২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

যে গির্জার মাধ্যমে ফ্রান্স-জার্মানিতে ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতি করোনা

- সংগৃহীত

ফ্রান্সের একটি গির্জার মধ্যে একজন ধর্মযাজক মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলছেন, হে প্রভু! আজ আমরা একটি উৎসবের জন্য এখানে একত্রিত হয়েছি।’ এরপর উপস্থিত সকলের উদ্দেশে বললেন,‘আপনারা সকলেই কি আনন্দিত?’ সম্বস্বরে সবাই বলে উঠল, ‘হ্যা’।

ধর্মীয় উৎসব উদযাপন উপলক্ষে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ফ্রান্সের ক্রিশ্চিয়ান ওপেন ডোর গির্জায় সমবেত শত শত মানুষ এভাবেই উৎসবে সাড়া দিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। প্রতি বছরের মতো এই ধর্মীয় সমাবেশে ফ্রান্সের মূল ভূখন্ডে জার্মানি ও সুইজারল্যান্ড থেকেও এসেছিল লক্ষাধিক মানুষ। পাচ দিন ধরে চলে এই ধর্মীয় অনুষ্ঠান। কিন্তু আদতে ওই উপাসনালয়-ই হয়ে উঠেছে দেশটিতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার মূল ক্ষেত্র। কারণ সেদিন ওই গির্জায় উপস্থিত কোনো এক ব্যক্তি নিজ শরীরে বয়ে এনেছিলেন ওই প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। এমনই তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ফ্রান্সের স্থানীয় সরকার জানিয়েছে, ওই চার্চে সেদিন ধর্মীয় উৎসবে যোগ দেওয়া প্রায় ২ হাজার ৫০০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। সকলের অজান্তেই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে পশ্চিম আফ্রিকার রাজ্য বুরকিনা ফাসো, ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপ কর্সিকা, লাতিন আমেরিকার গায়ানা, সুইজারল্যান্ডসহ একটি ফরাসি পারমাণবিক বিদুৎকেন্দ্রে।

সংক্রমণ ছড়িয়ে যাওয়ার এক সপ্তাহ পর জার্মানি ফ্রান্সের সাথে তার সীমানা বন্ধ করে দিয়েছে। ভাইরাস সংক্রমণ রোধে গত ২৫ বছরে এই প্রথম দুই দেশ তাদের অবাধ চলাফেরায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করলো।

এই গির্জায় গিয়েছিলেন এমন একজন প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন গত ২৯ ফেব্রুয়ারি। এরপরই দেশটির জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এই গির্জায় আগত ও তাদের সংস্পর্শে আসা সবার অনুসন্ধান শুরু করে। কিন্তু তদন্তকারীরা বলছেন, অনেক দেরি হয়ে গেছে।

ফ্রান্সের পূর্বাঞ্চলের জাতীয় জনস্বাস্থ্য সংস্থার মহামারি বিশেষজ্ঞ মাইকেল ভার্নি বলেন, গির্জায় শিশুদের দেখাশোনা যারা করেন, ইতোমধ্যে তাদের অনেকেই করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা হেরে গিয়েছি। আমরা বুঝতে পারছি, আমাদের সামনে এখন করোনার টাইম বোমা অপেক্ষা করছে।

গত ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে গির্জার ড্রামার এলি উইদমার অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি ওই ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করতে গির্জায় গিয়েছিলেন। তার স্ত্রী, তিন সন্তান ও শাশুড়িও অসুস্থ হন। এরপর গত ৩ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, ফ্রান্সে মোট ১৯১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ ঘটনার পর গির্জা কর্তৃপক্ষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে গির্জায় আগতদের সবাইকে চিকিৎসকের নিকট যাওয়ার পরামর্শ দেন।

এরপর উইদমার ফ্রান্সের জরুরি নম্বর ১৫ ডায়াল করেন চিকিৎসা সেবা নেয়ার জন্য। চিকিৎসকরা তাকে করোনা রোগী হিসেবে চিকিৎসা দেন ও পরিবার-সহ কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেন। তিনদিনের প্রচন্ড জ্বর ও মাথা ব্যথার সঙ্গে মুখের স্বাদ হারিয়ে ফেলেন উইদমার। তবে এটা নিয়ে বিশেষ কোনো দুশ্চিন্তা ছিল না তার। উইদমার সুস্থ হয়ে উঠলেও তার পরিবারের সদস্যরা এখনও আইসোলেশনে আছেন।

গির্জার প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্যদের মাঝেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। তবে তাদের মধ্যে এক ডজনের বেশি সদস্য ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। জার্মান কর্মকর্তারাও ক্রমবর্ধমান এই অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছিলেন। প্রত্যেকদিন গড়ে ৪৫ হাজার ফরাসি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে জার্মানিতে আসেন। তারা জার্মানিতে পোরশে ও মার্সিডিজ-বেঞ্জের কারখানায় কাজ করেন। এই কারখানার কিছু শ্রমিক মুলহাউসের সেই গির্জায় গিয়েছিলেন। পরে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন করোনায় সংক্রমিত হন। মুলহাউসের কাছে ফ্রান্সের পারমাণবিক পাওয়ার প্ল্যান্টের একজন কমী গির্জার সমাবেশে গিয়েছিলেন। পরে তিনিও করোনা পজিটিভ শনাক্ত হন। যার ফলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জার্মান কর্তৃপক্ষ ফ্রান্সের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়।

এদিকে গির্জার উপাসনা শেষে ভূমধ্যসাগরীয় কর্সিকা দ্বীপের বাসিন্দা অ্যান্টইনিত্তে বাসায় ফেরেন। ফেরার ৯দিন পর মুলহাউস কর্তৃপক্ষ তাকে টেলিফোনে গির্জা থেকে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে বলে জানায়। সেই রাতেই তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই দ্বীপের বাসিন্দা হিসেবে অ্যান্টইনিত্তে প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হন। তখন থেকেই আইসোলেশনে আছেন তিনি। ২৭ মার্চ পর্যন্ত কর্সিকা দ্বীপে ২৬৩ জন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। যাদের ২১ জন মারা গেছেন।

রয়টার্সের সূত্র মতে, গত ২০ মার্চ ফ্রান্সে করোনা রোগীর সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে গেছে। যাদের অধিকাংশই ওই গির্জার মুলহাউসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

স্থানীয় জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ভার্নি বলেন, আক্রান্তদের বেশিরভাগের সঙ্গে মুলহাউসের গির্জার যোগসূত্র রয়েছে।

উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত ফ্রান্সে করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে। আর মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ৬০৬। কিন্তু এখনো উত্তর ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মতো ফ্রান্সের সরকারও বড় জনসমাবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। সূত্র : রয়টার্স


আরো সংবাদ



premium cement
আমরা একটা পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি : মেজর হাফিজ তরুণীর লাশ উদ্ধারের পর প্রেমিকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা ভিয়েনায় মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রদূতদের ইফতারে ইসলামিক রিলিজিয়াস অথোরিটি আমন্ত্রিত এবার বাজারে এলো শাওমির তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি সকল কাজের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি থাকতে হবে : মাওলানা হালিম বিএনপি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি করে : ড. মঈন খান সাজেকে পাহাড়ি খাদে পড়ে মাহিন্দ্রচালক নিহত জমি রেজিস্ট্রি করে না দেয়ায় বাবার কবরে শুয়ে ছেলের প্রতিবাদ ইসরাইলি হামলায় গাজায় আরো ৭১ জন নিহত পানছড়ি উপজেলায় চলমান বাজার বয়কট স্থগিত ঘোষণা আওয়ামী লীগ দেশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করেছে : দুদু

সকল