২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নিজের নিরাপত্তাই এখন সবচেয়ে জরুরি : সুবর্ণা

-

সেই আশির দশক থেকে জনপ্রিয় অভিনেত্রী হিসেবে শোবিজ অঙ্গনে নিজের জায়গাটা পাকাপোক্ত করে রেখেছেন সুবর্ণা মুস্তাফা। নানা সময়ে জনপ্রিয় সব চরিত্রে অভিনয় করে আলোচনায়ও থেকেছেন সব সময়। তিনি মনে করেন এই আলোচনায় থাকাটা কারো লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়। কাজ করতে থাকলে এমনিতেই মানুষ আলোচনায় চলে আসে। সুবর্ণা বলেন, “যখন ‘ঘুড্ডি’ ছবির কাজ করি তখন আমার পরিবারের অন্য সদস্যরা মিডিয়ার খুব পরিচিত মুখ। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো একবারের জন্যও মাথায় রাখিনি। সবসময় মনে হয়েছে গল্প, চরিত্র যেহেতু ভালো লেগেছে কাজটি করবই।” তিনি বলেন, ‘তখনকার সময় বিবেচনায় ছবিটি অনেক মর্ডান ছিল, আমি সেভাবেই নিজেকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। মাঝখানে অনেক বছর চলে গেছে কিন্তু কাজের জায়গায় আমি ওই চিন্তাকেই প্রাধান্য দেই।’
করোনার কারণে এখন অভিনয় কমিয়ে দিছেন সুবর্ণা। সর্বশেষ কাজ করেছেন বদরুল আনাম সৌদের নির্দেশনায় ‘লুকোচুরি লুকোচুরি গল্প’ ধারাবাহিকে। নতুন করে কাজে ফেরা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখন যে অবস্থা চলছে তার মাঝে নতুন কাজের চিন্তা করছি না। প্রতিদিন দেশে, দেশের বাইরে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছেন। এমতাবস্থায় কিভাবে মানসিকভাবে আসলে ভালো থাকি? ভালো থাকা যায় না।’ মানসিকভাবে ভালো না থাকার কারণে মঙ্গলবার তার জন্মদিনে কোনো আয়োজন ছিল না। সুবর্ণা বলেন, যেখানে মানসিকভাবেই আমি ভালো নেই সেখানে নিজের জন্মদিন নিয়ে আলাদাভাবে চিন্তার কোনো সুযোগও নেই। তাই এবারের জন্মদিনকে ঘিরে কোনো বিশেষ কিছুই করা হয়নি। এরই মধ্যে করোনার সেকেন্ড ওয়েব শুরু হয়েছে। সবাই যার যার অবস্থানে নিরাপদে থাকুন, সতর্ক থাকুন, সাবধানে থাকুন। কারণ নিজের নিরাপত্তাটাই এখন অনেক বেশি জরুরি।’
একুশে পদক ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত বরেণ্য এই অভিনেত্রী এখন জাতীয় সংসদেরও সদস্য। ক্ষমতাসীন দলের প্রতিনিধিত্ব করছেন তিনি। তবে সুবর্ণা মনে করেন, অভিনয়ের সাথে রাজনীতিকে মিলিয়ে দেখা উচিত হবে না। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। তবে অভিনয়ের জায়গাটাকে সবসময়ই আলাদা সম্মানের জায়গায় রাখি। রাজনীতিতে আমি একটি দলের প্রতিনিধি কিন্তু শোবিজ অঙ্গনে সবার প্রতিনিধি। যেকোনো চরিত্রে কাজ করার সময় মাথায় থাকে মানুষ এখান থেকে কী পাবে। আমরা তো কাজ করি সমাজের ত্রুটিগুলো সবাইকে ধরিয়ে দিতে। এখানে দল-মতের কোনো বিভেদ নেই।
করোনার কারণে শোবিজ সেক্টরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চলচ্চিত্র। এ প্রসঙ্গে সুবর্ণা বলেন, প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পে নাজুক অবস্থা বিরাজমান। এর থেকে উত্তরণের জন্য এখন ভিন্নধর্মী ছবি নির্মাণ হচ্ছে। মাঝখানে গল্পহীন ছবির কারণে প্রেক্ষাগৃহ থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। করোনা আসার পর বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়েছে। কারণ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা এই দুঃসময়টা সেভাবে সাফার করছেন তার প্রভাব কিন্তু দর্শকদের মধ্যে পড়ছে না। কারণ দর্শকের সাথে সিনেমার দূরত্বটা সৃষ্টি হয়েছে আরো আগেই। করোনার এই দুঃসময় থেকে আমাদের সবার শিক্ষা নিয়ে, দর্শকদের রুচিকে প্রাধান্য দিয়ে মৌলিক গল্পনির্ভর ছবি বানালে প্রেক্ষাগৃহে দর্শক যাবেই।
১৯৮০ সালে সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী পরিচালিত ‘ঘুড্ডি’ সিনেমায় অভিনয় করেই সিনেমাপ্রেমী দর্শককে মুগ্ধ করেছিলেন সুবর্ণা মুস্তাফা। এই সিনেমায় তার সহশিল্পী ছিলেন রাইসুল ইসলাম আসাদ। এই সিনেমার জনপ্রিয় গানটি হলো ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা , শুধু দু’জনে’। পরবর্তীতে সুবর্ণা মুস্তাফা ‘লাল সবুজের পালা’, ‘নতুন বউ’, ‘নয়নের আলো’, ‘সুরুজ মিঞা’, ‘রাক্ষস’, ‘কমান্ডার’, ‘অপহরণ’, ‘স্ত্রী’, ‘দূরত্ব’, ‘গহীন বালুচর’, ‘গণ্ডি’ সিনেমাসহ আরো বেশ কিছু সিনেমায় অভিনয় করেন। টিভি নাটকে সুবর্ণা মুস্তাফা-আফজাল হোসেন সর্বকালের সেরা জুটি। এই জুটি সর্বশেষ অভিনয় করেন বদরুল আনাম সৌদের নির্দেশনায় ‘অক্ষর থেকে উঠে আসা মানুষ’। সর্বশেষ সুবর্ণা মুস্তাফা বদরুল আনাম সৌদের নির্দেশনায় ‘গহীন বালুচর’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন।


আরো সংবাদ



premium cement