২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আমরা গণতন্ত্রের শোকযাত্রায় শামিল হতে চাই না : মাহবুব তালুকদার

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার - ফাইল ছবি

`নির্বাচনবিমুখতা জাতিকে গভীর খাদের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে' বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ছিল একতরফা। আমরা ক্রমাগত একতরফা নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি, যা গণতন্ত্রের জন্য অনভিপ্রেত। আমরা গণতন্ত্রের শোকযাত্রায় শামিল হতে চাই না- যোগ করেন মাহবুব তালুকদার। 

পাঁচ ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শেষে বুধবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে মাহবুব তালুকদার সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। ‘উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে আমার কথা‘ শীর্ষক একটি লিখিত বক্তব্য তিনি সাংবাদিকদের পড়ে শোনান।

তিনি বলেন, এবার উপজেলা নির্বাচনে সবচেয়ে আশঙ্কার দিক হচ্ছে ভোটারদের নির্বাচনবিমুখতা। নির্বাচনবিমুখতা জাতিকে গভীর খাদের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। কর্তৃত্ববাদী শাসনের অনিশ্চিত গন্তব্যে বাংলাদেশ। এ অবস্থা কখনো কাম্য হতে পারে না।

স্থানীয় সরকার নির্বাচন বা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সংবিধানসম্মত হয়েছে কি না, সে প্রশ্ন তুলে মাহবুব তালুকদার বলেন, স্থানীয় সরকারে কোনো বহিরাগতের হস্তক্ষেপের অবকাশ নেই। অন্য কারও হস্তক্ষেপ হলে উপজেলা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, স্বাভাবিক ও শুদ্ধ হবে না।

তিনি বলেন, এবারের উপজেলা নির্বাচনে সবচেয়ে আশঙ্কার দিক হচ্ছে ভোটারদের নির্বাচনবিমুখতা। একটি গণতান্ত্রিক দেশ ও জাতির জন্য নির্বাচনবিমুখতা অশনিসংকেত। যথোপযুক্ত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে অবশ্যই সমুন্নত রাখতে হবে। 

মাহবুব তালুকদার বলেন, বিরোধী দলগুলো অংশ না নেওয়ায় এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ছিল একতরফা। একতরফা নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়। গণতন্ত্রের অর্থ হচ্ছে ক্ষেত্রবিশেষে সংখ্যাগরিষ্ঠের অভিমত এবং তা বহুত্ববাদের ভেতর থেকে উৎসারিত হতে হয়।

মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘একতরফা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠের কোনো অভিব্যক্তি প্রতিফলিত হয় না বলে এর কোনো ঔজ্জ্বল্য থাকে না। নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের ক্ষেত্র তৈরিতে উপযুক্ত পরিবেশ অপরিহার্য। কিন্তু আমরা ক্রমাগত একতরফা নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি, যা গণতন্ত্রের জন্য অনভিপ্রেত।’

উপজেলা ভোটে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যদের প্রভাব খাটানোর দিকে ইঙ্গিত করে মাহবুব তালুকদার বলেন, উপজেলা নির্বাচন সাংসদদের আওতামুক্ত না হলে তা কখনো অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাঁদের উপদেষ্টার ভূমিকা উপজেলা পরিষদের কৌলীন্য বিনষ্ট করেছে। কোনো কোনো সাংসদ আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বা সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠিয়ে তাঁদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করতে হয়েছে।

স্থানীয় সরকারের এ প্রতিষ্ঠানের প্রতি প্রত্যাশার বিষয়ে মাহবুব তালুকদার বলেন, কারও আজ্ঞাবহ হয়ে দায়িত্বপালন করলে এবং উপজেলা পরিষদের গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য বিসর্জিত হলে উপজেলা পরিষদ জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হবে। সে ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারগুলোর নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এ প্রশ্ন নির্বাচনের ভালো–মন্দ নিয়ে নয়, নির্বাচনের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হলে আদৌ নিয়মরক্ষার প্রয়োজন আছে কি?


আরো সংবাদ



premium cement