২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নতুন স্বাভাবিক অবস্থায় কতটা সাবলীল তারকারা

-

কোভিড-পরবর্তী সময়ে জীবন পাল্টে গেছে পুরোপুরি। কেউ রোগের ভয়ে ঘর থেকে বেরুচ্ছেন না। কাউকে আসতে দিচ্ছেন না বাড়িতে। গৃহকর্মীদের ঢুকতে দিতেও ভয় পাচ্ছেন অনেকে। ফলে পরিশ্রম বেশি হচ্ছে। ত্রিসীমানায় কোনো কোভিড রোগীর কথা কানে এলে আতঙ্কে সিঁটিয়ে যাচ্ছেন। কেউ আবার ভাবছেন কিছুই হবে না। দল বেঁধে বেড়াতে বেরিয়ে পড়ছেন। বিশেষজ্ঞদের মত, এই দুটোর কোনোটাই চলবে না। আতঙ্কে গুটিয়ে থাকলে যেমন হবে না। সব কিছু বেশি হালকাভাবে নিলেও মুশকিল। চলতে হবে ভারসাম্য রেখে। মেলামেশা, আড্ডা, খাওয়া, বেড়ানো, ব্যায়াম, সবই চলবে। তবে নতুন নিয়মে। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘নতুন স্বাভাবিক জীবন’।
আমাদের দেশের তারকারা এই অবস্থাটা কতটা সবলীলভাবে গ্রহণ করতে পারছেন? প্রশ্নটি ছিল এই সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা শাকিব খানের কাছে। তিনি বলেন, ‘আমি করোনার শুরু থেকেই সর্বোচ্চ সচেতনতার সাথে চলার চেষ্টা করেছি। সবসময় মাথায় রেখেছি, এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যা দেখে অন্যরা বিপদে পড়েন। এখন অবস্থা কিছুট স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। আমি চেষ্টা করছি এই অবস্থার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে।’
সম্প্রতি তিনি ‘নবাব এলএলবি’ ছবির শুটিংয়ের মাধ্যমে কাজে ফিরেছেন। ‘আমার কাজ বিনোদন দেয়া। যেহেতু আমি এ মাধ্যমের প্রতিনিধি তাই আমার কাজের মাধ্যমে করোনা জর্জরিত সাধারণ মানুষদের মনে একটু হলেও যদি আনন্দ দিতে পারি, আমার ইন্ডাস্ট্রির মানুষের উপাজর্নের পথ সচল করতে পারি; এটাই হবে আমার বড় স্বার্থকতা।’
নিজেকে ভালো কাজে প্রতিনিধি উল্লেøখ করে তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় ভালো কাজের প্রতিনিধি হতে চেয়েছি। শুরু থেকে সেই চেষ্টা করে আসছি, আগামীতেও করব ইনশাআল্লাহ। এই সঙ্কটকালে ‘নবাব এলএলবি’ নামে নতুন সিনেমার শুটিং শুরু করেছি। আমাকে যারা শাকিব খান বানিয়েছেন দেশ-বিদেশের সেই কোটি মানুষদের দোয়া ও ভালোবাসা সাথে নিয়ে সামনে আগানোর চেষ্টায় থাকলাম। সবার জন্য ভালোবাসা।’
এদিকে করোনার শুরু থেকেই সব কাজ বাদ দিয়ে বাসায় সময় কাটাচ্ছেন জয়া আহসান। এখন নতুন স্বাভাবিক সময়ের সাথে নিজেকে মানিয়ে চলার চেষ্টা করছেন। শুরু করেছেন টুকটাক কিছু কাজও। তবে বড় পরিসরে কাজ করতে আরো কিছুদিন সময় নিতে চান এই অভিনেত্রী। জয়া বলেন, ‘লকডাউনের প্রথম দিকে মনে হতো নতুন এক্সপেরিয়েন্স, তবে মাঝখানে আপসেট হয়ে পড়েছিলাম। মানুষ ছাড়া, মানুষকে না দেখে, কুলাহল ছাড়া কলরব ছাড়া আসলে থাকা যায় না। আমার কাছে সেটাই মনে হলো। তারপর একটা সময় মানিয়ে নিলাম। এখন যেটা হয়েছে, আমার না বাইরে বের হতে আর একদম ভালো লাগে না। মনে হয় আমি বাড়ির আসবাবপত্র কিছু একটা হয়ে গেছি। মনে হচ্ছে বাড়িতেই থাকি।’
অভিনেত্রী ফিটনেসের ব্যাপারে খুব সচেতন থাকেন। লকডাউনের মধ্যে সেই জায়গাটা কতটা ঠিক রাখতে পেরেছেন জয়া আহসান? একটু হেসে জবাব দিলেন, ‘আমি খুব রুটিন করে কিছু খাই না। সবকিছু খাই। প্রচুর খেতে ভালোবাসি। না খেলে অনেক সময় মাথা কোনো কাজ করে না। তবে লকডাউনের সময় আমরা সবাই পরিমিত একটা অভ্যাসের মধ্যে ছিলাম। কি করে আমরা ব্যালেন্স ফুডটা অল্প খাবারের ভেতর দিয়ে খাবো। এটা একটা চিন্তার বিষয় ছিল। বাড়িতে যা কিছু আছে তা দিয়েই ফ্যামিলির সবাই মিলে সার্ভাইব করতে পারব কি না। যারা একটু নিম্ন আয়ের মানুষ আছেন, যারা একটু ব্যালেন্স করে চলেন তাদের জায়গা থেকে চিন্তা করেও খাবার দাবার সব কিছুতেই ব্যালেন্স এবং একটু পরিমিতিবোধ আনার চেষ্টা করেছি।’
