২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখতে চান মম

প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখতে চান মম -

তার অভিনয় দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন নেই। প্রথম চলচ্চিত্রেই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ঘরে তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু পরের চলচ্চিত্রগুলোতে আর সেভাবে নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে পারেননি জাকিয়া বারী মম। এই দায় কি মমর, পরিচলকের, নাকি গল্পের? প্রশ্নটি উঠার কারণ হলো, প্রথম ছবির পর চলচ্চিত্রে ভালো না করলেও নাটকে তার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে বারবার। এ প্রসঙ্গে মম বলেন, ‘আমি সবসময় চেষ্টা করি নিজের সেরাটা দিয়ে কাজ করতে। কিন্তু দর্শক কখন কোন বিষয়কে আঁকড়ে ধরেন সেটি বোঝা কঠিন। একজন অভিনেত্রী হিসেবে দর্শকদের মনের ভেতর জায়গা না পাওয়াটা যেকোনো অভিনেতার জন্যই ব্যর্থতা। সেই ব্যর্থতার ভুলে এখন প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখতে চাই।’
হঠাৎ কেন এই চাওয়া। কারণটা জানতে তাকাতে হবে মমর প্রথম ছবির দিকে। তৌকীরের পরিচালনায় দারুচিনি দ্বীপ ছিল তার প্রথম সিনেমা। সেখানে তার চরিত্রটা ছিল বান্ধবীদের মধ্যে সবচেয়ে সহজ-সরল টাইপের। দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা এক তরুণী, বাবা-মায়ের সাথে যাকে থাকতে হয় চাচার আশ্রয়ে, চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত মেনে নিতে যে কি-না বাধ্য হয়, একজনকে ভালোবাসলেও সেটি প্রকাশ করতে পারে না, বান্ধবীদের আড্ডায় ১৮+ কথাবার্তা শুনে যে মেয়েটা কানে আঙুল দেয়, যার চলনে-বলনে-কথায় আভিজাত্য নেই, কিন্তু আছে পরিপাট্যের ছাপ। সমবয়সী তো বটেই, বান্ধবীর বাবার সাথেও যে বন্ধুর মতো মিশতে পারে, যার হৃদয়টা মায়া আর ভালোবাসায় পরিপূর্ণ। জরি চরিত্রে অভিনয় করে ক্যারিয়ারের প্রথম সিনেমা দিয়েই সেরা অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছিলেন মম।
এরপর অনেক সময় গড়িয়েছে। নবীন অভিনেত্রী থেকে সময়ের সাথে মম নিজেকে শাণিত করেছেন, প্রমাণ দিয়েছেন নিজের সামর্থ্যরে। পাশের বাড়ির মেয়ে টাইপের চরিত্রে তিনি যেমন মানানসই, গর্জিয়াস চরিত্রেও তিনি কম কিছু নন। বাংলা নাটক তার অভিনয় প্রতিভার স্বাক্ষর দেখেছে, কিন্তু বঞ্চিত হয়েছে সিনেমা। ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ সিনেমার জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন। ‘আলতাবান’ সিনেমায় দারুণ অভিনয় করেছেন, কিন্তু প্রচারণার অভাবে সেটি দেখারই সুযোগ পাননি বেশির ভাগ দর্শক। এই দুটিকে একপাশে রাখলে, দারুচিনি দ্বীপের পর মমর অভিনয় নিয়ে তুমুল আলোচনা কখনোই হয়নি। ‘দহন’-এ তার অভিনীত সাংবাদিকের চরিত্রটি আলোচিত হতে পারত, কিন্তু স্ক্রিনটাইম কম থাকায় আড়ালেই থেকে গেছে সেই পারফরম্যান্সও। ১৩ বছরের বিরতি দিয়ে আবার তৌকীরের সিনেমায় কামব্যাক করছেন মম। মাঝের এই সময়টায় তৌকীরের পরিচালনায় নাটকে অভিনয় করেছেন, কিন্তু সিনেমায় কাজ করা হয়নি। তৌকীরের নতুন সিনেমা স্ফুলিঙ্গতে মম যে চরিত্রে অভিনয় করছেন, সেটির নাম আইরিন। দারুচিনি দ্বীপের জরির একদম বিপরীত একটা চরিত্র এটি। বন্ধনহীন এক উচ্চবিত্ত পরিবারে তার বেড়ে ওঠা, যথেষ্ট আবেগি চরিত্র, গান আর পার্টি নিয়ে যার উদ্দাম জীবনযাত্রা। স্টাইলিশ এবং পশ্চিমা একটা ইমেজে হাজির হচ্ছেন মম, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
আইরিনের চরিত্রে আত্মকেন্দ্রিকতা আছে, একই সাথে আছে ভালোবাসাও। নিজের অপ্রাপ্তি এবং হতাশার যন্ত্রণার পাশাপাশি আছে ভালোবাসার মানুষটিকে পেতে চাওয়ার তীব্র আকাক্সক্ষা। সময়ের সাথে সাথে তার মধ্যে তৈরি হয় দেশ এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতাও। সিনেমার প্রথম গান ‘তোমার নামে’ মুক্তি পেয়েছে ইতোমধ্যেই, তাতে মমর বিউটি লুক আলাদা করে নজর কেড়েছে সবার। নাটকের মমর সাথে সিনেমার মমকে মেলালে হয়তো একটু আক্ষেপ হবে যে কারো। দারুণ প্রতিভাবান এক অভিনেত্রী তিনি, যেকোনো ধরনের চরিত্রের জন্য মানানসই, অথচ তার সেই মেধাকে সেভাবে ব্যবহারই করা যায়নি সিনেমায়। কিছু ক্ষেত্রে চিত্রনাট্য বাছাইয়ে তারও হয়তো অসাবধানতা ছিল। কিন্তু মম টেস্ট খেলতে এসেছেন, টি-২০ নয়। তিনি ধীরে চলো নীতিতে বিশ্বাসী, ওপরে উঠতে চান একটা একটা করে সিঁড়ি ভেঙে। আর সেভাবে হেঁটেই জয় করতে চান সব কিছু।
স্ফুলিঙ্গের আইরিন চরিত্রটিকে ফুটিয়ে তোলার জন্য যথেষ্ট খেটেছেন মম, প্যান্ডেমিক সিচুয়েশনের মধ্যেই ঝুঁঁকি নিয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন। তৌকীর আহমেদ খুব কম সময়ে তার সিনেমার শুটিং শেষ করেন, স্ফুলিঙ্গের শুটিং সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ২৩ দিনে। এই চ্যালেঞ্জেও উতরে গেছেন মম, পাল্লা দিয়েছেন পরিচালকের চাহিদার সাথে। তৌকীরের হাত ধরে চলচ্চিত্রে মমর উঠে আসা, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জেতা, সেই তৌকীরের সিনেমা দিয়েই আরেকটা প্রত্যাবর্তনের গল্প তিনি লিখতে পারবেন কি না, সেটিই এখন দেখার বিষয়।


আরো সংবাদ



premium cement