২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

উদার হলে সাম্প্রদায়িক হানাহানি হবে না : অর্ণব

-

শায়ান চৌধুরী অর্ণব। বাংলা গানের জনপ্রিয় এক নাম। পড়াশোনা করেছেন কলকাতার শান্তি নিকেতনে। ওখানেই থাকা হয় বেশি। তবে দেশের গান ও সিনেমা নিয়ে তার ভাবনা কিন্তু কম নয়। সেই সূত্রেই ‘নোনা জলের কাব্য’ সিনেমায় সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে যুক্ত হওয়া। এই সিনেমায় কাজের অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান ব্যস্ততা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন নয়া দিগন্তের সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির

প্রশ্ন : ইদানীং আপনাকে গানে খুব কম পাওয়া যায় এর কারণ কী?
অর্ণব : গানে খুব কম পাওয়া যায় মানে নতুন গান আসছে না এটাই তো বলতে চাচ্ছেন। আসল কথা হলো, গান প্রকাশ হয়েছে কম। তবে আমি কিন্তু গানের সাথেই ছিলাম। মাঝখানে করোনাভাইরাস যেভাবে ঝাঁপটে ধরে ছিল তাতে স্বভাবিকতা নষ্ট হয়েছে সবার। প্রতিনিয়ত আতঙ্কের মধ্যে থেকে কেউ নতুন গান শুনতে চায় না। তবে আমি আমার মতো কাজ করে গেছি। আগামী বছর থেকে এর দৃশ্যমান কিছু অগ্রগতি দেখতে পাবেন।
প্রশ্ন : আপনার সঙ্গীত ক্যারিয়ার তো ব্যান্ড দল গঠনের মাধ্যমে শুরু। পরে রবীন্দ্রসঙ্গীতও গেয়েছেন। এখন সিনেমায়ও কাজ করছেন। এই ভেরিয়েশন কী উপভোগ করেন?
অর্ণব : এটাকে ঠিক উপভোগ বলা যাবে না। তবে আনন্দ পাই। একটা বিষয় কি জানেন, সব গানের শিখর কিন্তু সারেগামার মধ্যে আছে। যখন গান শিখতে যাই তখন সব গানই গাইতে হতো। তারপর যে যেখানে ভালো করেছে সেখানে বেশি মনোযোগী হয়েছে। আমি যখন যে গানই করি আমার মতো কিছু বার্তা সেখানে দেয়ার চেষ্টা করি। আর বরীন্দ্রসঙ্গীত তো ছোট বেলা থেকে শুনে বড় হয়েছি, নিজের কাছে ভালো লাগে, নিজের মনে হয় গানগুলোকে, অনেক স্মৃতিও জড়িয়ে আছে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সাথে। বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য থেকে এটি করছি না আমি।
প্রশ্ন : শান্তি নিকেতনে তো আপনি দীর্ঘদিন সেখানকার বিশেষ কোনো স্মৃতি কি শেয়ার করা যায় ?
অর্ণব : আমার কৈশোরের অনেক স্মৃতি শান্তি নিকেতনের সাথে মিশে আছে। সেখানকার আলো-বাতাসে। প্রতিদিন সকালের প্রার্থনা, রাতের আয়োজন, ঋতুভিত্তিক নানা অনুষ্ঠান, সাহিত্যসভা, নানা পর্বে নানা গান গাওয়া হতো সেখানে। আর স্মৃতি বলতে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় বা রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে বৈতালিক গান গাওয়া, প্রার্থনার সময় সবাই লাইন ধরে দাঁড়িয়ে প্রার্থনাসঙ্গীত গাওয়ার স্মৃতিগুলো সবসময় মনে পড়ে। এসব স্মৃতিকে আলাদা করে উল্লেখ করতে পারি না। তবে সবসময়ই এর আমেজটা মনের মধ্যে থাকে। সেই অনুপ্রেরণা থেকেই রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়া।
