২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সিনেমার অভাব নেই, তবুও আমদানি!

-

করোনাভাইরাসের কারণে গত দুই বছর ধরে সিনেমার টালমাটাল অবস্থা। নিয়মিত সিনেমা নির্মাণ না হওয়ায় অনেক ব্যস্ত তারকারাও এখন অধিকাংশ সময় থাকেন বেকার। ইতঃপূর্বে যেসব সিনেমায় তারা অভিনয় করেছেন সেগুলোও কবে নাগাদ মুক্তি পাবে তার সঠিক তারিখ এখনো ঠিক করা হয়নি। এদিকে চলতি মাসের ১২ তারিখ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পর সব কিছুই স্বাভাবিক চলছে। এ অবস্থায় সিনেমা হল কবে থেকে পূর্বের অবস্থায় ফিরবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ৫০টির বেশি সিনেমা এখন মুক্তির জন্য প্রস্তুত। কিন্তু হল মালিকরা দেশের সিনেমা চালানোর ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী নন। তারা চান বিদেশী সিনেমা আমদানি করতে। তাদের যুক্তি, এককভাবে দেশীয় সিনেমা চালালে খরচের টাকাই উঠবে না। তাই করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিদেশী সিনেমা আমদানির বিকল্প নেই।
বিষয়টি নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদের সাথে বৈঠকও করেছে সিনেমা হল মালিকদের একটি দল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশ সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু। তিনি বলেন, বাস্তবতা বিবেচনায় এখন বিদেশী সিনেমা আমদানি প্রয়োজন। ২০২০ সালের ১৬ অক্টোবর সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কিছু প্রেক্ষাগৃহ খুলে দেয়া হলেও দর্শক যাচ্ছে না। তাই আমরা কিছু বলিউডের সিনেমা চালানোর অনুমতি চেয়েছিলাম মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে। তিনি আমাদের লিখিতভাবে প্রস্তাব দিতে বলেছিলেন। আমরা সেই আলোকে ১০টি বলিউড সিনেমার নাম উল্লেখ করে প্রস্তাবও দিয়ে ছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বাংলাদেশ হল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি ও মতিঝিলের মধুমিতা হলের মালিক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, বিদেশী সিনেমা আমদানির প্রস্তাবটি প্রথমে আমার এখান থেকেই গেছে। এর কারণটা হলো গত চার-পাঁচ বছর শাকিব খানের সিনেমা বাদ দিলে ব্যবসা করার মতো কোনো সিনেমাই তৈরি হয়নি। অনেকেই এখন সিনেমা তৈরি করছেন পুরস্কারের আশায়। সাধারণ দর্শকদের কথা তাদের মাথায় থাকে না। এসব সিনেমা দিয়ে সিনেমা হল বাঁচানো সম্ভব নয়। এ কারণেই করোনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মধুমিতা সিনেমা হল বন্ধ রেখেছি। হিসাব করে দেখেছি দর্শক ছাড়া সিনেমা চালানোর চেয়ে বন্ধ রাখাটা ভালো।
তবে এককভাবে দেশের সিনেমা দিয়ে হল চলবে না বলে যে যুক্তি দিয়েছেন খোরশেদ আলম খসরু ও ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ তা মানতে রাজি নয় দেশের অনেক চলচ্চিত্র নির্মাতা। তারা বলেন, গত কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশে সিনেমা নির্মাণ কমে গিয়ে ছিল। তবে ২০১৮-১৯ সালে সেই অবস্থা থেকে উত্তরণও শুরু হয়েছিল। করোনার কারণে সেই উত্তরণ কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে এখন ৫০টির বেশি সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে যেগুলো দিয়ে সিনেমা হল স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারবে। এ বিষয়ে মনপুরা ও স্বপ্নজালখ্যাত পরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিম বলেন, করোনা বড় ধাক্কা দিয়েছে ঠিকই। পাশাপাশি হল মালিকদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সুযোগও সৃষ্টি করে দিয়েছে। এখন ৫০টির বেশি সিনেমা পাইপলাইনে রয়েছে। আমাদের দেশে কখনো এতগুলো সিনেমা একসাথে মুক্তির জন্য অপেক্ষায় থাকে না। করোনা সেই সুযোগ করে দিয়েছে। যেসব সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় আছে সেগুলোর মধ্যে বেশ কিছু পরিচালকের এটাই প্রথম ছবি। তাই যারা প্রথম কাজ করেন, তারা নিজের সবটুকু ঢেলে দিয়েই সেরা কাজটি দেয়ার চেষ্টা করেন। এ ছাড়া আরো যে পরিচালকদের ছবি এ বছর আসতে যাচ্ছে, তারা পরীক্ষিত। সুতরাং সব মিলে প্রত্যাশা করতেই পারি, সিনেমার অবস্থা খুব শিগগিরই স্বাভাবিক হবে। সিনেমা আমদানির ব্যাপারে তিনি বলেন, আমার মনে হয় না এই মুহূর্তে সিনেমা আমদানির প্রয়োজন আছে। ইচ্ছে থাকলে আমাদের সিনেমা দিয়েই আমরা ঘুরে দঁাঁড়াতে পারবো।
