১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনা ভয় কাটিয়ে স্বাভাবিক ছোট পর্দা!

-

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে সবাইকে ঘরে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন। লিখেছিলেন, ‘আমি জাকিয়া বারী মম। দেশ এবং দেশের জনগণের স্বার্থে নিজ ঘরে অবস্থান করছি। আমি এবং আমার পরিবার সব নিয়মকানুন মেনে চলছি। কোনো প্রকার গুজব বিশ্বাস করছি না এবং ছড়াচ্ছি না। আপনি?’ তার ওই জনসচেতনতামূলক পোস্টে প্রায় ছয় হাজার মানুষ লাইক দিয়েছিলেন। মম’র মতো অন্য তারকারাও করোনা থেকে রক্ষা পেতে সবাইকে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে, জীবিকার প্রয়োজনে মানুষ এখন অনেকটাই স্বাভাবিক চলাফেরা শুরু করেছে। যার নাম দেয়া হয়েছে করোনা পরবর্তী নতুন স্বাভাবিক সময়। শোবিজাঙ্গনে এই স্বাভাবিকতা সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ছে ছোট পর্দায়। প্রায় সব তারকাই এখন কাজে ফিরেছেন। অনেকে নিয়মিত না হলেও অল্প অল্প করে কাজ করছেন। করোনার এ দুর্যোগ পরিস্থিতিতে নির্মিত হচ্ছে একের পর এক ধারাবাহিক নাটক ও টেলিফিল্ম। চলতি মাসে একাধিক নাটকের কাজ হয়েছে। এখনো হচ্ছে, এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, করোনাকালে ছোট পর্দাসংশ্লিষ্ট মানুষের ব্যস্ততা বেড়ে চলেছে।
সজল-প্রভা জুটিকে নিয়ে নির্মাতা সরকার রোকন নির্মাণ করেছেন নাটক ‘ইজি লাভ বিজি মন’। গত সপ্তাহে নাটকটির দৃশ্য ধারণের কাজ শেষ হয়েছে। শিগগিরই নাটকটি কোনো একটি বেসরকারি চ্যানেল ও ইউটিউবে প্রচার হবে।
তরুণ নির্মাতা নাজমুল রনি নাটক নির্মাণে বেশ সরব। সম্প্রতি পরিবারভিত্তিক গল্পকে কেন্দ্র করে সাফা কবির ও অপূর্ব জুটিকে নিয়ে নির্মাণ করেছেন খণ্ডনাটক ‘তোকে ভালোবাসি আমি’। ছোট পর্দার প্রিয় এ জুটি ‘দ্বিধা’ নামে আরো একটি নাটকে অভিনয় করেছেন।
আহম্মদ আলী হাসানের গল্পে এটি রচনা ও পরিচালনা করেছেন নির্মাতা সাগর জাহান। রাজধানীর উত্তরার বিভিন্ন লোকেশনে নাটকটির চিত্র ধারণের কাজ হয়েছে। এ নির্মাতা সম্প্রতি ‘মন দরজা’ নামে আরেকটি নাটকের কাজ করেছেন। ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর নাটকটির শুটিংয়ে অংশ নেন মোশাররফ করিম ও জাকিয়া বারী মম। অঞ্জন আইচের রচনায় নির্মাতা দিপু হাজরা নির্মাণ করেছেন ‘অপরূপার গল্প’। প্রথমবারের মতো এ নির্মাতা তৌসিফ-সাফাকে নিয়ে ‘চিরকাল’ নামে একটি টেলিছবি নির্মাণ করেছেন। ৬০ মিনিট দৈর্ঘ্যরে এ টেলিছবির শুটিং শেষ হয়েছে গত সপ্তাহে ঢাকার বিভিন্ন লোকেশনে। ভালোবাসা বিভিন্ন স্তরে কেমন রূপ নেয় সেই গল্প নিয়েই নাটকটি। শিগগিরই এটি সিএমভির ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজে উন্মুক্ত হবে। একক নাটকের পাশাপাশি করোনা পরবর্তী সময়ে বেশ কিছু ধারাবাহিক নাটকের কাজও হচ্ছে। দীপ্ত টিভির নিজস্ব স্টুডিওতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৮ সেপ্টেম্বর শুরু হয় ধারাবাহিক ‘মাশরাফি জুনিয়র’ নাটকের শুটিং। একটি ছোট্ট মেয়ের ফুটবলার হয়ে ওঠার গল্প নিয়ে নাটকটির চিত্রনাট্য লিখেছেন আসফিদুল হক। শতাধিক শিশু-কিশোরের অডিশন নিয়ে সেখান থেকে নির্বাচিতদের বাছাই করে শুরু হয় এর শুটিং।
