২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইতালির পর স্পেনে মৃত্যুর মিছিল

-

করোনাভাইরাসে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইতালির পর এবার স্পেনে শুরু হয়েছে মৃত্যুর মিছিল।

আন্তর্জাতিক জরিপ ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যমতে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত একদিনে ইতালিতে মৃত্যুর নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। শনিবার দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে ভাইরাসটির সংক্রমণ শুরুর পর একদিনে এটাই সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। আর এ ভাইরাসে মৃত্যুর তালিকায় দেশটির অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়।

তৃতীয় স্থানে রয়েছে স্পেন। এক দিনে ৩৯৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে দেশটি। আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে স্পেনেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ৩৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ৭২০ জন। গত একদিন আগেও দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ছিল এক হাজার ৩২৬ জন।

দেশটির কয়েকটি গণমাধ্যমের দেয়া খবরের বরাত দিয়ে আলজাজিরা আরো জানায়, একদিন আগে গত শনিবার পর্যন্ত স্পেনে মোট ২৪ হাজার ৯২৬ জন আক্রান্ত ছিল এবং একদিন পরেই রোববার এ সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ালো ২৮ হাজার ৫৭২ জনে।

চতুর্থ ইরান। সেখানে মারা গেছে এক হাজার ৬৮৫ জন। দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছে ২১ হাজার ৬৩৮ জন।
যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত হয়েছে ২৬ হাজার ৯০৮ জন মানুষ। মৃত্যু হয়েছে ৩৪৮ জনের। এমন পরিস্থিতিতে মার্কিনিদের ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের নেতৃত্ব গঠিত হোয়াইট হাউস করোনা ভাইরাস টাস্ক ফোর্সের এক কর্মী ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এরপর মাইক পেন্স ও তার পরিবারের করোনা ভাইরাস এর জন্য পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

যুক্তরাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। দেশটির স্বাস্থ্য দফতরের হিসাব অনুযায়ী সেখানে এখন মোট করোনাআক্রান্ত রোগীর সংখ্যা পাঁচ হাজার ১৮ জন। পরীক্ষা করা হয়েছে ৭৩ হাজার মানুষের ওপর। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজারেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। আর মারা গেছেন ২৪০ জন।

প্রতিবেশী দেশ ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬০ জন। এর মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচজন। আর পাকিস্তানে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৩০ জন। তার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের।

ইতালিতে প্রতিদিনই হচ্ছে মৃত্যুর নতুন রেকর্ড
ইতালিতে প্রায় প্রতিদিন মৃতের সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় বাড়ছে। গত শনিবার দেশটিতে ভাইরাসটির সংক্রমণে মারা গেছে ৭৯৩ জন। এর আগের দিন শুক্রবার মারা গেছে ৬২৭ জন, বৃহস্পতিবার ৪২৭ জন, বুধবার ৪৭৫ জন, মঙ্গলবার ৩৪৫ জন, সোমবার ৩৪৯ জন, রোববার মারা গেছে ৩৬৮ জন।

শনিবার একদিনে রেকর্ড সংখ্যক মৃত্যুর পর সে দেশে নিয়ন্ত্রণ আরো কঠোর করা হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, দেশটির সবচেয়ে আক্রান্ত এলাকা লমবার্দিতে নতুন করে আরো কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। গত ২১ ফেব্রুয়ারি ইতালিতে প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার পর থেকে গত এক মাসে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা চার হাজার ৮২৫ জনে দাঁড়িয়েছে, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। উত্তরাঞ্চলীয় লমবার্দিতেই প্রাণ গেছে তিন হাজার ৯৫ জনের। ৮ মার্চ থেকে লমবার্দি লকডাউন অবস্থায় আছে। শনিবার দেশটিতে ভাইরাসটির সংক্রমণে ৭৯৩ জনের মৃত্যুর পর রাতে ঘোষিত পদক্ষেপে ‘জরুরি’ সরবরাহ ব্যবস্থা ছাড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

নানা পদক্ষেপেও কাজ হচ্ছে না ফ্রান্সে 
সমগ্র ইউরোপের মতো ফ্রান্স সরকার করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। তবুও লাগামহীনভাবে বেড়েই চলছে দেশটিতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে এক হাজার ৮৪৭ জন আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৪৫৯ জনে। নতুন করে মৃত্যু হয়েছে ১১২ জনের। ফ্রান্সে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা ৫৬২ জন। এখন পর্যন্ত পাঁচ হাজারের মতো ফরাসি পুলিশ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। শুধু প্যারিসেই আক্রান্ত হয়েছেন ৬৫০ পুলিশ সদস্য। এরই মধ্যে দেশটির সাধারণ নাগরিকদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ততম নগরী প্যারিস এখন জনমানবহীন, নিস্তব্ধ। ফরাসি সরকারের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, যাদেরকে ২৫-৩০ শতাংশ ফি দিয়ে ডাক্তার দেখাতে হতো গতকাল থেকে তারা ফ্রিতে টেলিফোনে ভিডিও কলের মাধ্যমে চিকিৎসা নিতে পারবেন। প্রেসক্রিপশন দেয়া হবে ই-মেইলের মাধ্যমে। এরই মধ্যে করোনা প্রতিরোধে করা বিভিন্ন আইন অমান্য করায় ৩৮ হাজার ৯৯৪ জনকে জরিমানা করেছে ফ্রান্স। সাধারণ মানুষ ঘরে বসে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।

করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা চীনে। সেখানে মোট ৮১ হাজার ৫৪ জন ব্যক্তি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে তিন হাজার ২৬১ জনের। তবে মৃতের হিসেবে চীনকেও ছাড়িয়ে গেছে ইতালি। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা চার হাজার ৮২৫, আর আক্রান্ত হয়েছে ৫৩ হাজার ৫৭৮ জন।


আরো সংবাদ



premium cement