২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ক্যামেরার সামনে কাঁদছিলাম : দিলারা

ক্যামেরার সামনে কাঁদছিলাম : দিলারা -

অভিনয় তার নেশা। তাই ৭৯ বছর বয়সে এসেও ক্যামেরার সমানে কাজ করেন সাবলীল ভঙ্গিতে। গল্পের চরিত্রে নিজেকে মেশাতে পারলেই রাজ্যের স্বস্তি নেমে আসে দিলারা জামানের মনে। তিনি মনে করেন, যে কাজে আনন্দ নেই তা করতে যাওয়ার চেয়ে বোকামি আর হতে পারে না। ব্যক্তিভেদে মানুষের রুচি, পছন্দ আলাদা হয়। এই আলাদা হওয়াটার নামই স্বাভাবিকতা। যারা নিজেকে স্বাভাবিক অবস্থার সাথে মেলাতে পারেন তারাই সুখী জীবন-যাপন করেন। গুণী এই অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি সব সময় কাজ হাতে নেয়ার আগে গল্প বোঝার চেষ্টা করি। নিজের চরিত্রকে কল্পনা করতে থাকি। সব কিছু যখন পারফেক্ট মনে হয় তখন ক্যামেরার সামনে দাঁড়াই, এটা আমাকে প্রতিনিয়ত নতুন অভিজ্ঞতা দেয়।’ করোনার গত মার্চ মাস থেকেই কোনো শুটিংয়ে অংশ নেননি তিনি। সচেতনতায় বাসায় নিজের কাজ নিজেই করছেন। বেশির ভাগ সময় বাসায় একাই থাকেন। টেলিভিশন দেখে, পত্রিকা পড়ে ও মোবাইল ফোনে সহকর্মীদের সাথে কথা বলে তার সময় কাটে। করোনা এবার যে হারে বাড়ছে, তাতে আপাতত তার ঘরের বাইরে যাওয়া একদমই নিষেধ পরিবার থেকে। প্রতিদিন ২০ মিনিট সতর্কতার সাথে বাইরে হাঁটতে বের হতেন, সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে। সুস্থ থাকতে বাধ্য হয়ে ঘর ও ছাদে হাঁটতে হচ্ছে তাকে। দিলারা জামান জানান, সচেতন থাকলে করোনায় আক্রান্তের সম্ভাবনা কম। সে জন্য সবসময় সতর্ক থাকার চেষ্টা করেন। করোনা হতে পারে, এমন কোনো কিছুর সংস্পর্শ থেকে সব সময় দূরে থাকছেন। শুটিং ছাড়া আরো একাকী সময় কাটে। এ পরিস্থিতিতে শুটিংয়ের স্বল্প আয়ের কলাকুশলী ও অভিনয়শিল্পীর জন্য তার মন খারাপ। দিলারা জামান বলেন, ‘করোনায় গত বছর অনেক দিন শুটিং বন্ধ ছিল। সে সময় অনেকে কষ্ট করেছেন, খেয়েপরে বেঁচে ছিলেন। এবার তো পরিস্থিতি আরো ভয়ানক। দেশের এমন অবস্থায় আমরা শুটিং না করলেও কিছুদিন চলতে পারব, কিন্তু আমাদের সাথে আরো যারা কাজ করেন, তারা কিভাবে জীবন-জীবিকা চালাবেন? সমস্যা বাড়লে তাদের মানবেতর জীবন যাপন করতে হবে। তারা কিভাবে পরিবার, সন্তানদের নিয়ে চলবেন, তা নিয়েই খুব দুশ্চিন্তায় আছি। সবসময় চাই আমার সহকর্মীরা ভালো থাকুন।’
সর্বশেষ তিনি অভিনয় করেছেন ‘ওমর ফারুকের মা’ চলচ্চিত্রে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন ‘আমি যখন জানতে পারলাম মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফারুকের মা বেঁচে আছেন, তখন আমি পিরোজপুরে গিয়ে তার সাথে দেখা করলাম। তিনি কথা বলতে পারেন না। বারবার আমাকে ছুঁঁয়ে দেখছিলেন। যখন অভিনয় করি নিজের অজান্তেই কান্না চলে আসছিল। ক্যামেরার সামনে আমি কাঁদছিলাম, আর ক্যামেরার পেছনেও সবাই কাঁদছিল। সেই মা এখনো তার ঘরের দরজা লাগান না, যেকোনো সময় তার ছেলে চলে আসতে পারেন বিধায়। বিপ্লব অনেক শ্রম দিয়ে নিজের মেধা দিয়ে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছে।’ স্বল্পদৈর্ঘ্য এই চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন জাহিদুর রহমান বিপ্লব। ২০১৭-১৮ সালে ১০ লাখ টাকা অনুদানপ্রাপ্ত এই চলচ্চিত্রটির শুটিং শেষ। তবে এখনো কিছু কাজ বাকি। সেগুলো শেষ করে শিগগিরই তিনি চলচ্চিত্রটি সেন্সরের জন্য জমা দেবেন। এই চলচ্চিত্রে অনেকেই অভিনয় করেছেন। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো- চলচ্চিত্রে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফারুকের বোন সালমা একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। চলচ্চিত্রটির মূল গল্প এবং কাহিনী সংক্ষেপ পরিচালকের নিজের। চিত্রনাট্য করেছেন মাসুম রেজা। চলচ্চিত্রটি প্রসঙ্গে জাহিদুর রহমান বিপ্লব বলেন, ‘এটি মূলত পিরোজপুরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফারুকের মাকে নিয়ে গল্প। তাকে ঘিরেই কাহিনী আবর্তিত হয়েছে। মা চরিত্রে আমাদের শ্রদ্ধেয় জীবন্ত কিংবদন্তি অভিনেত্রী দিলারা জামান আপা অসাধারণ অভিনয় করেছেন। তার অভিনয় নিয়ে আমার আসলে বলার কিছু নেই। কারণ তিনি কেমন অভিনেত্রী তা সবাই অবগত। দর্শক তার মাঝে তাদের মায়ের ছায়া খুঁজে পান। তো আমার বিশ্বাস দর্শক তারই মাঝে ওমর ফারুকের মাকেও দেখতে পাবেন। আমি চলচ্চিত্রটি নিয়ে খুব আশাবাদী।’ বিপ্লব জানান, এই চলচ্চিত্রে আরো অভিনয় করেছেন খায়রুল আলম সবুজ, নাজনীন চুমকী, শাহেদ শরীফ খান, কাজী রাজু, সাঈদ বাবু প্রমুখ। এ দিকে দিলারা জামান শ্যাম বানেগালের নির্দেশনায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নির্মিত বায়োপিকে বঙ্গবন্ধুর মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি জানান, তার অভিনয় জীবনে এটা অনেক বড় প্রাপ্তি। এ ছাড়া তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নির্মিত ‘টুঙ্গীপাড়ার মিয়াভাই’ ও ‘চিরঞ্জীব শেখ মুজিব’ চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। আগামী কয়েক দিন তিনি আফজাল হোসেন ও বদিউল আলম খোকনের নির্দেশনায় নাটক, সিনেমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন।


আরো সংবাদ



premium cement