২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মাদকে চাপা পড়তে পারে সুশান্তের মৃত্যুরহস্য

-

বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর সাড়ে তিন মাস হয়ে গেলেও এখনো সমাধান হয়নি মৃত্যুরহস্যের। যদিও মুম্বাই পুলিশ জানিয়েছিল, সুশান্তের মৃত্যু আত্মহত্যাই। তবে অভিনেতার পরিবারসহ ভক্তরা আত্মহত্যা মানতে রাজি নন। এর কারণ হিসেবে সুশান্তের বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীর কিছু অসংলগ্ন আচরণের দিকে আঙুল তোলা হয়ে ছিল। ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিবিআই) তদন্তেও এ বিষয়ে চঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসতে শুরু করেছিল। তবে এখন মনে হচ্ছে মাদকের নিচে চাপা পড়তে পারে সুশান্তের মৃত্যুরহস্য।
সুশান্তের বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীর কথার সূত্র ধরে গত শনিবার দীপিকা পাড়–কোন, শ্রদ্ধা কাপুর, সারা আলী খানসহ বলিউডের বেশ কয়েকজনেক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ভারতের নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো বা এনসিবি। জিজ্ঞাসাবাদে শ্রদ্ধা ও সারা সুশান্তকে মাদকসেবী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। টাইমস অব ইন্ডিয়া, হিন্দুস্তান টাইমস ও বলিউড হাঙ্গামার বিভিন্ন প্রতিবেদনে এ বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সাথে ছাপা হয়েছে। তাই বলিউড সংশ্লিষ্টদের অনেকেই ধারণা করছেন, মাদকে চাপা পড়তে পারে সুশান্তের মৃত্যুরহস্য।
যারা সুশান্তের মৃত্যুকে আত্মহত্যা মানতে নারাজ, তারা মুম্বাই কুপার হাসপাতালের একজন স্বাস্থ্যকর্মীর বক্তব্যকে সামনে নিয়ে এসেছেন। ওই কর্মী সুশান্তকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় থেকে বডি শ্মশানে নিয়ে যাওয়া পর্যন্তই ছিলেন সাথে। তার কথায়, ‘এটা হত্যাই ছিল। সুশান্তের শরীরে সুই ফোটানোর চিহ্ন ছিল। গলায় ১৫ থেকে ২০টা সুই ফুটানোর চিহ্ন ছিল। এমনকি গলায় এক জায়গায় সেলোটেপ লাগানো ছিল। পা ভাঙা ছিল।’ ওই কর্মচারীর দাবি, এটা হত্যা ছিল। অনেক ডাক্তারও বলাবলি করছিলেন, এটা খুন।
ওই ব্যক্তি আরো বলেন, বডি দেখেই তার মনে হয়েছিল এটা আত্মহত্যা নয়। তবে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেখে তিনিও অবাক হয়েছিলেন। ওই ব্যক্তিই দেখেছিলেন হাসপাতালে রিয়া এসে সুশান্তের কাছে ক্ষমা চাইছে। ওই ভিডিওটি ট্যুইটারে শেয়ার করেছেন সুশান্তের বোন শ্বেতা। তিনি লিখেছেন, ‘এসব খবর জানতে পেরে আমার হৃদয় হাজার বার ভেঙে যাচ্ছে। জানি না ওরা ভাইয়ের সাথে কী করেছিল। দয়া করে ওদের গ্রেফতার করুন।’
ওই পোস্টের কয়েকদিন পরই সুশান্তের বান্ধবী রিয়াকে গ্রেফতার করা হয় মাদক রাখার অভিযোগে। আর সেই অভিযোগের সাথেই দীপিকারসহ বলিউডের অন্য তারকের নাম সামনে আসে। এখন এনবিসি সুশান্তের মৃত্যুরহস্যের চেয়ে মাদক সংশ্লিষ্টতাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
