১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গায়ের রঙ নয়, তাদের সৌন্দর্য নির্ণয় মেধায়

-

‘সুন্দর’ মানুষ আসলে কেমন। গত দুই দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে বেশ চর্চা হচ্ছে। গায়ের রঙ বিবেচনায় কাউকে সুন্দর, অসুন্দর বলা নিয়ে পক্ষে, বিপক্ষে নানা যুক্তি উপস্থাপন করা হচ্ছে। তবে বিউটি এক্সপার্টরা মনে করেন, গায়ের রঙ কোনোভাবেই সুন্দরের মাপকাঠি নয়। একজন মানুষের সৌন্দর্য ফুটে উঠে বাচনভঙ্গি ও শিষ্টাচারের মাধ্যমে। মানুষ ভালো কথাবার্তা ও আচার-ব্যবহার গঠনের মাধ্যমে নিজেকে শোভন, সুন্দর আর পরিশীলিত করে অন্যের প্রীতিভাজন হয়ে উঠতে পারে। প্রকৃত অর্থে এটাই হচ্ছে ‘সুন্দর’। এখানে গায়ের রঙ কোনো বাধা বা সুবিধা নয়।
এই বিষয়টিই আরো প্রাণবন্ত করে উপস্থাপন করা হচ্ছে ‘মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ ২০২০’ প্রতিযোগিতার সেরা ২০ সুন্দরীর গ্রুমিং পর্বে। গত সোমবার রাজধানীর রেডিসন হোটেলে তাদের সাথে কথা বলে তেমনটিই মনে হয়েছে। হাজারখানেক প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে সেরা ২০-এ আসতে শ্যাম, কালো, ফর্সা রঙ কোনো বাধা হয়নি তাদের। প্রতিযোগীরা বলেছেন, নিজেদের মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে সমাজের বঞ্চিত মানুষের জন্য কিছু একটা করার প্রত্যাশা নিয়েই ‘মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ ২০২০’ প্রতিযোগিতায় এসেছেন তারা।
পেশায় চিকিৎসক হয়েও এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন আপনা চাকমা। তিনি বলেন, শিক্ষিত আর মেধাবী মানুষরাও এখানে আসেন। আমি ওদেরকে দেখে অনুপ্রাণীত হয়েছি এখানে আসার জন্য। এই প্লাটফর্মটা আসলে অনেক বড়। এটা আমাকে অনেক ভালো কাজের সুযোগ করে দিবে। এমন নয় যে আমি অভিনয় করবো, মডেলিংই করবো বা মিডিয়া জগতে যাবো। আমি আসলে একজন ডাক্তার। আমার প্রফেশন নিয়ে অনেক বেশি প্রাউড। একজন মানুষ যখন অসুস্থ অবস্থায় আমার কাছে আসে এবং তাকে যখন সেবা দিয়ে সুস্থ করতে পারি, সেটা আমার কথা বার্তা দিয়ে হোক, আমার ওষুধ দেয়ার মাধ্যমে হোক। এর ফলে যে মানসিক শান্তি আমি পাই। আমার মনে হয় না আর কোথাও থেকে এটা পাওয়া সম্ভব। আমি তাই মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। এ কথায় আমি মানবিক কাজে নিজেকে যুক্ত করতে চাই। তিনি এখন ধানমন্ডির ল্যাব এইড স্পেশালাইজড হসপিটালে করোনা ফ্রন্ট লাইনার হিসেবে কাজ করছেন।
ফারজানা আক্তার অ্যানি এসেছেন প্রাইম ইউনিভার্সিটি থেকে। পড়াশোনা করছেন সিএসই ডিপার্টমেন্টে। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে এসেছি আমার কোয়ালিটিজগুলা শো করে নতুন কিছু গুণ নিজের মধ্যে ধারণ করতে। আমার কাছে মনে হয় এটা এমন একটি প্লাটর্ফম যেটা নিজেকে সবচেয়ে সুন্দরভাবে ইমপ্রোভ করার সুযোগ তৈরি করে দিবে। ফরিদপুরের এই মেয়ে তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড়। এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার থিয়েটারের অভিজ্ঞতা না থাকলেও অ্যানির লক্ষ্য বড় অভিনেত্রী হওয়া। তিনি বলেন, মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা আমার লক্ষ্য পূরণে অনেক সহায়ক হবে। পড়াশোনার বাইরে ড্রয়িং এবং ভ্রমণ তার খুব ভালো লাগে। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সিএসই ডিপার্টমেন্টে পড়ছেন মুনমুন রহমান। গাজীপুরের কাপাসিয়ার এই মেয়ে চার ভাই-বোনের মধ্যে তিন নম্বর। তিনি বলেন, আমার ভালো লাগার কারণেই এখানে আসা। এবার যারা এখানে অংশ নিয়েছেন সবাই অনেক মেধাবী। এই মেধাবীদের সাথে মিলেমিশে কাজ করার আনন্দটাই আলাদা।
