১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ড. আব্দুল হামিদ আযহারী : যার পিএইডি থিসিস জামিয়াতুল আযহারের গর্ব

ড. আব্দুল হামিদ আযহারী : যার পিএইডি থিসিস জামিয়াতুল আযহারের গর্ব - ছবি : নয়া দিগন্ত

ড. আব্দুল হামিদ আযহারীর পিএইচডি থিসিস জামিয়াতুল আযহারের গর্ব বলে উল্লেখ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির তাফসির অ্যান্ড কুরানিক সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপকরা।

বুধবার (২৪ মে) ‘তাফসিরুল মানার প্রণেতাদ্বয়ের পক্ষ থেকে ইমাম বায়যাবি, ইমাম আবুস সাউদ ও ইমাম আলুসি প্রমুখের ওপর আরোপিত অভিযোগসমূহ : সংকলন ও পর্যালোচনামূলক বিশ্লেষণ’ শীর্ষক পিএইচডি থিসিস ডিসকাশন সেমিনারে এমন মন্তব্য করেন অধ্যাপকরা। এ সময় আযহারের ইতিহাসে এটিই সববৃহৎ থিসিস বলেও স্বীকার করেন তারা।

থিসিস ডিসকাশন সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন তাফসির অ্যান্ড কুরানিক সায়েন্স বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. যাকি মোহাম্মাদ আবু সারি, ইসলামিক অ্যান্ড অ্যারাবিক স্ট্যাডিজ অনুষদের সাবেক প্রফেসর ও ডিন ড. মোহাম্মাদ যিনাতি আব্দুর রহমান এবং আল-উলুমুল ইসলামিয়া অনুষদের প্রফেসর ও সাবেক ওয়াকিল ড. মাহমুদ খলিফা মাহমুদ।

থিসিস সম্পর্কে ড. মোহাম্মাদ যিনাতি আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমি আমার শিক্ষকতা জীবনের ৪০ বছরে অনেক ডিসকাশনে অংশগ্রহণ করেছি, অনেক গবেষণাপত্র দেখেছি। কিন্তু এমন গবেষণাপত্র আর দ্বিতীয়টি দেখিনি। এ গবেষণাপত্র থেকে আমি নিজেও অনেক উপকৃত হয়েছি।’

তিনি আরো বলেন, আল্লাহর শপথ, যিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। ড. আব্দুল হামিদ বিন শামসুল হকের থিসিস থেকে আমি অনেক উপকৃত হয়েছি।

ড. মাহমুদ খলিফা মাহমুদ বলেন, এ এক চমৎকার থিসিস থেকে আমি নিজে উপকৃত হয়েছি। আশা করি, তার দেশ ও আপনারাও সবাই উপকৃত হবেন।

তিনি আরো বলেন, এটাই আমার পড়া সবচেয়ে উপকারী ও তথ্যবহুল থিসিস। আমি ৮০ খণ্ডের তারিখে দিমাশক পড়েছি। কিন্তু তার চেয়েও বেশি উপকৃত হয়েছি ড. আব্দুল হামিদের এই থিসিস থেকে। এতে তিনি আকিদা, তাফসির ও হাদিস থেকে শুরু করে সকল বিষয়ে বিজ্ঞ আলেমের পরিচয় দিয়েছেন। আমি ও অন্য ডক্টররা মনে করি, এ থিসিস আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের কুল্লিয়াতুদ দিরাসাতিল ইসলামিয়া অনুষদের গর্ব।

তিনি আরো বলেন, ‘গবেষক আব্দুল হামিদ তার থিসিসে এমন পাণ্ডিত্যপূর্ণ কিছু অধ্যায় এনেছেন, যেগুলোর মাধ্যমে একজন সহকারী অধ্যাপক অধ্যাপকের স্তরে উন্নীত হতে পারে।’

ড. আব্দুল হামিদের থিসিস তত্ত্ববধায়ক ড. যাকি মুহাম্মাদ আবু সারী বলেন, তিনি এই থিথিসে কুরআন-সুন্নাহ থেকে এত বেশি উদ্ধৃতি দিয়েছেন যে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কারো প্রমাণ প্রয়োজন হলে এ কিতাবে সন্ধান পেতে পারে।

থিসিস ডিসকাশন সেমিনার শেষে তাফসীর ও উলুমুল কুরআন শাস্ত্রে তার এ সাধনার স্বীকৃতিস্বরূপ বিচারক প্যানেল থেকে সম্মিলিতভাবে আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সর্বোচ্চ ফলাফল ‘মারতাবাতুশ শারফিল উলা’ প্রদান করা হয়।

ড. আব্দুল হামিদ আযহারীর থিসিসের বিষয় ছিল চমৎকার। মিশরের প্রখ্যাত চিন্তাবিদ মোহাম্মাদ আবদুহু ও তার শিষ্য মোহাম্মাদ রশিদ রেজা লিখিত ‘তাফসিরুল মানার’ কিতাবে ‘তাফসিরে বায়যাবী’ ‘তাফসিরে আবিস সাঊদ’ ও তাফসিরে রূহুল মাআনী’ বিষয়ে যেসব সমালোচনা স্থান পেয়েছে, তিনি থিসিসে সেগুলোর সার্বিক বিচার বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা পেশ করেছেন।

