১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

তরুণরা আবার ঝুঁকছেন রেকর্ড প্লেয়ারে

তরুণরা আবার ঝুঁকছেন রেকর্ড প্লেয়ারে -

আজকাল সবাই ব্যস্ত। কমে এসেছে বই পড়ার সময়। এখন কেউ কেউ একাডেমিক বইও গুগল রিডের মাধ্যমে পথে বসে কিংবা অন্য কাজ করতে করতে শুনে থাকেন। দৈনন্দিন ব্যস্ততায় এমনকি একসময়ের বইপড়–য়ারাও এখন অডিওবুক শুনেই বই পড়ার কাজ সারেন। যারা একটু ফুরসত পেলে টিভি দেখতে বসতেন, তাদের মধ্যেও রেকর্ড প্লেয়ারের চাহিদা বাড়ছে।
সত্যজিৎ রায়ের ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ সিনেমায় ঘোষাল বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে উঠতে থাকা ফেলুদা প্রশ্ন করেন, ‘গ্রামোফোন বাজছে বলে মনে হচ্ছে?’ উমানাথ ঘোষাল বলেন, ‘আমার ঠাকুরদা, হি ইজ এইটি ফোর। এককালে গান বাজনার খুব শখ ছিল ওর। এখন একটি চাকরের কাজই হচ্ছে গ্রামোফোনে চাবি দেয়া আর রেকর্ড চাপানো।’ ১৯৭৯ সালে মুক্তি পায় সিনেমাটি, কিন্তু তার ৪৫ বছর পরও অনেকের শখ আছে এ রেকর্ড বাজানোর।
গ্রামোফোনে যে ডিস্ক চাপানো হয় তার ইংরেজি নাম ভিনিল। ভিনিল রেকর্ড বলেও এগুলো পরিচিত। এককালে ডিস্কগুলো বাজত গ্রামোফোনে একটি পিনের সাহায্যে। কিছুদিন পর ডিস্ক নষ্ট হয়ে যেত, নষ্ট হতো পিনও। কিন্তু তখন ক্যাসেটও আসেনি, মেমোরি কার্ড তো দূরের কথা। ভিনিলই ছিল একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু এখন নানা প্রকার মাধ্যম থাকলেও ভিনিল খোঁজেন অনেকে। তারা মূলত শখেই খোঁজেন এগুলো। উমানাথ ঘোষালের ঠাকুরদার মতো এখনো অনেকের শখ আছে পুরনো ধারার মতো করে গান-বাজনা শোনার। সেই সাথে নস্টালজিয়া ও পুরনো দিনের আবহ ধরে রাখতে শখের বসে সংগ্রহের বাতিক থেকে ভিনিল রাখা হয়। সে কারণেই চাহিদা আছে ভিনিল প্লেয়ারেরও।
সম্প্রতি গণমাধ্যম ভ্যারাইটি একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রেকর্ড প্লেয়ারের চাহিদা বাড়ছে। তাদের মতে, ব্লুটুথের এ যুগে কোনো কোনো মানুষ এখনো পুরনো পদ্ধতিতে সঙ্গীত শুনতে পছন্দ করেন। তাদের জন্য বিভিন্ন কোম্পানি তৈরি করে থাকে রেকর্ড প্লেয়ার। সংখ্যায় এমন মানুষ বেশি নয় এবং তারা শখের বসেই রেকর্ড প্লেয়ার কিনে থাকে। রেকর্ড প্লেয়ার আবার কেন জনপ্রিয় হয়েছে, তা নিয়ে লিখেছে ফ্লুয়েন্স। তাদের মতে, এটি একটি বিশেষ অনুভূতি দেয় সঙ্গীত শোনার ক্ষেত্রে। তা ছাড়া রেকর্ড প্লেয়ার মার্জিত রুচির পরিচয় দেয়। সেই সাথে নস্টালজিয়াকে তুলে আনে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটি হয়ে উঠতে পারে স্ট্যাটাস সিম্বলও।
রেকর্ড প্লেয়ার বানিয়ে থাকে বিভিন্ন কোম্পানি। সম্প্রতি অ্যামাজন বেশ কিছু রেকর্ড প্লেয়ারে ছাড় দিচ্ছে। মূলত তারা ক্রেতাদের চাহিদা দেখেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অ্যামাজনের এ বিক্রিবাট্টার বরাত দিয়েই ভ্যারাইটি বলছে এর জনপ্রিয়তা গত দুই বছরের তুলনায় এ বছর বেশি দেখা যাচ্ছে। তবে কয়েকটি ব্র্যান্ড সে ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায়।
২০২৪ সালে এসে রেকর্ড প্লেয়ার পাওয়া যাচ্ছে ৫০ ডলারেরও কম মূল্যে। এদের মধ্যে নাম করা যায় ভিকট্রোলার। কোম্পানিটি সবচেয়ে ভালো রেকর্ড প্লেয়ার নির্মাতাদের মধ্যে অন্যতম। তবে তারা এনেছে নতুন ধারা। রেকর্ড প্লেয়ারও এখন শোনা যাবে ব্লুটুথে। ভিকট্রোলার স্যুটকেস রেকর্ড প্লেয়ারটিতে ভিনিল ঘুরতে পারে তিনটি ভিন্ন গতিতে। ফলে শ্রোতা পাবেন ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা। মূল্য বর্তমানে ৪৫ ডলারের কিছু কম।
ক্রসলির ভিন্টেড পোর্টেবল ভিনিল প্লেয়ারটিতেও ক্রেতাদের আগ্রহ দেখেছে অ্যামাজন। এটিতে এলপি রেকর্ড বাজানো যাবে এবং থাকছে আরসিএ অডিও আউটপুট (বিশেষ ধরনের প্লাগ, যার মাধ্যমে সাউন্ড বক্স যুক্ত করা যায়)। এটিও অনেকটা ব্রিফকেস সেট আপের এবং এর মাধ্যমে সহজে বহনযোগ্য করে তোলা হয়েছে। মূল্য বর্তমানে ৬৮ ডলার। ক্রসলিরই ভিন্টেজ ক্রুসার প্লাসে থাকছে তিন গতিতে চালানোর সুবিধা, যার মূল্য পড়ছে ৬৩ ডলারের মতো।
ক্রেতারা মূলত বহনযোগ্য রেকর্ড প্লেয়ারই পছন্দ করেন। সে কারণে রেট্রোলাইফ ও ইউড্রিমারও বহনযোগ্য রেকর্ড প্লেয়ার তৈরি করেছে। এদের প্রতিটিতেই আছে নিজস্ব সাউন্ড বক্স। সেটি কলের গানের মতো নয়, আধুনিক ম্যাগনেটিক সাউন্ডবক্স। ৬০ থেকে ৮০ ডলার মূল্যে পাওয়া যায় প্লেয়ারগুলো। এ ছাড়া ভিকট্রোলা তৈরি করে ক্ল্যাসিক ধাঁচের রেকর্ড প্লেয়ার। এ রেকর্ড প্লেয়ারগুলো কারো কারো বাড়ির শোভা বর্ধন করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই রেকর্ড প্লেয়ারে গান শোনার ভিডিও পোস্ট করে থাকেন। নতুন প্লেয়ারগুলো হালকা, তবে রেকর্ড চালাতে আগের মতো পিন ব্যবহার করতে হয় না বলে ব্যোমকেশ এ সময়ে থাকলে ‘থের কাঁটা’ লিখতে পারতেন না শরদিন্দু।


আরো সংবাদ



premium cement