২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অসুস্থতা থামাল পূর্ণিমার নবযাত্রা

-

দীর্ঘ বিরতির পর শুটিংয়ে ফেরা নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলেন অভিনেত্রী পূর্ণিমা। লাইট, ক্যামেরা সবই প্রস্তুত ছিল। নির্ধারিত সময় শুটিং সেটে হাজির ছিলেন পূর্ণিমাও। কিন্তু সব কিছু কেমন আকস্মিক উলট-পালট করে দিয়েছে অভিনেত্রীর অসুস্থতা। সেটে বসে নিজের চরিত্র বুঝে নেয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন পূর্ণিমা। পরিচালক নাঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুল কোনো ধরনের ঝুঁকি না নিয়ে সাথে সাথে ‘গাঙচিল’ ছবির শুটিং বন্ধ ঘোষণা করেন।
পূর্ণিমার অসুস্থতার বিষয়টি গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন পরিচালক নেয়ামুল। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ বিরতির পর এফডিসিতে সেট তৈরি করে গাঙচিলের শুটিংয়ের কাজ শুরু হয়েছিল। শুটিং চলাকালীন সেটেই অসুস্থ হয়ে পড়েন পূর্ণিমা। আর তার অসুস্থতার কারণে শুটিং আপাতত বন্ধ রয়েছে। হয়তো কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখতে হবে। তবে পূর্ণিমা সুস্থ হয়ে উঠলে আমরা আবার শুটিংয়ের কাজ শুরু করব।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের লেখা উপন্যাস ‘গাঙচিল’ অবলম্বনে নির্মাণ হচ্ছে সিনেমা ‘গাঙচিল’। ছবিটিতে চিত্রনায়ক ফেরদৌস সাংবাদিক চরিত্রে অভিনয় করছেন ও পূর্ণিমা এনজিওকর্মীর ভূমিকায় অভিনয় করছেন। বিশেষ একটি চরিত্রে রয়েছেন কলকাতার অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।
এদিকে টানা ঘরে বসে বিরক্তি চলে এসেছিল পূর্ণিমার। তাই শুটিংয়ে ফিরতে মরিয়া ছিলেন দর্শকপ্রিয় এই অভিনেত্রী। তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে বন্দী হয়েছিলাম ঘরের চার দেয়ালে। মুখিয়ে ছিলাম শুটিংয়ে ফিরতে; কিন্তু দুর্ভাগ্য এখন অসুস্থ হয়ে আবার ঘরে বন্দী।
গাঙচিল ছাড়াও পূর্ণিমার হাতে আছে ‘জ্যাম’ নামের আরেকটি সিনেমা। পূর্ণিমা বলেন, ‘জ্যাম’ আর ‘গাঙচিল’ ছবির কাজ আগেই কিছুটা করা ছিল। এখন যেটুকু বাকি আছে তা শিডিউল মিলিয়ে শেষ করার পরিকল্পনা করেছেন পরিচালক নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুল। এখন তাই প্রতীক্ষা, করোনার পর বদলে যাওয়া বিশ্বে নতুন করে নিজেকে মেলে ধরার।’ অভিনয়ে ফেরা নিয়ে এক নিঃশ্বাসে এ কথাগুলো বলে গেলেন নন্দিত অভিনেত্রী পূর্ণিমা। দেশীয় চলচ্চিত্রে যখন মন্দা সময়, ঠিক ভিন্ন ধারার দু’টি গল্প নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেছিলেন নির্মাতা নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুল।