নির্মাণ হয়ে থাকা কিছু সিনেমা করোনার কারণে আটকে আছে মুক্তির প্রতীক্ষায়। সেগুলোর মধ্যে আছে ‘মিশন এক্সট্রিম, শান, পরান, জ্বীন, বিক্ষোভ, ক্যাসিনো, আনন্দ অশ্রু, অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন, অপারেশন সুন্দরবন, গিরগিটি, সিক্রেন্ট এজেন্ট, ইত্তেফাক, বিদ্রোহী, অন্তরাত্মা, হাওয়া, পাপপুণ্য, দামাল ওস্তাদ, মুখোশ, চোখ, লিডার- আমিই বাংলাদেশ ও রিভেঞ্জ। এগুলো ছাড়া আরো বেশ কিছু সিনেমা রয়েছে পরিচালকদের হাতে, যার মধ্যে সরকারি অনুদানের বেশ কয়টি সিনেমা জমা হয়েছে গত দুই বছরে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে অনুদান পাওয়া ১৬টি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমার মধ্যে আছে মুশফিকুর রহমানের টুঙ্গিপাড়ার দুঃসাহসী খোকা, গিয়াসউদ্দিন সেলিমের কাজলরেখা, এস এ হক অলিকের যোদ্ধা, বদরুল আনাম সৌদের শ্যামা কাব্য, প্রদীপ ঘোষের ভালোবাসা প্রীতিলতা, ইস্পাহানী আরিফ জাহানের হৃদিতা, ফজলুল কবীর তুহিনের গাঙকুমারী, ইফতেখার আলমের লেখক ও মনজুরুল ইসলামের বিলডাকিনী। পঙ্কজ পালিতের একটি না বলা গল্প, অনম বিশ্বাসের ফুটবল ৭১, আউয়াল রেজার মেঘ রোদ্দুর খেলা ও নুরে আলমের রাসেলের জন্য অপেক্ষা হাতে আছে। এ ছাড়া বাঁধন বিশ্বাসের ছায়াবৃক্ষ, রোজিনার ফিরে দেখা, মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের আশীর্বাদ-এর দৃশ্যধারণ সম্প্রতি শেষ হয়েছে। পূর্ণদৈর্ঘ্য ছাড়া স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমাও আছে অনেক পরিচালকের হাতে। অনুদানের স্বল্পদৈর্ঘ্য নির্মাণ করবেন প্রবীর কুমার সরকার, শরীফ রেজা মাহমুদ, এ বি এম নাজমুল হুদা, সাজেদুল ইসলাম, দেবাশীষ দাশ, ফাখরুল আরেফীন খান, সোহেল আহমেদ সিদ্দিকী, মিতালি রায় ও চৈতালি সমাদ্দার।
২০২০-২১ অর্থবছরে পূর্ণদৈর্ঘ্য ২০টি চলচ্চিত্রকে অনুদান দেয় সরকার। জাহাঙ্গীর হোসেন মিন্টুর ক্ষমা নেই, নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুলের সাড়ে তিন হাত ভূমি, উজ্জ্বল কুমার মন্ডলের মৃত্যুঞ্জয়ী, হাসান জাফরুল ও এফ এম শাহীনের মাইক, লুবানা শারমিনের নুলিয়াছড়ির সোনার পাহাড় নির্মাণপর্বে আছে। এ ছাড়া কাজী হায়াতের জয় বাংলা, অনিরুদ্ধ রাসেলের জামদানী, জাহিদুর রহিম অঞ্জনের চাঁদের অমাবস্যা, মেজবাউর রহমান সুমনের রইদ, অরুণ চৌধুরীর জলে জ্বলে, অরুণা বিশ্বাসের অসম্ভব, মীর্জা শাখাওয়াত হোসেনের ভাঙন অপেক্ষমাণ। রকিবুল হাসান চৌধুরী পিকলুর দাওয়াল, ইকবাল হোসাইন চৌধুরীর বলি, আব্দুস সামাদ খোকনের শ্রাবণ জ্যোৎস্নায়, আশুতোষ সুজনের দেশান্তর, এস এ হক অলিকের গলুই, ইব্রাহিম খলিল মিশুর দেয়ালের দেশ এবং অপূর্ব রানার জলরঙ অনুদান পেয়েছে। এগুলোও নির্মীয়মাণ। এ ছাড়া স্বল্পদৈর্ঘ্যের আরো ১০টি সিনেমাকে ২০২০-২১ অর্থবছরে দেয়া হয়েছে অনুদান। এর মধ্যে মেহেদী হাসান অর্ণব জল পাহাড় আর পাতাদের গল্প, স্বপ্ন সমুদ্র রূপালী আঁশ, শায়লা রহমান তিথি যুদ্ধজয়ের কিশোর নায়ক, নাসরিন ইসলাম স্বাধীনতার পোস্টার, শামসুদ্দীন আহমদ শিবলু হাওয়াই সিঁড়ি, রাসেল রানা সোনার তরী, ফজলে হাসান শিশির ঝিরি পথ পেরিয়ে, তাসমিয়াহ আফরিন আমার নানুর বাড়ি, মেহজাদ গালিব বিন্দু থেকে বৃত্ত: একজন বকুলের আখ্যান ও এমদাদুল হক খান শিরিনের একাত্তর যাত্রা নির্মাণ করবেন। অনুদানের সিনেমা ছাড়াও নির্মাতা রাশিদ পলাশের পদ্মাপুরাণ মুক্তির জন্য প্রস্তুত। তিনি আরো পরিচালনা করছেন প্রীতিলতা। এ ছাড়া নাম চূড়ান্ত না হওয়া একটি সিনেমা রয়েছে পিপলু আর খানের হাতে, যাতে অভিনয় করেছেন জয়া আহসান।
চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সহ-সভাপতি মিয়া আলাউদ্দিন বলেছেন, ‘ভারতীয় সিনেমা আমদানির বিষয়ে হল মালিকরা একমত হয়েছি। তবে আমরা কিন্তু দেশের সিনেমাশিল্প উন্নয়নের পক্ষেই রয়েছি। আমরা শুধু একটা অবস্থার পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছি।’ কী পরিবর্তন সেটা হয়তো সময়ই বলে দিবে।