প্রশ্ন : ‘নোনা জলের কাব্য’ ছবিতে সঙ্গীতের পরিচালনার অভিজ্ঞতা কেমন?
অর্ণব : অভিজ্ঞতা খুবই ভালো। আপনারা তো জানেন আমি খুব বেছে বেছে কাজ করতে পছন্দ করি। অল্প কাজ কিন্তু মার্জিত। এই সিনেমার বিষয়বস্তুটাও আমাকে খুব টেনেছে। তবে এখানে গান করার খুব একটা জায়গা ছিল না। সিনেমার নির্মাণশৈলী ভালো হলে কাজের জায়গা খুব কম থাকে। এখানে সাউন্ড নিয়ে অনেক ভালো কাজ হয়েছে। আমি ও গুণী অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু ভাই দু’টি গানে কণ্ঠ দিয়েছি।
প্রশ্ন : গানে কণ্ঠ দেয়ার ক্ষেত্রে কোন বিষয়টি প্রাধান্য পায়?
অর্ণব : অবশ্যই গানের কথাকে। গানের কথা মার্জিত হলে শিল্পী তার মন উজাড় করে তার কণ্ঠসুধা ঢেলে দেন। সেই গানের সাথে সঠিক বাদ্যযন্ত্র প্রয়োগ এবং নির্দেশনা। কেউ যদি আমার জন্য কাজের প্রস্তাব নিয়ে আসেন আমি তাদের বিনয়ের সাথে বলি, আপনারা কি অর্ণবকেই চাচ্ছেন। নাকি তারকা অর্ণবকে চাচ্ছেন। যারা আমার কাজকে মূল্যায়ন করতে জানেন তাদের সাথেই কাজ করি। যেখানেই কাজ করি না কেন আমি তাদের বন্ধু হয়ে যাই। এতে ভালো কাজের পরিবেশ তৈরি হয়ে যায়।
প্রশ্ন : সামনে গান নিয়ে কী পরিকল্পনা?
অর্ণব : শান্তিনিকেতনে শিশুদের নিয়ে কাজ করার প্রস্তাব দুই বছর আগেই দেয়া হয়েছে। সেটা নিয়েই এগোচ্ছি। এ ছাড়া আগামী বছরের শুরুতে নতুন একটি অ্যালবাম করার চিন্তা আছে। অ্যালবামটি হবে আমার সলো। তবে বিভিন্ন কাজে নতুনদের সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করবো।
প্রশ্ন : বর্তমানের সাম্প্রদায়িককতার বিষয়টি নিয়ে দেশ এখন বেশ উতপ্ত। এখানে শিল্পীরা সোচ্ছার হচ্ছেন না কেন?
অর্ণব : কেন সবাই তো যার যার জায়গা থেকে প্রতিবাদ করছেন। আমরা শিল্পী সমাজ সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। আরেকটা বিষয় হচ্ছে শিল্পীদের প্রতিবাদ কিন্তু সাধারণ মানুষের মতো হয় না। কাজের মাধ্যমে হয় শিল্পীদের প্রতিবাদ। আমাদের সবারই উচিত প্রতিপক্ষের প্রতি সহনশীল হওয়া। সবাই নিজের জায়গা থেকে উদার হলে সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে কোনো হানাহানি হবে না।
প্রশ্ন : আপনাকে অনুষ্ঠানে খুব কম দেখা যায়। এর কারণ কী?
অর্ণব : সত্যি বলতে আমি ব্যক্তিস্বাধীনতা খুব পছন্দ করি। মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করি। নিজেকে একই গণ্ডির ভেতর বেঁধে রাখতে চাই না। আমি সব সময় চাই নিজের মতো করে সামনে এগোতে। কারো শেখানো বুলি নিয়ে কাজ করতে খুব একটা উৎসহা পাই না। তাই একটু কম দেখা যায় হয়তো।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল