১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইউরোপে লকডাউন পরিস্থিতিতে কেমন কাটছে বাংলাদেশীদের জীবন

মিফতাহুল ইসলাম, সাদিয়া চৌধুরী, আফতাব মাহমুদ ও আসিফুর রহমান, জার্মানি - ছবি : সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের বিশ্ব-মহামারিতে ইউরোপ হয়ে উঠেছে এটির নতুন এপিসেন্টার। ইতালি, স্পেন, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য থেকে শুরু করে প্রায় সবদেশেই এই মহামারি নিয়ন্ত্রণে ‘লকডাউন’ অর্থাৎ সবকিছু বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

ইউরোপের প্রায় সবদেশেই বাংলাদেশীরা আছেন। কোথাও কম, কোথাও বেশি। করোনাভাইরাসের মহামারিতে অবরুদ্ধ হয়ে থাকা এই বাংলাদেশীরা সেখানে কেমন আছেন? কীভাবে তাদের দিন কাটছে?

‘জানিনা কবে মুক্তি পাব’?
আইরিন পারভীন খান, ত্রিয়েস্ত, ইতালি

আমরা আছি ইতালির উত্তর প্রান্তে, ত্রিয়েস্ত শহরে। এটি ইতালির ফ্রিউলি ভেনেজিয়ে জুলিয়া প্রদেশের রাজধানী। অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের তীরে সুন্দর একটি শহর। ইতালির সবচেয়ে সুন্দর শহরগুলোর একটি। এখানে গত বিশ বছর ধরে কিছু বাংলাদেশি আছে। প্রায় ১০০ পরিবার এখানে থাকে।

আমরা এখানে একটা গ্রোসারি স্টোর চালাই। কাজেই যখন ইতালিতে করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন শুরু হলো, আমরা চিন্তায় পড়ে গেলাম। আমাদের এই ব্যবসাটার কী হবে সেটা নিয়ে চিন্তা।

ইতালিতে লকডাউন ধাপে ধাপে এসেছে। শুরুতে স্কুল বন্ধ করা হয়েছে। তখন চিন্তা শুরু হলো আমার মেয়েকে নিয়ে। কারণ এবছর আমার মেয়ের ফাইনাল পরীক্ষা দেয়ার কথা। ওরা কীভাবে পড়ালেখা করবে।

স্কুলের পর দেখা গেল বার-রেস্টুরেন্ট সব বন্ধ করে দেয়া হলো। এরপর বলা হলো কেউ কাজেও যেতে পারবে না। কেবলমাত্র সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকানগুলো খোলা থাকবে।

আমাদেরটা যেহেতু গ্রোসারি শপ এবং এথনিক শপ, শুরুতে ভয় ছিল যে এটি খোলা রাখতে পারবো কি না। আমি যোগাযোগ করলাম, যিনি আমাদের কাজকর্ম দেখেন তার সাথে। তিনি জানালেন খোলা রাখতে পারবো।

প্রথমে কথা ছিল লকডাউন হবে ১৫ দিনের জন্য। এখন একটা ব্যবসা যদি ১৫ দিন বন্ধ থাকে, সেটার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে লাগবে তিনমাস।

প্রতিদিন যখন আমাদের গ্রোসারি শপে যাই, তখন দেখি পথে-ঘাটে কোন মানুষ নেই। সাধারণত আমি পায়ে হেঁটে যাই। একদিন বাসে উঠলাম, দেখি পুরো বাসটাই ফাঁকা। এই শহরে আমি আছি গত ১৪ বছর ধরে। এই শহরের পথঘাট, গাছপালা সব কিছুই খুব আপন। খুব অস্বস্তিকর লাগছিল, খুব ভয় লাগছিল সেই সময়টা। খুব খারাপ লাগছিল, পরিচিত মানুষগুলোর জন্য খারাপ লাগছিল।

কেনাকাটা করার জন্য সুপারমার্কেটে যখন যাই, তখন একটা দুরত্ব রেখে দাঁড়াতে হয়। তখন ভয় লাগে। মনে হয় এখান থেকে পালিয়ে যাই। ইতালিতে এখনো পর্যন্ত খাবার দাবার নিয়ে সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু তারপরো কেমন একটা আতঙ্কজনক অবস্থা।