বেশ চটপট স্বভাবের মেয়ে নিদ্রা দে নেহা। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হয় বাংলাদেশে মেয়েদের জন্য সবচেয়ে রেসপেক্টেড একটা জায়গা মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ। যেখানে মানুষের বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যটাকে মূল্যায়ন করা হয়। আমি দেখতে সুন্দর। এটা কিন্তু আমাদের সৌন্দর্য না। আমাদের অভ্যন্তরীণ একটা সৌন্দর্য আছে যেটা আমাদের টেলেন্ট। আমি চাচ্ছিলাম এমন একটা প্লাটফর্মে এসে পুরো বাংলাদেশকে আমাকে চেনাতে যে আমি কিছু করতে পারি। ২০১৯ সালে প্রথম আসরের পর সমগ্র বিশ্বজুড়ে করোনাকালীন পরিস্থিতির জন্য ২০২০ সালে মিস ইউনিভার্সের কার্যক্রম পিছিয়ে যায়। নতুন সূচি অনুযায়ী গত ১১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয় ‘ফ্লোরা ব্যাংক মিস ইউনিভার্স ২০২০’ সালের বাংলাদেশ পর্বের কার্যক্রম। ইতোমধ্যে সেরা ২০ জন সুন্দরীর বাছাই শেষে তাদের গ্রুমিং চলছে।
চূড়ান্ত পর্বের বিচারকদের মাঝে এবার থাকছেন মডেল ও অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মীম। গ্রুমিং সেশনে মীম তার নিজ অভিজ্ঞতা থেকে প্রতিযোগীদের বেশ কিছু পরামর্শ দেন এবং আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠার কৌশল শেখান। প্রিয় মডেল ও অভিনেত্রীর সাথে দেখা ও কথা বলার কারণে প্রতিযোগীদের মাঝে বেশ উৎসাহ ও উৎফুল্লতা দেখা যায়।
প্রতিযোগীদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিতে গ্রুমিং সেশনে আরো যোগ দেন সাবেক মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ ২০১৯, শিরিন আক্তার শিলা। একই প্লাটফর্মের একই প্রেজেন্টের সাবেক বিজয়ীকে নিজেদের সাথে দেখে উচ্ছ্বসিত হন সেরা ২০। কেমন অভিজ্ঞতা ছিল শিলার, কিভাবে নিজেকে প্রতিযোগিতায় সেরা প্রমাণ করে মুকুট পান সেই গল্প শুনে সবার মাঝেই উচ্ছ্বাস, আনন্দ, উত্তেজনা ও আত্মবিশ্বাস যেন দ্বিগুণ পরিমাণে বেড়ে গেছে।
প্রাথমিক বিচারক হিসেবে প্রিয়তা ইফতেখার (মিস কালচার ওয়ার্ল্ডওয়াইড ২০১৮) যাদের নির্বাচন করেন সেই টপ ২০ জন আরেকবার গাইড হিসেবে তাকে কাছে পান। প্রিয়তা ইফতেখার গ্রুমিং পর্বে প্রতিযোগীদের সাথে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে কথাবার্তা বলেন। নিজেকে চর্চা করে নিজের মধ্যকার আত্মবিশ্বাসকে জাগিয়ে তোলার অনুশাসন দেন তিনি। ভবিষ্যতেও যারা এই ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে চান তাদেরকে এখন থেকেই তৈরি হতে বলেন।
প্রতিষ্ঠিত তারকাদের সাথে কথা বলে, পরিচিত হয়ে এবং তাদের থেকে নানান বিষয়ে জানতে পেরে প্রতিযোগীরা আরো বেশি সুন্দরভাবে নিজেদের বিকাশ ঘটাতে পারবে, পারদর্শী হতে পারবে বলে আশা করেন আয়োজকরা। তারা বলেন দৈনন্দিন প্রতিযোগীরা যেই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন এতে করে নতুন কিছু শিখতে পারার অনেক সুযোগ রয়েছে।
আগামী ২০ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় পর্যায়ের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা। আগামী মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিতব্য ‘মিস ইউনিভার্স ২০২০’ প্রতিযোগিতার ৬৯তম মূল মঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন ‘ফ্লোরা ব্যাংক মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ ২০২০’-এর মুকুটবিজয়ী।


আরো সংবাদ



premium cement
তালেবানকে আফগান মাটি অন্যদের ব্যবহারের সুযোগ না দেয়ার আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের। গত দুই দিনের রেকর্ডের পর চুয়াডাঙ্গায় আজও বইছে তীব্র তাপদাহ বগুড়ায় শিশুকে গলা কেটে হত্যা, নানা আটক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের সম্ভাব্য একাদশ তালতলীতে ইউপি চেয়ারম্যানের নগ্ন ও আপত্তিকর ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল ভারতের নির্দেশের পর পোস্ট ব্লক করল এক্স ‘দেশের কল্যাণে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারার বিকল্প নেই’ রংপুরে বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন সপ্তাহের শেষে তাপমাত্রা বাড়ার আভাস কোরিয়ার প্রতিটি গলি আজানের ধ্বনিতে ভরে উঠবে : মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা দিয়ে কিম উল্লাপাড়ায় বেপরোয়া গতির বাস চাপায় পথচারী নিহত

সকল