২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফোবানার মঞ্চে পরী বেশে মৌ

ফোবানার মঞ্চে পরী বেশে মৌ -

দুই দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের মডেলিংয়ে বড় ক্যানভাসের নাম সাদিয়া ইসলাম মৌ। দেশ-বিদেশের নানা পণ্যের সাথে এই নামটি জড়িয়ে আছে বেশ সুনামের সাথে। তাই দেশের যেকোনো বড় অনুষ্ঠানে তার উপস্থিতি অন্যরকম সাড়া জাগায়। এই ধারাবাহিকতা দেখে গেছে সম্প্রতি শেষ হওয়া ৩৫তম ফোবানার শেষ দিনেও। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির শহরতলি মেরিল্যান্ডের গেইলর্ড হোটেলের পটোম্যাক কনভেনশন সেন্টারে তিনি হাজির হয়েছিলেন পরীর বেশে। আরব্য উপন্যাসের নায়িকার মতো ওই দিন তার পরনে ছিল সাদা রঙের গাউন। ঢাকায় তৈরি ওই পোশাকের দাম ছিল তিন লাখ টাকা।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে এদিন জানানো হয়েছিল, মৌয়ের এই কালেকশনটি মঞ্চের সামনে বসে থাকা যে কেউ নিতে পারেন। তবে এর জন্য গুনতে হবে সাড়ে তিন হাজার ডলার। শেষ পর্যন্ত মৌর ওই কালেকশনটি কে পেয়েছেন তা জানা না গেলেও মঞ্চের সামনে উপস্থিত বেশ কয়েকজন এটি নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। অনুষ্ঠানের পর এ বিষয়ে সাদিয়া ইসলাম মৌ জানিয়েছেন, ‘আমার ওই কালেকশনটি মূলত বিক্রির উদ্দেশ্যেই নিয়ে আসা হয়েছিল। এটি খুবই কমফোর্টেবল ও গর্জিয়াস একটি কালেকশন।’
ফোবানার আয়োজনে অংশ নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এই একটি অনুষ্ঠানের কারণে একসাথে হয়। এমনটি একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারা সত্যিই গর্বের। এখানে এসে বাংলাদেশের অনেক মানুষের সাথে কথা হয়েছে। তাদের অনেকে ১০-১৫ বছর ধরে দেশে যেতে পারেননি। তবে প্রতি বছর ফোবানার অনুষ্ঠানে মিলিত হন। সবারই উদ্দেশ্য থাকে বিদেশে থেকে দেশের উৎসবের স্বাদ নেয়ার। এমন একটি অনুষ্ঠানের অংশ হবে পেরে সত্যিই অনেক ভালো লাগছে।’
ওই দিন মৌ মঞ্চে উঠার আগে তার কোরিওগ্রাফিতে ওয়াশিংটন ডিসির বাংলা স্কুলের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে একটি ফ্যাশন শো অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যেখানে বাংলাদেশের নানা সময়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে মঞ্চে হেঁটে ছিলেন তারা। ওই ফ্যাশন শো সম্পর্কে মৌ বলেন, ‘যারা প্রবাসে থাকেন, বিশেষ করে যাদের শিক্ষাজীবন এখান থেকে শুরু হয়েছে তাদের বাংলাদেশ ও বাঙালির ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার সুযোগ খুব কম। এই অনুষ্ঠানে যতটুকু সুযোগ পাওয়া গেছে আমি চেষ্টা করেছি বাংলাদেশের পোশাক ও ঐতিহ্য সম্পর্কে এখানকার ছেলেমেয়েদের পরিচিত করাতে।’
নিজের অন্য ব্যস্ততা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এখন কাজের পরিমাণ আগের থেকে একটু বাড়িয়েছি। কারণ এখন ভিন্নধর্মী কাজের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। যারা আমার সাথে একবার করে কাজ করেছে, তারা আমার রুচি ও পছন্দ সম্পর্কে জানে। আর নাচের অনুষ্ঠান সবসময় করি, কারণ ওটা আমি শিখেছি।’ ছেলেমেয়েদের কেউ অভিনয়ের সাথে সম্পৃক্ত হবে কি না জানতে চাইলে মৌ বলেন, দুই সন্তানের কেউই এসবের মধ্যে নেই। তারা তাদের বাবা-মায়ের কাজটাকে ভীষণ রেসপেক্ট করে। আমার মেয়ে যেমন নাচ শিখেছে, এখন পড়াশোনার চাপে আর করতে চায় না। ছেলে তো কিছুর মধ্যেই নেই। সে ফুটবল নিয়ে মেতে থাকে। স্বপ্ন দেখে, একদিন অনেক বড় ফুটবলার হবে। ওরা অভিনেতা, নৃত্যশিল্পী বা মডেল কিছুই হতে চায় না। আমিও যে ছোটবেলা থেকে এখন যা, তা কিন্তু হতে চাইনি। এটা আমার মায়ের স্বপ্ন। আজো মায়ের স্বপ্ন পূরণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’ নিজের ছোটবেলার ইচ্ছের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘তিন বছর বয়সে যখন নাচ শিখেছি তখন আমার হ্যাঁ-না বলার সুযোগই হয়নি। মডেলিং করেছি বড় দুলাভাইয়ের কারণে। আমার এসবের কোনো কিছুর প্ল্যান না। আমি সবসময় বিয়ে করে বাচ্চা-কাচ্চার মা হয়ে সংসারি হতে চেয়েছি। খালি মনে করতাম, আমার বরের আদরের বউ হবো। আমাকে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর বাইরে নিয়ে যাবে। কারণ, আমার মাকে দেখতাম, আমার মা সবসময় বাবার ভীষণ আদরের ছিলেন।’ সর্বশেষ তিনি করোনার বিষয়টিকে সামনে এনে বলেন, ‘নতুন করে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। আমাদের সবাইকে এখন আরো সতর্কভাবে চলাফেরা করতে হবে। গত বছর করোনা শুরুর আগে আমরা না আসলে র্যাট রেসে ছিলাম। আমি এও দেখেছি, কাউকে খাবার দিলে, খেয়ে দেখার আগে ছবি তোলে। কোথাও ঘুরতে গেলে সৌন্দর্য দেখার আগে ছবি তোলে। করোনা আমাদের থামিয়ে দিয়েছে। সবসময় অনেককে বলেছি, তোরা যে দৌড়াচ্ছিস, পেছনে তাকিয়ে দেখ না, তোদের কেউ দৌড়াতে বলেছে কি না। কিসের জন্য দৌড়াচ্ছিস? আরেকটি বিষয় ছিল, সবাই যেকোনো কিছু উপভোগ করার চেয়ে মানুষকে দেখানোয় ব্যস্ত। এই একটা ট্রেন্ড আমাদের দেশে চলছে। করোনা সব কিছুকে থামিয়ে দিয়েছে। এটি দরকারও ছিল। আমাদের ভাবার সময় দিয়েছে।’


আরো সংবাদ



premium cement