‘খাদিজার জামিন না হওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘন’
- মেহের আফরোজ শাওন
- ০২ অক্টোবর ২০২৩, ১৪:৩৭

‘খাদিজার জামিন না হওয়া মূলত মানবাধিকার লঙ্ঘন। দেশের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এটি ভালো বিষয় নয়’, বলছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপার্সন মো. মেজবাহ-উল-আজম সওদাগর।
তিনি আরো বলেন, ‘সে (খাদিজা) যদি কোনো অপরাধ করে থাকে সেটার জন্য বিচার প্রক্রিয়া চলবে। তবে জামিন পাওয়াটা তার অধিকার।'
খাদিজাতুল কোবরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী । ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের অধীনে তাকে গ্রেফতার করা হয়। জুলাই মাসে আপিল বিভাগের আদেশে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত খাদিজার জামিন-সংক্রান্ত শুনানি মুলতবি রাখা হয়েছে। বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি বেঞ্চ এ সিদ্ধান্ত দেয়।
অবিলম্বে খাদিজার জামিন চান পরিবার, তার সহপাঠী ও শিক্ষকরা। খাদিজার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীরা । পরে গণস্বাক্ষর কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। প্রশাসন বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছে মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা।
খাদিজার বড়বোন সিরাজুম মনিরা বলেন, ‘জামিন চাওয়া ছাড়া এখন আমাদের আর কিছু বলার নাই।’
তিনি আরো বলেন, ‘খাদিজা শারীরিকভাবে অসুস্থ। ডা. দেখে টেস্ট দিয়েছে কিছু। টেস্ট করানো হয়েছে কিনা তা জানি না। ওর (খাদিজা) পরীক্ষা নভেম্বরে। আদালতের অনুমতি নিয়ে বই-খাতা দিয়ে এসেছি। নভেম্বরে জানতে পারব ওর জামিন হয়েছে কিনা।’
এছাড়া তিনি আরো বলেন, এর আগেও ওর শারীরিক সমস্যা ছিল, তারপরও ভালো ফলাফল করেছে। পরীক্ষার বিষয়ে শিক্ষকদের সাথেও কথা বলবেন বলে তিনি জানান।
খাদিজার সহপাঠী আকরাম বলেন, ‘আদালত থেকে এখনো কোনো রায় দেয়নি। কী বলবো ও (খাদিজা) আসলে ভুক্তভোগী। বরখাস্ত মেজর দেলোয়ার দেশের বাইরে আছে তার দায়ভার নিতে হচ্ছে খাদিজাকে। এটা কেন? ও শারীরিকভাবে অসুস্থ ।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ওর (খাদিজা) মুক্তির দাবি করছি। দেশের সকলের বিষয়টি নিয়ে স্বোচ্ছার হবে আশা করি। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে মত প্রকাশের জন্য এত বড় শাস্তি এটা মেনে নেয়া কষ্টের।’
তিনি বলেন, ‘ও (খাদিজা) সরকারবিরোধী ছিল না । শুধুই উপস্থাপনা করেছিল। আমরা চাই সে ক্লাসে ফিরুক।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খাদিজার আরেক সহপাঠী বলেন, ‘খাদিজা যে পরিস্থিতে আছে সেটা কাম্য নয়। যা হয়েছে সে তা না বুঝে করেছে। আমরা আশা করি খাদিজা দ্রুতই মুক্তি পাবে।’
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘খাদিজার জামিন হওয়াটা খুবই প্রয়োজন। সাংবাদিকরা চেষ্টা করছেন। তাদেরকে ধন্যবাদ আমাদের পক্ষ থেকে। তবে লেখালেখির ধারা অব্যাহত থাকা জরুরি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মিনহাজ উদ্দীন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খাদিজা যে ব্যক্তিকে নিয়ে শো করেছিলেন তিনি ব্যক্তি খুবই নেতিবাচক চরিত্রের মানুষ। তিনি বাংলাদেশের সংবিধান, রাজনৈতিক দলগুলো, রাষ্ট্রের অন্যান্য সংস্থা আছে সে সম্পর্কে নেতিবাচক ও আক্রমণ করে কথা বলেন, এখনো বলে যাচ্ছেন তিনি বরখাস্ত মেজর দেলোয়ার। আমার কাছে মনে হয় যে ঘটনাপ্রবাহে খাদিজাকে সাজা দেয়া হচ্ছে ওই ঘটনায় যুক্তিযুক্তভাবে দায়ী মেজর দেলোয়ার। তারপরও ধরে নিলাম, অনুষ্ঠানটা আয়োজন করা, কিছু মন্তব্য করা সে প্রেক্ষাপটে খাদিজা যদি দোষীও হয়ে থাকে আমি একজন শিক্ষক হিসেবে মনে করি খাদিজার জামিন পাওয়ার অধিকার আছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘মেয়েটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে কতই বা তার বয়স! এই বয়সী একটা মেয়েকে এক বছরে কারাগারে রাখা, জামিন না দেয়া এটা তার প্রতি বেশি অন্যায় হয়ে যাচ্ছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, খাদিজা যদি ভুল করেও থাকে তাকে ক্ষমা করে দেয়া উচিত। অবিলম্বে জামিন দেয়া হোক।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘এটা আদালতের বিষয়। আদালত ওকে (খাদিজা) মুক্তি দিলে ও যে ইয়ারে ছিল সেখান থেকে পড়াশোনা শুরু করতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয় যা সুযোগ সুবিধা দেয়ার সেটা দেবে। আর স্মারকলিপি আদালতে পাঠানো হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতার বিভাগের শিক্ষার্থী অস্মিতা বিশ্বাস বলেন, ‘আমি মনে করি মেয়েটি এমন কোনো অপরাধ করেনি যার জন্য তাকে এক বছর ধরে জেলে আটকে রাখতে হবে। একটা স্বাধীন দেশের নাগরিকের বাক-স্বাধীনতা থাকা জরুরি। সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা উচিত বলে আমি মনে করি।’
উল্লেখ্য, খাদিজা ফেসবুক ও ইউটিউবে একটি ওয়েবিনারের উপস্থাপক ছিলেন। ‘হিউম্যানিটি ফর বাংলাদেশ’ শিরোনামে খাদিজার উপস্থাপনায় অতিথি ছিলেন বরখাস্ত মেজর দেলোয়ার হোসেন । তিনি তার বক্তব্যে সরকারকে উৎখাতে বিভিন্ন নির্দেশনা দেন।পরে তার এই বক্তব্যের জের ধরে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি ও সরকার-বিরোধী মনোভাব তৈরির চেষ্টা করার দায়ে রাজধানীর কলাবাগান ও নিউ মার্কেট থানায় মামলা করে পুলিশ। ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫,২৯, ৩১,৩৫ ধারার অপরাধ বলে মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা