২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে মেয়রপ্রার্থী

জয়ী হবেন না জেনেও নির্বাচনী দৌড়ে তারা

জয়ী হবেন না জেনেও নির্বাচনী দৌড়ে তারা - ছবি : নয়া দিগন্ত

বিএনপি-আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পাশাপাশি আরো কয়েকটি দলের প্রার্থীরা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। মেয়র পদে জয়ী হবেন না জেনেও প্রার্থী হয়েছেন তারা। এর মধ্যে কয়েকটি দল নিয়মিত প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসলামী আন্দোলন ও সিপিবি প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী ইশতেহারও ঘোষণা করেছে।

ঢাকা দক্ষিণ : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) মেয়র পদে সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস-নৌকা, বিএনপির ইশরাক হোসেন-ধানের শীষ, জাতীয় পার্টির সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন-লাঙ্গল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আবদুর রহমান-হাতপাখা, বাংলাদেশ কংগ্রেসের আক্তারুজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ (ডাব), এনপিপির বাহারানে সুলতান-আম ও গণফ্রন্টের আবদুস সামাদ সুজন-মাছ।

ঢাকা উত্তর : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে ছয়জন প্রার্থী রয়েছেন। এর আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম-নৌকা, বিএনপির তাবিথ আউয়াল-ধানের শীষ, ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ-হাতপাখা, সিপিবির ডা: আহাম্মদ সাজেদুল হক রুবেল-কাস্তে, এনপিপির আনিসুর রহমান দেওয়ান-আম, পিডিপির শাহীন খান-বাঘ।

জাতীয় পার্টি : নির্বাচনী দৌড়ে দুই সিটিতে জাতীয় পার্টির দুইজন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম কিনলেও উত্তরের প্রার্থী কামরুল ইসলামের প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়। তবে টিকে রয়েছেন দক্ষিণের প্রার্থী হাজী সাইফুদ্দিন আহম্মেদ মিলন। জাতীয় পার্টির নির্বাচনী প্রতীক লাঙ্গল। নির্বাচনে জয়ী হবেন না জেনে তিনি প্রথম প্রার্থী হতে চাননি। পরে দলের অনুরোধে প্রার্থী হন। তবে মনোনয়ন বৈধ হওয়ার পর প্রথমে তার দল তাকে বসিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালিয়েছিল। সরকারি দলের সাথে এজন্য বৈঠকও হয়। কিন্তু পরে নানা সমীকরণে প্রার্থী থেকে যান তিনি। তবে প্রথমে কয়েক দিন নির্বাচনী প্রচারণা চালানো থেকে বিরত থাকেন মিলন। পরে অবশ্য সরব হন তিনি। বর্তমানে নিয়মিত প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। দক্ষিণ সিটিতে তার ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে। প্রতিদিনই তিনি বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। গতকাল তিনি মৌচাক থেকে শুরু করে মালিবাগ, কমলাপুর, মতিঝিল, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, মীরহাজিরবাগ, দয়াগঞ্জ, জুরাইন, পোস্তাগোলা, নয়াবাজার, ইংলিশ রোড, বংশাল, হাজারীবাগ, নবাবগঞ্জ বাজার, বালুরঘাট ও কামরাঙ্গীরচরে দিনব্যাপী লাঙ্গলের পক্ষে ভোট চেয়ে গণসংযোগ ও বেশকয়েকটি পথসভায় বক্তৃতা করেন। এ সময় মিলন বলেন, নির্বাচিত হলে বুড়িগঙ্গাকে আবর্জনা ও দখলমুক্ত করে এ নদীকে হাতিরঝিলের মতো সাজাবো। অনেক ভূমিদুস্য সরকারি জায়গা দখল করে রেখেছে, এগুলো দখলমুক্ত করা হবে। ফুটপাথ থেকে হকার উচ্ছেদ করে তাদের পুনর্বাসন করা হবে। তিনি আরো বলেন, নির্বাচিত হলে আমার প্রথম কাজই দুর্নীতি নির্মূলে জেহাদ করা।

