২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মিথ্যাকে সত্য বলে টেকা যায় না : শাওন

-

একটি গান বিতর্কে সম্প্রতি নতুন করে আলোচনায় এসেছেন মেহের আফরোজ শাওন। অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর সাথে তার গাওয়া ‘যুবতী রাধে’ গানটি ‘আইপিডিসি আমাদের গান’ ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। কিন্তু সরলপুর নামের একটি ব্যান্ড গানটিকে তাদের দাবি করলে শুরু হয় বিতর্ক। কিন্তু নানা তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, ওই ব্যান্ডের দাবিও ঠিক নয়। ওটি আসলে লোকগান। যা গাওয়ার অধিকার সবার আছে। এ বিষয়ে নয়া দিগন্তের সাথে কথা বলেছেন শাওন। সাথে ছিলেন আলমগীর কবির

নানা বিতর্কের পর ‘যুবতী রাধে’ গানের মালিকানা প্রশ্নে সমাধান এলো। বিষয়টিকে কিভাবে দেখেছেন আপনি?
Ñমনে হচ্ছে বড় রকমের একটি বোঝা মাথা থেকে সরে গেছে। ছোট বেলা থেকে যে গানটি লোকগান হিসেবে শুনে এসেছি। হঠাৎ কেউ তার মালিকানা দাবি করলে কে সেটা সহজে মেনে নেবে? তবে এখন ভালো লাগছে যে, বিতর্কের অবসান হয়েছে। আর একটা বিষয় প্রমাণ হয়েছে, মিত্যাকে সত্য বলে বেশি দিন টিকে থাকা যায় না।
বিতর্কের সমাধানটা কিভাবে এলো?
Ñ‘যুবতী রাধে’ গানটি আমার আগে আরো অনেকে গেয়েছিল। তখন কিন্তু বির্তক উঠেনি। আমি গাওয়ার পরই যখন গানটির মালিকানা নিয়ে বিতর্ক উঠল তখন অনেকেই গানের মূল জায়গায় যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে এ বিষয়ে সবচেয়ে সুন্দর যুক্তি উপস্থাপন করেছেন সাইমন জাকারিয়া। তিনি দেখিয়েছেন এটা কিভাবে লোকগান। ১৯৬০ সালে প্রকাশিত বঙ্গীয় লোকসঙ্গীত রত্মাকর ‘বাংলার লোকসঙ্গীতের কোষগ্রন্থ’ দ্বিতীয় খণ্ডের ৫৭৫ পৃষ্ঠায় ‘সর্ব জয় মঙ্গল রাধে বিনোদিনী রায়’ নামে যে গান রয়েছে তার সাথে ‘যুবতী রাধে’ গানের মিল রয়েছে। ওই বইটি সম্পাদনা করেছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক ডক্টর আশুতোষ ভট্টাচার্য। পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে তিনি ওই বইয়ের যে ছড়া সংস্করণ বের করে ছিলেন, ওটারও ২১৩ পৃষ্ঠায় ‘যুবতী রাধে’র সাথে মিল আছে এমন একটি গান পাওয়া গেছে। এ ছাড়া পাবনা থেকে আবিষ্কৃৃত নেপাল চন্দ্র দাশের হস্তলিখিত যে পাণ্ডুুলিপি পাওয়া গেছে তার ৯ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘কবিতা বাঁশি চুড়ি’ নামের যে গান পাওয়া গেছে সেটার কথাও ‘যুবতী রাধে’র সাথে মিলে যায়। এত প্রমাণের পর গানটিকে আর কেউ নিজেদের দাবি করতে পারবে বলে আমি মনে করি না।
আপনি যখন গানটি প্রথম গাওয়ার প্রস্তাব পেলেন তখন এর গীতিকার সম্পর্কে জানার ইচ্ছে হয়নি?