অনেকেই কাজ শুরু করেছেন। এ ব্যাপারে নিজের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে জয়া বলেন, ‘টুকটাক কাজ শুরু করেছি। তবে সেটা বলার মতো তেমন কিছু নয়। লোকজন এখন গ্লাভস পরে, মাস্ক পরে কাজে বের হচ্ছেন তাদের বেসিক চাহিদা মেটানোর জন্য। আমার মনে হয় না এখনই তারা সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখতে প্রস্তুত। গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে কাজ করতে চাই না। অভিনয়ে সবচেয়ে বড় পাওয়ার জায়গা হলো নানা জীবনযাপন করা। অন্য কোনো পেশায় আপনি নানাভাবে জীবনকে এক্সপেরিন্ট করার সুযোগ পাবেন না। এখানে সেই সুযোগটা আছে। তাই এখানে সব কিছু দায়িত্ব নিয়ে বুঝে শুনে করতে হবে।’
এই সময়ের আরেকজন ব্যস্ত অভিনেতার নাম আরেফিন শুভ। ‘ঢাকা অ্যাটাক’ মুক্তির পর অনবদ্ধ অভিনয়ের জন্য প্রশংসিত হয়েছেন এই অভিনেতা। তাই এখন সব কাজই তিনি করছেন বেশ ভেবেচিন্তে। করোনার আগে তিনি ব্যস্ত ছিলেন ‘মিশন এক্সট্রিম’ ছবি নিয়ে। এই ছবির জন্য তাকে ৯ মাস রাত-দিন এক করে শরীরের গড়ন ভেঙে আবার গড়তে হয়েছে। প্রশিক্ষণ করতে হয়েছে সকাল থেকে রাত অবধি। শারীরিক গড়ন তৈরির ৯ মাসের সেই সংগ্রামী সফরটাকেই শুভ দিয়েছেন তথ্যচিত্রের রূপ। কথা ছিল ঈদুল আজহার পরপরই এটি ঈদের ‘বিশেষ চমক’ হিসেবে আসবে দর্শকের সামনে। কিন্তু অভিনেতার মা হঠাৎ অসুস্থ হওয়ায় তা আর সম্ভব হয়নি। তবে চলতি মাসেই সেটি প্রকাশ হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
নতুন করে কাজে ফেরা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে যত তাড়াতাড়ি মানিয়ে নেয়া যাবে, তত দ্রুত আসবে সমাধান। একাও যে ভালো থাকা যায়, তা শিখতে হবে। রাতারাতি হবে না। মাথা ঠাণ্ডা করে চেষ্টা করে গেলেই দেখবেন, একসময় পারছেন মানিয়ে নিতে। কয়েকটি সু-অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তার প্রথমেই আছে শরীরচর্চা। এতে আপনা থেকে শরীর-মন ভালো হয়ে যায়। তখন ভালো লাগার জায়গাগুলো খুঁজে বের করা সহজ হয়, হয়তো অনভ্যাসে যার কথা ভুলেই গেছেন। যেমন, বইপড়া, গান শোনা, সৃজনশীল বা সেবামূলক কিছু করা। এখন এসব কাজই করছি।
‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’-দিয়ে করোনা পরববর্তী কাজে ফিরেছেন সিয়াম ও পরীমনি। শুটিং শুরু পর থেকে প্রতিদিন তারা ফেসবুকে খুঁনসুটিতে ভরা ছবিগুলো শেয়ার করছেন। তারা দুইজনেই মনে করেন, করোনা-পরবর্তী সময়টাকে প্রাণবন্ত করতে নিজেদের সবার আগে প্রফুল্ল হতে হবে।

আমি করোনার শুরু থেকেই সর্বোচ্চ সচেতনতার সাথে চলার চেষ্টা করেছি। সবসময় মাথায় রেখেছি, এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যা দেখে অন্যরা বিপদে পড়েন। : শাকিব খান

‘লকডাউনের প্রথম দিকে মনে হতো নতুন এক্সপেরিয়েন্স, তবে মাঝখানে আপসেট হয়ে পড়েছিলাম। মানুষ ছাড়া, মানুষকে না দেখে, কুলাহল ছাড়া কলরব ছাড়া আসলে থাকা যায় না। : জয়া আহসান

‘পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে যত তাড়াতাড়ি মানিয়ে নেয়া যাবে, তত দ্রুত আসবে সমাধান। মাথা ঠাণ্ডা করে চেষ্টা করে গেলেই দেখবেন, একসময় পারছেন মানিয়ে নিতে। কয়েকটি সুঅভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। : আরেফিন শুভ

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল