২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফ্রান্সের হিজাব নিষেধাজ্ঞায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড়

ফ্রান্সের হিজাব নিষেধাজ্ঞায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ - ছবি : সংগৃহীত

ফ্রান্সের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটের দেশটিতে ১৮ বছরের কম বয়সী মুসলিম তরুণীদের হিজাব নিষেধাজ্ঞায় প্রস্তাবিত এক খসড়া আইনে অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে সারাবিশ্বেই চলছে কঠোর সমালোচনা। ফ্রান্সের এই খসড়া আইনের প্রতিবাদে হ্যাশট্যাগে #HandsOffMyHijab (আমার হিজাব থেকে হাত সরাও) শীর্ষক বিপুল বার্তা ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্ল্যাটফর্মগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফ্রান্সে দীর্ঘদিন থেকে মুসলিম নারীদের হিজাব পরিধান নিয়ে বিতর্ক চলে আসছে। উগ্র জাতীয়তাবাদীরা একে ফ্রান্সের ঐতিহ্যের প্রতি আগ্রাসন হিসেবে চিহ্নিত করে আসছেন।

গত ৩০ মার্চ ফরাসি সিনেট সদস্যরা 'প্রকাশ্য স্থানে অপ্রাপ্তবয়স্কদের স্পষ্ট ধর্মীয় চিহ্ন ও নারীকে পুরুষের চেয়ে হীন নির্দেশ করা পোশাক পরিধানের নিষেধের' খসড়া আইন অনুমোদন করে।

তবে এই খসড়া প্রস্তাব আইনে পরিণত হতে ফরাসি পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি থেকে স্বাক্ষরিত হয়ে আসতে হবে।

প্রস্তাবিত আইনকে 'ইসলামের বিরুদ্ধে আইন' হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই মন্তব্য করেন।

টুইটারে এক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেন, 'ফ্রান্সে সহবাসের অনুমতির বয়স : ১৫ হিজাবের অনুমতির বয়স : ১৮ এর থেকে বোঝা যায় এটি হিজাবের বিরুদ্ধে আইন নয়। এটি ইসলামের বিরুদ্ধে আইন।'

অপর একজন মন্তব্য করেন, 'একজন নারীকে জোর করে হিজাব পরানো যেমন অন্যায়, তেমনিভাবে তাকে জোর করে তা খুলতে বলাও অন্যায়। এটি সম্পূর্ণ তার সিদ্ধান্ত।'

ফ্রান্সের নতুন হিজাব নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় পিছিয়ে নেই প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বরাও।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম হিজাব পরিধানকারী নারী অ্যাথলেট ইবতিহাজ মুহাম্মদ ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, ফ্রান্সে ইসলামোফোবিয়া গুরুতর হচ্ছে।

তিনি বলেন 'ফ্রান্সের কি হলো? এর মাধ্যমে আপনারা ইসলামবিরোধী ও মুসলিমবিরোধী ঘৃণামূলক বক্তব্য, পক্ষপাতিত্ব, বৈষম্য ও ঘৃণার অপরাধকে স্বাভাবিক করছেন, ইসলামোফোবিয়াকে লিখিত আইন করছেন। আল্লাহ আমাদের বোনদের হেফাজত করুন।'

জর্দানের বংশদ্ভুত মার্কিন লেখিকা ও অ্যাকটিভিস্ট আমানি আল-খাতাতবেহ তার টুইটার একাউন্টে লিখেন, 'কোনো সরকারের উচিত নয় নারী কী পোশাক পরবে তা নিয়ন্ত্রণ করা, তা (হিজাব) কি পরবে নাকি খুলবে।'

এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ফরাসি পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি খসড়া এই প্রস্তাব অনুমোদন করে সিনেটে পাঠায়।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাকরন গত বছর তথাকথিত 'ইসলামি বিচ্ছিন্নতাবাদ' মোকাবেলায় বিতর্কিত এক খসড়া আইনের প্রস্তাব করেন। এই খসড়া প্রস্তাবও ১৬ ফেব্রুয়ারি ফরাসি পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ থেকে অনুমোদিত হয়ে আলোচনার জন্য উচ্চকক্ষে এসেছে।

আইনটির অধীনে ফ্রান্সে অবস্থিত মসজিদ ও মুসলমানদের দাতব্য সংস্থাতে হস্তক্ষেপ করতে পারবে ফ্রান্স সরকার। অন্যদিকে মুসলমান সংস্থা ও সংগঠনগুলোর অর্থ সংগ্রহ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে ফরাসি সরকার।

প্রস্তাবিত আইন অনুসারে মুসলিম শিক্ষার্থীদের গৃহশিক্ষার সুযোগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। সব ধরনের সরকারি কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলকভাবে 'ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ' শিক্ষার ধারা প্রস্তাব করা হয়েছে এই আইনে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডরে মুসলমানদের নামাজ আদায়ে নিষেধাজ্ঞার একটি ধারাও পরে এই খসড়া আইনে যোগ করা হয়েছে।

আইনে ধর্মীয় বা অন্য কারণে লিঙ্গের ভিত্তিতে রোগীদের ডাক্তার বাছাই করার ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।

বিতর্কিত এই খসড়া প্রস্তাবকে 'ফ্রান্সে অধিকার ও স্বাধীনতার ওপর গুরুতর আঘাত' ও 'বিবিধ সমস্যার উৎস' হিসেবে সতর্ক করে গত মাসে এক বিবৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

সূত্র : আলজাজিরা


আরো সংবাদ



premium cement