বলিউড হাঙ্গামার খবরে বলা হয়, শনিবার এনসিবির জেরার সময় তিনবার কেঁদে ফেললেন দীপিকা পাডুকোন! ওই সময় কর্মকর্তারা দীপিকাকে চেপে ধরেন বলিউডের ড্রাগ সম্পৃক্ততার বিষয়ে। বলিউডের ভেতরে কোনো ড্রাগ ব্যবসায়ীর যাতায়াত রয়েছে তাও জানতে চাওয়া হয়। এ ছাড়াও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে দীপিকা শ্রদ্ধাদের ফোন। প্রয়োজনে আবারো জেরার জন্য ডেকে পাঠানো হতে পারে।
এনসিবির ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল এম এ জৈন জানিয়েছেন, দীপিকা এবং অন্যদের জেরা করে তারা যে তথ্য পেয়েছেন তাই পেশ করবেন আদালতে। এনসিবি জেরায় দীপিকা ড্রাগ চ্যাটের কথা স্বীকার করে নিলেও বলেছেন, কোনো দিন মাদক সেবন করেননি। এমনকি অভিনেত্রী সারা আলি খানও জানিয়েছেন, তিনি কোনো দিন কোনোরকম মাদক নেননি। তবে সারা ও শ্রদ্ধা দু’জনেই জানিয়েছেন, সুশান্ত সিং রাজপুতের মাদক নেয়ার অভ্যাস ছিল।
সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুতদন্তে ড্রাগের অভিযোগে এখন পর্যন্ত ১৯ জনকে গ্রেফতার করেছে এনসিবি। যার মধ্যে রিয়া ও শৌভিকসহ রয়েছেন ১৯ জন। জেরায় রিয়া চক্রবর্তী রাকুল প্রীত, শ্রদ্ধা কাপুর, সারা আলি খানসহ একাধিকজনের নাম নেন। এরপরই সমন পাঠানো হয় দীপিকা-সারা-শ্রদ্ধা-রাকুলকে। এই ড্রাগ চ্যাটের অ্যাডমিন ছিলেন দীপিকা, এমনটাও শোনা গিয়েছিল।
দীপিকাকে এনসিবি ডেকে পাঠাতেই খবর ছড়িয়ে যায়, এনসিবিকে চিঠি দিয়ে দীপিকাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় থাকতে চেয়েছেন রণবীর। এও বলা হয়, রণবীর চিঠিতে লিখেছেন, অ্যাংজাইটির সমস্যা রয়েছে দীপিকার। তাই তার মাঝে মধ্যে প্যানিক অ্যাটাকও হয়। তাই দীপিকাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় যাতে তাকে সেখানে উপস্থিত থাকার অনুমতি দেয়া হয়, সেই আর্জি নাকি জানিয়েছেন রণবীর। তবে বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, ওই খবর সত্যি নয়। এনসিবির পক্ষ থেকে ওই খবর উড়িয়ে দিয়ে জানানো হয়েছে, রণবীরের কোনো চিঠি তাদের কাছে পৌঁছায়নি।
এসবের মধ্যেই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছিল, শুধু নায়িকারাই কি এই চক্রে যুক্ত? বলিউডের পুরুষ মহলের কি কোনো যোগ নেই এ বিষয়ে। যোগ আছে কি নেই, তা এখনই স্পষ্ট করে বলা সম্ভব না হলেও এনসিবির কড়া নজর থেকে যে কেউই পার পাবেন না তা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে। জানা গেছে, এবার জানা গেছেÑ জিজ্ঞাসাবাদের পরবর্তী দফায় এনসিবির দফতরে ডাক পড়তে পারে হৃত্বিক রোশনের। আগামী সপ্তাহেই হয়তো নার্কোটিকস কনট্রোল ব্যুরোর সমন পৌঁছে যেতে পারে হৃত্বিকের হাতে। এনসিবির সন্দেহÑ ২০১৭ সালে মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে হেলথ ডিটক্সের নামে ভর্তি হলেও, এর পেছনে অন্য কোনো কারণ ছিল হৃত্বিকের। হাসপাতালের থেকে অভিনেতার মেডিক্যাল রিপোর্ট বের করার চেষ্টা করছে এনসিবির তদন্তকারী দল। এখানেই থেমে থাকছে না নামের তালিকা। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হতে পারে শাহিদ কাপুর এবং অর্জুন রামপালকেও।
টাইমস অব ইন্ডিয়া ও হিন্দুস্তান টাইমস অবলম্বনে


আরো সংবাদ



premium cement