কথা ছিল ৩রা এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন চলবে। কিন্তু আজকে সিদ্ধান্ত এসেছে যে ইস্টার সানডে পর্যন্ত চলবে। জানিনা কবে আমরা এ থেকে মুক্তি পাব।


স্বাধীনতার উপলব্ধি
মিফতাহুল ইসলাম, সাদিয়া চৌধুরী, আফতাব মাহমুদ ও আসিফুর রহমান, জার্মানি

আমরা যে শহরটাতে থাকি, সেটা সাবেক পূর্ব জার্মানির একটা বিশ্ববিদ্যালয় শহর। নাম ইয়েনা। এটি একটি ছোট নিস্তরঙ্গ শহর। অনেক বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রী পড়তে এসেছে এখানে। আমরা চারজন এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী।

এখানে এখন সব বন্ধ। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, ল্যাব বন্ধ। পরিস্থিতি খুবই খারাপ। সারাক্ষণ ঘরে বসে থাকা ছাড়া আর কিছু করার নেই। যখন লকডাউন শুরু হলো, তখন প্রথম কয়েকদিন ভালো লাগতো। ঘরে বসে বসে মুভি দেখতাম। কিন্তু তারপর খুব নিঃসঙ্গ বোধ করতে শুরু করলাম আমরা।

এখন চেষ্টা করছি বাসায় বসে সময়টা কী কাজে লাগানো যায়। কেউ কম্পিউটার কোডিং শেখার চেষ্টা করছি। কেউ ইউটিউব দেখে বাংলাদেশি রান্না শেখার চেষ্টা করছি। লকডাউনের পর আমরা বুঝতে পারছি ফ্রিডম বা স্বাধীনতা বিষয়টা কত জরুরি।

কদিন আগে এখানে ফায়ার অ্যালার্ম বেজে উঠেছিল। তখন সবাইকে দৌড়ে বেরুতে হয়েছে। লোকজনকে দেখে মনে হলো ফায়ার অ্যালার্ম বাজায় তারা দারুণ খুশি। একটু ঘরে বাইরে এসে মুক্ত বাতাসে শ্বাস নেয়ার একটা সুযোগ তো পাওয়া গেল।

এখানে এখন স্প্রিং শুরু হয়েছে। দিন বড় হচ্ছে। শীত কমছে। ইউরোপে মানুষ এরকম সময়ের অপেক্ষায় থাকে সারাবছর। কিন্তু বসন্ত আসলেও আমরা বাইরে যেতে পারছি না।

আমাদের মধ্যে একজন সাইক্লিং পছন্দ করে। দলবেঁধে আমরা সাইকেলে বেড়াতে যাই। কিন্তু এবার সব বন্ধ। ফুটবল, বন্ধুদের আড্ডা- সব বন্ধ।

আগে দেশে পরিবার-আত্মীয়-বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে কথা হতো খুব কম। কিন্তু এখন হাতে অফুরন্ত সময়, সারাদিন কথা হয়।

দেশ থেকে আমাদের মা-বাবারা কান্নাকাটি করেন। বলেন দেশে চলে আয়। কিন্তু আমাদের আসলে বাংলাদেশের জন্যই বেশি চিন্তা হয়। এই করোনাভাইরাসের মোকাবেলায় বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত, সেটা নিয়ে বেশি চিন্তা হয়।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
ইরানে হামলা : ইস্ফাহান কেন টার্গেট? মাত্র ২ বলে শেষ পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টি জেলে কেজরিওয়ালকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দলের ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা তোকে যদি এরপর হলে দেখি তাহলে খবর আছে, হুমকি ছাত্রলীগ নেতার বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা করা হয়নি : প্রধানমন্ত্রী দাওয়াতী ময়দানে সকল নেতাদের ভূমিকা রাখতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেল শ্রমিকদের মাঝে ইসলামের আদর্শের আহ্বান পৌঁছাতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে বিমানবন্দরের টার্মিনালে ঢুকে গেলো বাস, ইঞ্জিনিয়ার নিহত

সকল