টিভি নাটকের আরেক জনপ্রিয় নির্মাতা মোস্তফা কামাল রাজ। এ নির্মাতার প্রযোজনা সংস্থা সিনেমাওয়ালা নিয়ে আসছে একটি নতুন নাটক ‘ওসিডি’। অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার অর্থাৎ শুচিবাই রোগ নিয়ে নির্মিত নাটকটির ট্রেইলার এরই মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। আগামী ১ অক্টোবর থেকে নাটকটি ইউটিউবে দেখা যাবে। এতে অভিনয় করেছেন শামীম হাসান, সারিকা সাবা, মনিরা মিঠুসহ আরো অনেকে। করোনাকাল চলছে। তাই করোনাকালের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে অনেক নির্মাতা নির্মাণ করে চলেছেন একক ও ধারাবাহিক নাটক। তেমনি একটি ধারাবাহিক নাটক ‘মাইন্ড গেম’। এতে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী জান্নাতুল হিমি ও নিলয় আলমগীর। নির্মাতা সঞ্জয় বড়ুয়ার পরিচালিত নাটকটি নাগরিক টিভিতে প্রচারের জন্য নির্মিত হয়েছে। ১৭ সেপ্টেম্বর চার পর্বের ধারাবাহিকটির শুটিং শেষ হয়েছে। এ ছাড়া আরো বেশ কিছু নাটক নির্মিত হয়েছে, যেগুলো এরই মধ্যে বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারিত হয়েছে। চলতি মাসে একাধিক নাটক নির্মাণ থেকে বোঝা যায় নতুন স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ছোট পর্দা ধীরে ধীরে সরব হচ্ছে।
তবে অবস্থা স্বাভাবিক হলেও খুব হিসাব করে কাজ করছেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী তানজিন তিশা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ঈদুল আজহার পরপরই নিয়মিত শুটিং শুরু করেছি। তবে একটানা কাজ করছি না। একটু করে বিরতি নিয়ে কাজ করছি। চেষ্টা করছি করোনার মধ্যে কাজ করলেও নিজেকে ও পরিবারকে নিরাপদ রাখতে।’
জনপ্রিয়তা বেশি থাকা সত্ত্বে¡ও অন্যদের তুলনায় অনেক সময় নিয়ে কাজে ফিরেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিশা বলেন, ‘ঈদুল আজহার আগে আগে আমার সহশিল্পীদের প্রায় সবাই শুটিং শুরু করে দিয়েছিলেন। কিন্তু বাসায় আমার বাবার শরীর একটু খারাপ ছিল। তাই তার ও পরিবারের বাকিদের কথা ভেবে আমি তখন আর কাজে যোগ দেইনি। ঈদের কাছাকাছি সময়ে দেখলাম বাসায় থেকে উৎসবের কোনো আমেজ পাচ্ছি না। খুব ইচ্ছা করছিল ঈদের দু’-একটা কাজ করি। তাই সব ধরনের সতর্কতা মেনে তখন দুটো কাজ করিÑ ‘ভুল এই শহরের মধ্যবিত্তদেরই ছিল’ আর ‘ফোরটিন ডেজ’। এই দুটি কাজ থেকে যে পরিমাণ সাড়া পেয়েছি, তাতে আগের বছরগুলোর মতো ঈদে বেশি নাটক বা টেলিছবি না করার আফসোস কেটে গেছে। তা ছাড়া বেশ আগে শুটিং করা পলিটিকস নাটকটিও এই ঈদে প্রচারিত হয়। সেটা থেকেও ভীষণ ভালো প্রতিক্রিয়া পেয়েছি।’


আরো সংবাদ



premium cement