Ñআমি শুক্লা সরকারের স্টুডেন্ট। ছোটবেলায় জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে এই গানে অনেক নেচেছি। কৃষ্ণ সেজে নাচতাম, তাই এই গানের কথা মনে আছে। ভেবেছি, ছোট বেলার সেই গানটা এবার গাইব। ইউটিউবে গানটা খুঁজতে গিয়ে ২৫-৩০টি ভার্সন পেলাম। প্রতিটা ভার্সনের কথা একটু এদিক-ওদিক। কিন্তু সুর একই। প্রতিটা ভার্সনের ক্রেডিট লাইনে লেখা, প্রচলিত গান, সংগৃহীত গান কোথাও কোনো গীতিকার বা সুরকারের নাম লেখা নেই। সেখানে আমার তো দৈবক্রমেও জানার উপায় নেই, গানটি কোন ব্যান্ড দল কপিরাইট নিয়েছে। আয়োজকের মধ্যে পার্থ বড়ুয়ার মতো একজন শিল্পী আছেন, তিনিও খুঁজে এমন কিছু পাননি।’
অভিযোগটা কখন পেলেন?
Ñঅভিযোগটা কখন পেয়েছি তা-ও বলতে পারব না। কারণ গানটা প্রকাশের কিছু সময় পর কপিরাইট ক্লেইম করে ইউটিউব থেকে নামিয়ে দেয়া হলো! তখনই প্রথম জানলাম, গানটা সরলপুর নামের একটা ব্যান্ডের। এটা হয়তো আমার দীনতা, কারণ আমি দলটার নাম জানতাম না। তাদের দাবি, এই গান তাদের। কপিরাইট তাদের করা। তারা দাবি করলেন, গানটা তাদের লেখা। ওটা জানার পরও শকড হলাম এটা ভেবে, কেন আগে থেকে জানলাম না। গান প্রকাশের কিছু সময় পর, সরলপুর ব্যান্ডের পুরোনো একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখি। সেখানে তারা বলেছেন, গানটা তারা ২০০৮ সালে একজন বাউলসাধক এবং সাধন সঙ্গিনীর কাছ থেকে পেয়েছেন। সেটা শুনেও শকড হলাম। ফেসবুকে বিবৃতিতে দেখলাম, তাদের লেখা মৌলিক গান। অথচ ভিডিও ইন্টারভিউতে তারা বললেন, ৩০ শতাংশ বাউল সাধকের কাছ থেকে পেয়েছেন, ৭০ শতাংশ তাদের লেখা! এরপর জানতে পারলাম, সুরও নাকি তাদের করা! আমি আরো বিভ্রান্ত। কোনো অনুযোগ-অভিযোগ করছি না। তারা কী বলতে বা বোঝাতে চাইছেন, বুঝতে পারছি না।’
সরলপুর ব্যান্ডের সদস্য মারজিয়া বলেছেন, ইউটিউব ‘যুবতী রাধে’ গানের ক্রেডিট অংশে কপিরাইট বিষয়ে কিছু না লেখাটা তাদের মিসটেক। এ বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেছেন?
Ñএটাকে সহজভাবে দেখার উপায় নেই। সরলপুর ব্যান্ড যে বাউল সাধকের কাছ থেকে গানটি সংগ্রহ করেছে, কৃতিত্ব কেন দিলেন না? তারা যদি দিতেন, অন্য অনেকে তা জানতে পারত। কারণ, এ গানের প্রকৃত মালিক তো একজন বাউল সাধক। একজনের গানের ৩০ শতাংশ নিয়ে ৭০ শতাংশ অন্য কেউ লিখে কোনোভাবেই মালিকানা দাবি করা যায় না।
এখন গানটিকে নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা কী?
কপিরাইট নিবন্ধন কর্মকর্তা জাফর রাজা চৌধুরী বলেছেন, আমরা তথ্য-উপাত্ত আবার নতুন করে যাচাই-বাছাই করব। এরপর যদি এটি লোকগান হিসেবেই প্রমাণিত হয়, তাহলে যে কেউ তা গাওয়ার অধিকার রাখবে।


আরো সংবাদ



premium cement