবিক প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ ব্যর্থ : রাশিয়া পিকআপচালককে হত্যা করে রেললাইনে লাশ ফেল গেল দুর্বৃত্তরা এক মাস না যেতেই ভেঙে গেলো রাজকীয় বিয়ে! ইউক্রেনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ১৭

সকল