বাস্তবতা বিবেচনায় এখন বিদেশী সিনেমা আমদানি প্রয়োজন : খোরশেদ আলম খসরু, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশ সমিতির সভাপতি

গত চার-পাঁচ বছর শাকিব খানের সিনেমা বাদ দিলে ব্যবসা করার মতো কোনো সিনেমাই তৈরি হয়নি : ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ, মধুমিতা হলের মালিক

মনে হয় না সিনেমা আমদানির প্রয়োজন আছে। আমাদের সিনেমা দিয়েই আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব। : গিয়াসউদ্দিন সেলিম, পরিচালক

 


আরো সংবাদ



premium cement
কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্য পান, সেভাবেই ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে : কৃষিমন্ত্রী চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সিএনজি ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ৪ ভান্ডারিয়ায় ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে দর্শনার্থীদের ঢল তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ৭ দিন স্কুল বন্ধের দাবি চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত বিএনপি সাম্প্রদায়িক শক্তি, এদের রুখতে হবে : ওবায়দুল কাদের সাদিক এগ্রোর ব্রাহামা জাতের গরু দেখলেন প্রধানমন্ত্রী ভারতে লোকসভা নির্বাচনে প্রথম ধাপে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ সারা বিশ্ব আজ জুলুমবাজদের নির্যাতনের শিকার : ডা. শফিকুর রহমান মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশী : পররাষ্ট্রমন্ত্রী চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও বোয়ালখালীতে ৩ জনের মৃত্যু

সকল