পূর্ণিমা বলেন, ‘সময়ের সাথে দর্শক রুচি বদলেছে। বিশ্ব সংস্কৃতি যখন হাতের মুঠোয়, তখন প্রতিটি কাজই করতে হচ্ছে প্রতিযোগিতা করে। যে ধরনের কাজ দর্শক বহুবার দেখেছেন, সেই ধরনের কাজের মধ্য দিয়ে দর্শক মনোযোগ কেড়ে নেয়া যাবে বলে আমার মনে হয় না। তা ছাড়া নিজেও চাইছি, এমন কিছু কাজ করতে, যা দর্শক অনেকদিন মনে রাখবে। তাই কাজের সংখ্যা কম হলো কি বেশি হলোÑ এটা নিয়ে ভাবিনি। তা ছাড়া যে ধরনের গল্প ও চরিত্রে কাজ করতে চাইÑ তার সুযোগ সবসময় আসে না। এ জন্য সময় নিয়ে হলেও সেই কাজ করতে চেয়েছি, যা দর্শকের ভালো লাগবে এবং নিজেও অভিনয় করে আত্মতৃপ্তি পাবো।’
ছবির গল্প প্রসঙ্গে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘এ নিয়ে এখনই কিছু বলতে চাচ্ছি না। পর্দায় ছবি দেখার পর বুঝতে পারব, ভাবনার সাথে বাস্তবের কতটা মিল আছে। পরিচালক যেভাবে পরিকল্পনা করেছিলেন, সেভাবেই ছবি দু’টি নির্মাণ করছেন। তারপরও সবকিছু শেষ না হলে বলা কঠিন, কাজটি প্রত্যাশামাফিক হয়েছে কি না। যদিও শুরু থেকে কাজের মান নিয়ে কোনো সমঝোতা করতে চাইনি। এতদিন সে কাজটাই করতে চেয়েছি, যা দর্শক অনেকদিন মনে রাখবে। সেদিক থেকে ‘জ্যাম’ ও ‘গাঙচিল’ ছবির গল্প ও চরিত্র পছন্দসই বলা যায়।
সেখানে নিজেকে নতুনরূপে তুলে ধরার যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছি। ‘জ্যাম’ অন্য সব ছবির মতো নাচে-গানে ভরপুর বা নায়ক-নায়িকাপ্রধান ছবি নয়। এতে আছে মনে দাগ কাটানের মতো অন্যরকম এক গল্প। গাঙচিলের কাহিনীও হৃদয় স্পর্শ করার মতো।’
মাঝখানে অভিনয় থেকে কিছুটা দূরে ছিলেন পূর্ণিমা। পারিবারিক ব্যস্ততাই তার ওই দূরত্বের কারণ। তবে অভিনয়ের জন্য সবসময় তার মন খারাপ হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একজন অভিনেত্রী হিসেবে সবসময় অভিনয়ের সাথেই থাকতে চাই। কিন্তু এতদিন কেন কোনো ছবিতে অভিনয় করিনি, সেটাও তো দেখতে হবে। ভক্তদের তাই বলি, আপনারা যে অভিনেত্রী পূর্ণিমাকে ভালোবাসেন, তাকে কি গৎবাঁধা গল্প-ছবি বা চরিত্রে দেখতে চান, নাকি তার কাছে ভিন্ন ধরনের কিছু আশা করেন? উত্তরে হয়তো বেশির ভাগই বলবেন, ভিন্ন আঙ্গিকে দেখতে চাই। আমিও এটাই চাই। কিন্তু স্পেশাল কিছু করার নীতিনির্ধারক তো আমি একা নই। কারণ সিনেমা একটা টিমওয়ার্ক। অনেকের সমন্বয়ে ভালো কিছু সম্ভব। ভালো কাজের প্রতিটি ধাপ নিশ্চিত হলেই তো কাজ করা যায়। তা যতদিন না হচ্ছে, ততদিন পর্দায় নিজেকে তুলে ধরতে না পারলেও দুঃখ নেই। হোক না আরেকটু দেরি, তবু যে কাজটি করব তা দেখে যেন দর্শক বলে হ্যাঁ, এমন কিছুর প্রতীক্ষাতেই আমরা ছিলাম।’
দুই দশকের অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সুপারহিট ছবি উপহার দেয়া এই অভিনেত্রী বলেন, ‘সময়ের সাথে দর্শকের রুচির পরিবর্তন হয়। যখন আমরা সেই রুচির পরিচয় পেতে ভুল করি তখন পিছিয়ে যাই। এ কারণেই নতুনরা পুরনোদের জনপ্রিয়তাকে ছাড়িয়ে যায়। এ জন্যই নায়িকা হিসেবে শীর্ষে থাকা কখনো কারো জন্য চিরস্থায়ী নয়। নতুনরা আসবে এবং নিজের জায়গা ছেড়ে দিতে হবে।’
পূর্ণিমা বলেন, ‘আমার আগে যারা শীর্ষে ছিলেন, তাদেরও এই কাজই করতে হয়েছে। এ জন্য নিজের জায়গা ছাড়তে আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলাম।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল