২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

প্রথমে ভালো কাজ তারপর ভবিষ্যৎ : দিলারা জামান

-

ইদানীং নাটক-সিনেমার ভবিষৎ নিয়ে বেশ আলোচনা হয়। বিশেষ করে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে একের পর এক প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং টেলিভিশনের প্রতি দর্শকদের অনীহা সৃষ্টির ফলে এই আলোচনাটা বেশি হচ্ছে। কেউ বলছেন, নেটফ্লিক্স, আইফ্লিক্সের যোগে বস্তাপচা গল্পের কারণে শোবিজের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন দর্শকরা। প্রবীণ শিল্পী দিলারা জামান মনে করেন, সব আলোচনার জবাব হলো ভালো কাজ। সব কাজের ইতিবাচক, নেতিবাচক আলোচনা হবে এটাই স্বাভাবিক। ১৯৬৬ সাল থেকে আমি অভিনয়ের সাথে জড়িত। তখন থেকেই নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে কাজ করতে হয়েছে। আমার সব কাজের প্রশংসা দর্শক করেননি। যেগুলো থেকে দর্শক মনের খোড়াক খুঁজে পেয়েছেন সেগুলোরই প্রশংসা করেছেন। এত বছর পর এসেও আমি দর্শকদের কাছ থেকে একই ধরনের প্রতিক্রিয়া খুঁজে পাই।
গুণী এই অভিনেত্রী বলেন, ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা না করে আগে ভালো কাজ করার চিন্তা করতে হবে। তাহলে আপনাআপনিই ভবিষ্যৎ ভালো হবে। পৃথিবীর সব ইন্ডাস্ট্রিতেই ভালো কাজের পাশাপাশি দুর্বল কাজও হয়। কিন্তু ভালো কাজের কথা-ই মানুষ মনে রাখে। তবে অভিনেতা, অভিনেত্রী ও পরিচালকদের একটা কথা মাথায় রাখতে হবে। মানসম্মত কাজ না করলে টিকে থাকা সম্ভব না। তাই কাজ অল্প হলেও মানসম্মত হতে হবে। তবে ভালো কাজ যে হচ্ছে না তা তো নয়। ভালো কাজ না হলে ইন্ডাস্ট্রি এত দিন টিকে থাকত না।
দিলারা জামানের অভিনয়ের শুরু ১৯৬৬ সালে ত্রিধরা নাটক দিয়ে। নাটকের পাশাপাশি তিনি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন। ১৯৯০-র দশকে তিনি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘চাকা’ ও ‘আগুনের পরশমণি’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। পরবর্তীতে ‘ব্যাচেলর’, ‘মেড ইন বাংলাদেশ’, ‘চন্দ্রগ্রহণ’, ‘প্রিয়তমেষু’ ও ‘মনপুরা’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৯৩ সালে শিল্পকলায় অবদানের জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকে ভূষিত হন।
পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে দাপটের সাথে অভিনয় করে যাওয়া এই অভিনেত্রী এখনো কাজের মধ্যেই পান সব তৃপ্তি। তাই ৭৭ বছর বয়সেও ক্লান্তি ঘিরে ধরতে পারেনি এই অভিনেত্রীকে। উল্টো তিনি প্রশ্ন করলেন, ‘ক্লান্ত কেন হবো? অভিনয় না করতে পারলেই বরং নিজেকে বেশি ক্লান্ত মনে হয়। মনে হয়, আমার বয়স হয়ে গিয়েছে। বয়স হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বয়সকে বেঁধে রেখেই কাজ করতে হবে। ক্লান্তি এলে তো আর সামনে যাওয়া যাবে না’।
তারপর এত দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে যাওয়ার রহস্য নিয়ে কৌতূহল আছে অনেকের। এ প্রসঙ্গে দিলারা জামান বলেন, অভিনয় করতে আমি মন থেকে ভালোবাসি। মনের জোর হচ্ছে সবচেয়ে বড় জোর, যেখানে ক্লান্তি আসার কোনো সুযোগ নেই। তবে এখন বয়স বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো না পারলেও নিয়মিত অভিনয় করার চেষ্টা করি। নিজেকে মন থেকে দুর্বল ভাবার পক্ষে আমি নই। আমি সবসময় মনের জোরে কাজ করি। মনের বয়স এখনো বাড়েনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী নিয়ে যে সিনেমাটি হচ্ছে, সেখানে বঙ্গবন্ধুর মায়ের চরিত্রে দেখা যাবে তাকে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা অনেক ভালো একটা অনুভূতি। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির মায়ের চরিত্রে অভিনয় করতে পেরে নিজেকে আমি গর্বিত মনে করছি। আসলে এটি শুধু চলচ্চিত্র নয়, আমাদের ইতিহাসও। এই ইতিহাসের হাত ধরে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। এই ইতিহাসের সাথে যুক্ত হতে পেরে নিজের কাছে খুবই ভালো লাগছে।
আগামী ২৫ জানুয়ারি থেকে ‘বঙ্গবন্ধু’ সিনেমার কাজ শুরু হবে। তার আগে গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন দিলারা জামান। ওই দিনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সাথে শেখ রেহানাও ছিলেন। শেখ রেহানা আমাকে দেখেই হেসে বললেন আমাদের দাদী এসেছেন। পরে আমি বসলাম, অনেক কিছু নিয়েই তাদের সাথে কথা বললাম। তারা পুরোটা সময় আমাকে দাদীই ডেকেছেন। প্রায় তিন-চার ঘণ্টা সেখানে ছিলাম। প্রধানমন্ত্রী ও তার বোনের কাছ থেকে জাতির জনক সম্পর্কে অনেক কিছুই জেনেছি। প্রধানমন্ত্রীকে পেয়ে সবাই অনেক প্রশ্ন করেছেন। তিনি সবার প্রশ্নের উত্তর হাসিমুখে দিয়েছেন। মানুষ হিসেবে তিনি অসাধারণ। তাকে দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবেন। বাবার মতোই অদ্ভুত কিছু গুণ আছে তার মধ্যে। তার কথা শুনলে মনে হয় সবাই তার পরিচিত। কখনো বুঝতে দেননি, তিনি একজন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধুর মতো দেশের ইতিহাসে যে সূর্য সন্তানরা রয়েছেন চলচ্চিত্র হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন এই গুণী অভিনেত্রী। তার মতে, দেশের সূর্য সন্তানদের নিয়ে আরো চলচ্চিত্র নির্মাণ হওয়া দরকার। দেশের জন্য তাদের ত্যাগ সম্পর্কে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জানাতে হবে। তাদের জন্য আজকে আমরা এই সোনার দেশ পেয়েছি। তাদের নিয়ে আরো বেশিসংখ্যক চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হবে। মানুষ বই পড়ে অনেক কিছুই জানতে পারে কিন্তু চলচ্চিত্র দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয়।


আরো সংবাদ



premium cement