থিসিসের এমন অভিনব বিষয় নির্ধারণ বিষয়ে তিনি বলেন, আমার এমফিল গবেষণার থিসিসের জন্য পরামর্শ করলে মেজো ভাই ও বাংলাদেশের সুপ্রসিদ্ধ আলেম, মারকাযুদ দাওয়াহ আল-ইসলামিয়ার শিক্ষাসচিব মাওলানা আব্দুল মালেক আধুনিক যুগে ইসলামি রেনেসাঁর দুই পুরোধা ব্যক্তিত্ব শায়খ মোহাম্মাদ আবদুহু ও শায়খ রশিদ রেজা রচিত তাফসিরগ্রন্থ তাফসিরুল মানারের পর্যালোচনা সম্বলিত গবেষণাপত্র লেখার জন্য উৎসাহিত করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে থিসিস তৈরির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।

তার থিসিসের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন ড. মোহাম্মাদ আব্দুর রহমান। তিনি কয়েক মাস আগে ইন্তেকাল করেন। তিনি ছিলেন আল-আযহারের তাফসির শাস্ত্রের প্রথম সারির আলেম। আশির দশকেও তিনি আল-আযহার মসজিদে পাঠদান করতেন।

থিসিস ডিসকাশনের সময় ড. আব্দুল হামিদ আযহারী এই মহান শিক্ষককে গভীরভাবে স্মরণ করেন এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। উস্তাদ সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, আমার শায়খের স্ত্রী পর্দার আড়াল থেকে এক দিন বললেন, ‘আব্দুল হামিদ, শায়খ তোমাকে যতটা মুহাব্বাত করেন, আমি অন্য কোনো ছাত্রকে এতটা মুহাব্বাত করতে দেখিনি। তিনি বাসার দুয়ার তোমার জন্য যেভাবে উন্মুক্ত রাখেন, এতটা সময়-সুযোগ তিনি অন্য কাউকে দেননি।’

উল্লেখ, ড. আব্দুল হামিদ আযহারী ৫ ডিসেম্বর ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে কুমিল্লা মনোহরগঞ্জ থানার সরসপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মাওলানা শামসুল হক। পাঁচ ভাই ও এক বোনের মাঝে তিনি পঞ্চম। অন্য ভাইয়েরা হলেন মুফতি আবুল হাসান আব্দুল্লাহ, শাইখ মাওলানা আব্দুল মালেক, মাওলানা আব্দুল মাজিদ ও মাওলানা আব্দুল আলিম।

তিনি ২০০৪ সালে শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক প্রতিষ্ঠিত জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া থেকে দাওরায়ে হাদিস সমাপন করেন। এরপর ২০০৫ সালে আল-মারকাজুল ইসলামিতে বিশিষ্ট আরবি সাহিত্যিক শহিদুল্লাহ ফজলে বারির কাছে ‘আত-তাদরিব আলাল লুগাতিল আরাবিয়া’ কোর্স সম্পন্ন করেন। ২০০৬ সালে মিরপুর দারুর রাশাদে সাংবাদিকতা ও ইংরেজি ভাষার ওপর বিশেষ কোর্স সম্পন্ন করেন। একই বছর চট্টগ্রামের পটিয়া মাদরাসা থেকে দ্বিতীয় বারের মতো হাদিসের সনদ অর্জন করেন। সনদ প্রাপ্তির পর পটিয়া মাদরাসা ও আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যকার মুআদালা চুক্তির সূত্র ধরে ২০০৭ সালে মিসর পাড়ি জমান।

তিনি মিসরের আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক অ্যান্ড অ্যারাবিক স্ট্যাডিজ অনুষদ থেকে ২০১১ সালে ‘মারতাবাতুশ শরফ’ অর্জন করে গ্রাজুয়েট সম্পন্ন করেন। একই অনুষদের তাফসির অ্যান্ড কুরানিক সায়েন্স ডিপার্টমেন্টের অধীনে ২০১৩ সালে মাস্টার্স সমাপ্ত করেন। ২০১৭ সালে কৃতিত্বের সাথে এমফিল গবেষণা সম্পন্ন করেন। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে তার পিএইচডি থিসিসের বিষয়বস্তু চূড়ান্ত হয়। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও গবেষণার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে বুধবার অনুষ্ঠিত হয় পিএইচডি থিসিস ডিসকাশন সেমিনার।

দেশি-বিদেশী প্রায় দেরশ শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে খুবই জাঁকজমকপূর্ণ ইলমি পরিবেশে সেমিনারটি সম্পন্ন হয়। মিসরের ক‌ওমি শিক্ষার্থীদের একমাত্র সংগঠন ‘আযহার ওয়েলফেয়ার সোসাইটি বাংলাদেশ, মিশর’ ও মিসরের সকল ঘরানার শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্লাটফর্ম ‘বাংলাদেশ স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন, মিসর’-এর দায়িত্বশীলরা দেশের এই কৃতিসন্তানকে ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদান করেন।

ড. আব্দুল হামিদ আযহারীর তথ্যবহুল এ গবেষণাপত্র নিঃসন্দেহে ইসলামি গ্রন্থাগারে শোভা বর্ধন করবে। তার এই গবেষণাপত্রটি তাফসির শাস্ত্রে এক নতুন সংযোজন বলে গণ্য হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
দুবাই পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণ কি কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরানো? এ দেশের ঘরে ঘরে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে : ডাঃ শফিকুর রহমান পিছিয়েছে ডি মারিয়ার বাংলাদেশে আসার সময় ইরানে হামলা : ইস্ফাহান কেন টার্গেট? মাত্র ২ বলে শেষ পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টি জেলে কেজরিওয়ালকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দলের ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা তোকে যদি এরপর হলে দেখি তাহলে খবর আছে, হুমকি ছাত্রলীগ নেতার বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা করা হয়নি : প্রধানমন্ত্রী দাওয়াতী ময়দানে সকল নেতাদের ভূমিকা রাখতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেল

সকল