২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

করোনায় বলিউডে ক্ষতি কয়েক হাজার কোটি

-

চলতি বছরের মার্চের শুরুতে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে ভারতজুড়ে যখন লকডাউনের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল; তখনই বন্ধ হয়ে যায় দেশটির প্রায় অর্ধেক সিনেমা হল। মুম্বাই, দিল্লি, রাজস্থান, গুজরাট, বিহার এবং পাঞ্জাবের প্রায় তিন হাজার ৫০০ সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ঘোষণার দিন থেকেই। পরে বন্ধ হয়ে যায় বাকি সিনেমা হলগুলোও। ৬ মার্চে মুক্তি পাওয়া ‘বাঘি-৩’ এবং ইফরান খানের ‘অ্যাংরেজি মিডিয়াম’ তখন দারুণ ব্যবসা করছিল।
চলচ্চিত্র বাণিজ্য বিশ্লেষক কোমল নাহাটা মুম্বাই মিররকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তখন বলেছিলেন, ‘বাঘি-৩’ ছবিটি প্রতিদিন আয় করছিল ২৫ থেকে ৩০ কোটি রুপি। ‘অ্যাংরেজি মিডিয়াম’ ও ভালো ব্যবসা করছে। এই মুহূর্তে সিনেমা হল বন্ধের ঘোষণা ভারতীয় সিনেমা শিল্পের জন্য বড় ধাক্কা। সরকারের লকডাউনের ঘোষণার ফলে বলিউডের প্রায় ৮০০ কোটি টাকা লোকসান হতে পারে।
তবে সম্প্রতি টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক রিপোর্টে কোমল নাহাটার ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছে। কয়েকজনের উদ্ধৃতি দিয়ে ইন্ডাস্ট্রির আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ আকাশ ছুঁয়েছে।
মার্চ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত বলিউডের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। এমনটাই দাবি বলিউড বিশেষজ্ঞদের। তবে ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে বলিউড বিশেষজ্ঞদের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য রয়েছে। যেমন অক্ষয় রাঠির মতে, এখন পর্যন্ত মহামারীর কারণে বলিউডের আর্থিক ক্ষতি পাঁচ হাজার কোটি রুপি। রিলায়েন্স এন্টারটেইনমেন্টের সিইও শিবাসিশ সরকারের মতে, ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে চার হাজার কোটি রুপি। বলিউডের বিশিষ্ট ট্রেড অ্যানালিস্ট তরণ আদর্শের হিসাবে ক্ষতি চার হাজার কোটি রুপি। আরেক ট্রেড অ্যানালিস্ট কোমল নাহাটার মতে, ক্ষতি হয়েছে ৯ হাজার কোটি রুপি।
করোনাভাইরাস মহামারীর শুরুর দিকেই মার্চে ভারতে লকডাউনের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। সিনেমা, সিরিয়াল, ওয়েব সিরিজের শুটিং বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। পরিস্থিতির দাবি মেনে পুনরায় সম্প্রচারের পথে হাঁটে চ্যানেলগুলো। সম্প্রতি ভারতে নিউ নর্মালে (নতুন স্বাভাবিক অবস্থায়) সুরক্ষাবিধি মেনে প্রথমে সিরিয়ালের শুটিং শুরু হয়। তারপর ধীরে ধীরে কিছু সিনেমার শুটিং, ডাবিং, পোস্ট-প্রডাকশনের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু এতদিনে বলিউডের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণটা বিরাট।
এক্সিবিউটর-ডিস্ট্রিবিউটর অক্ষয় রাঠি বলেছেন, সুরক্ষাবিধির প্রস্তাবনা সরকারকে দেয়া সত্ত্বেও এখনো পর্যন্ত সিনেমা হল খোলার অনুমতি মেলেনি। সিনেমার রিলিজ বন্ধ হওয়ার কারণেই প্রায় এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘বলিউডের মোট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণটা বিরাট। আপনাকে সুদের হার, বেতন, মেইনটেন্যান্স চার্জসহ আরো অনেক খরচ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ ছাড়া অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছে এবং আরো অনেকে সামনে হারাবে। সরকার থেকেও আমরা কোনো সহায়তা পাচ্ছি না। এটা শুধু রোগের মহামারী নয়, বরং আর্থিক মহামারীও বটে। পরিস্থিতি সত্যিই খুব খারাপ এবং সরকারকে অবশ্যই দ্রুত ভূমিকা রাখতে হবে। এ ইন্ডাস্ট্রি বিপুল রাজস্ব পরিশোধ করে এবং আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। বিনোদন ইন্ডাস্ট্রিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় নিতে হবে।’
প্রযোজকদের বক্তব্য, শুটিংয়ের অনুমতি মিললেও তা এখনো পুরোদমে শুরু করা সম্ভব হয়নি। সঞ্জয় লীলা বানসালির ‘গাঙ্গুবাঈ কাঠিয়াওয়াড়ি’, বনি কাপুরের ‘ময়দান’-এর মতো কিছু সিনেমার জন্য বিশাল সেট তৈরি করা হয়েছিল। শুটিং না হওয়ায় এ কয়েক মাসে সেগুলো প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। এই সেটগুলো টিকিয়ে রাখার খরচ পোষাতে না পেরে সেগুলো খুলে ফেলা হয়েছে।
অনেক ছবির বিদেশে শুটিং স্থগিত হয়েছে। করোনা সঙ্কটের কারণে এখন আবার সিনেমার শুটিংয়ের খরচ বেড়ে গেছে। স্যানিটাইজেশনের পাশাপাশি কলাকুশলীদের বীমার জন্য খরচ হচ্ছে বাড়তি অর্থ। সামাজিক দূরত্বের কথা মাথায় রেখে পরিচালকদের চিত্রনাট্য পাল্টাতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে মুম্বাই বিনোদন জগতের।
গত সাড়ে ছয় মাসে বলিউডের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় পাঁচ হাজার কোটি রুপি। সরকারি সাহায্য না পেলে, সিনেমা হলগুলো না খুললে এ ক্ষতি আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সিনেমা হল খোলা প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অক্ষয় রাঠি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘সিনেমা হলগুলো বন্ধ থাকায় কি দেশের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে? না গত কয়েক মাসে কমার কোনো লক্ষণ দেখা গেছে?’ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সম্প্র্রতি ভারতে করোনা সংক্রমণের সংখ্যায় বেশ উল্ল­ম্ফন দেখা যাচ্ছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া ও মুম্বাই মিরর অবলম্বনে

 


আরো সংবাদ



premium cement