ইসলামী আন্দোলন : ঢাকার দুই সিটিতেই চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে উত্তরে মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ ও দক্ষিণে রয়েছেন আব্দুর রহমান। তাদের মার্কা হাতপাখা। এর মধ্যে উত্তরের প্রার্থী গতকাল তার নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছেন। এতে তিনি নির্বাচিত হলে দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ, নগর সরকার প্রতিষ্ঠা, সর্বস্তরে জবাবদিহি নিশ্চিত করা, ওয়ার্ডভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণসহ দুর্নীতি ও দূষণমুক্ত স্মার্ট ঢাকা গড়তে ৩১ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন।
দক্ষিণের প্রার্থী আব্দুর রহমানও প্রতিদিন গণসংযোগ ও পথসভা করছেন। গতকাল তিনি তোপখান রোড, সেগুনবাগিচা, শাহবাগ, আনন্দবাজার, ফুলবাড়িয়া, একুশে হল, জাতীয় প্রেস ক্লাব, খিলগাঁও রেলগেট এলাকায় গণসংযোগ করেন। খিলগাঁও রেলগেট প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত পথসভায় আলহাজ আব্দুর রহমান বলেন, রাস্তাঘাট, সুয়্যারেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও যানজট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করব। সন্ত্রাস, ও মাদকমুক্ত সিটি গড়ে তুলব। এ সময় তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে ভোট নিয়ে শঙ্কা ও উৎকণ্ঠা রয়েছে। সভায় চরমোনাই পীর বলেন, বর্তমান সরকার ও নির্বাচনের কমিশনের (ইসি) অধীনে বিগত বিভিন্ন নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় এবারের সিটি নির্বাচন নিয়ে জনমনে চরম অনিশ্চয়তা আছে। বিভিন্ন প্রার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। যদি সুষ্ঠু নির্বাচন না হয় তাহলে তার দায়ভার সরকার ও ইসিকেই নিতে হবে।

সিপিবি : বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি শুধু ঢাকা উত্তরে প্রার্থী দিয়েছে। উত্তরে তাদের প্রার্থী ঢাকা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা: আহাম্মদ সাজেদুল হক রুবেল। তার মার্কা কাস্তে। তিনি নিয়মিত গণসংযোগ ও পথসভা করে যাচ্ছেন। গতকাল তিনি নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি নির্বাচনের প্রচারে গেলে নানারকম বাধা সৃষ্টির অভিযোগ করেন। এ ছাড়া তিনি ইভিএমের প্রতি অনাস্থার কথা জানিয়ে বলেন, নির্বাচনে কারচুপির ষড়যন্ত্র চলছে।

এনপিপি : ঢাকার দুই সিটিতেই এনপিপির প্রার্থী রয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণে বাহারানে সুলতান বাহার এবং উত্তরে আনিসুর রহমান দেওয়ান প্রার্থী হয়েছেন। তাদের দলীয় আম প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। বাহারানে সুলতান বাহার ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি। সম্প্রতি তিনি এনপিপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। তবে নির্বাচনে তার তেমন কোনো প্রচার-প্রচারণা দেখা যাচ্ছে না। ব্যানার-পোস্টারও চোখে পড়ছে না। ঢাকা উত্তরে এনপিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর সভাপতি মো: আনিসুর রহমান দেওয়ান প্রার্থী হয়েছেন। কিছু এলাকায় তার পোস্টার দেখা গেছে। তিনি স্বল্প পরিসরে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ কংগ্রেস : বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী আক্তারুজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ আকতার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। তার মার্কা ডাব। তিনি একজন লেখক ও সাংবাদিক। তিনি বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত গণসংযোগ করছেন। ট্রাকে করে প্রচার চালাচ্ছেন। বিভিন্ন এলাকায় তার ব্যানার পোস্টার রয়েছে। নিয়মিত লিফলেট বিতরণ করছেন। আয়াতুল্লাহ আকতার বলেন, আমি নিয়মিত প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। ব্যাপক সাড়াও পাচ্ছি।
এ ছাড়া গণফ্রন্টের আবদুস সামাদ সুজন মাছ মার্কা নিয়ে ঢাকা দক্ষিণে এবং পিডিপির শাহীন খান বাঘ মার্কা নিয়ে ঢাকা উত্তরে মেয়রপ্রার্থী হয়েছেন। তবে তাদের নির্বাচনে প্রচারে তেমন একটা দেখা মিলছে না। কোথাও তাদের ব্যানার-পোস্টার দেখা যাচ্ছে না। 


আরো সংবাদ



premium cement