১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঢাবিতে ভর্তির স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেলো...

বেলায়েত শেখ - ছবি - সংগৃহীত

স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবেন। কিন্তু অভাবের তাড়নায় সংসারের হাল ধরতে হয়। দেয়া হয় না এসএসসি পরীক্ষা। নিজে না পারলেও স্বপ্ন দেখেন ভাইদের নিয়ে। কিন্তু পূরণ হয় না তার ইচ্ছা। বিয়ে করেন। এবার নিজের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বুনতে থাকেন স্বপ্ন। কিন্তু তাদের আগ্রহে ভাটা দেখে নিজেই স্বপ্ন পূরণে লেগে যান। ততদিনে তার বয়স ৫০ ছুঁয়েছে। এসএসসি, এইচএসসি শেষ করে নেমে পড়েন ঢাবির ভর্তিযুদ্ধে। পরীক্ষা দেন ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ‘ঘ’ ইউনিটে। কিন্তু পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। ঢাবিতে ভর্তির স্বপ্ন অধরাই রয়ে যায় ৫৫ বছর বয়সী বেলায়েত শেখের।

মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল মতিন ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে দুপুর ১টায় ফল প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান।

ফলাফলে দেখা যায়, বেলায়েত শেখ পাশ করেননি। তার রোল নম্বর ৫১২১২২৩।

ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়েছেন বেলায়েত শেখ। তিনি ভর্তি পরীক্ষায় পেয়েছেন আট এবং মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জিপিএ’র ভিত্তিতে প্রাপ্ত নম্বরসহ মোট প্রাপ্ত নম্বর ২৬.০২।

স্বপ্ন পূরণ না হলেও চেষ্টা চালিয়ে যাবেন বেলায়েত শেখ। বলেন, আমার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। সামনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করব। দেশের যেকোনো একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া সুযোগ পাবেন বলে আশাবাদী তিনি।

এ বছর ‘ঘ’ ইউনিটে মোট ৭১ হাজার ২৬২ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে পাস করেছেন মাত্র ছয় হাজার ১১১ জন, যা মোট শিক্ষার্থীর ৮ দশমিক শতাংশ ৫৮। বাকি ৯১ দশমিক ৪২ শতাংশ শিক্ষার্থীই ফেল করেছেন। ‌‘ঘ’ ইউনিটে মোট আসন এক হাজার ৩৩৬টি।

বেলায়েত শেখের বাড়ি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায়। দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক তিনি। বড় ছেলে বিয়ে করে ব্যবসা করছেন। ছোট ছেলে শ্রীপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন। একমাত্র মেয়েকে গাজীপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে স্নাতক প্রথম বর্ষে পড়ার সময় বিয়ে দেন।

জানা যায়, ১৯৮৩ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন বেলায়েত। সে সময় বাবা গুরুতর অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় সংসারের হাল ধরতে হয়ে তাকে। পরে আর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। সংসারের হাল ধরেছেন। এরপর ভাইদের পড়াশোনার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তা হয়নি। শেষমেষ নিজের ছেলে-মেয়েদের দিয়ে স্বপ্ন পূরণ করতে চেয়েছিলেন। সেখানেও ব্যর্থ হন।

পরে নিজেই স্বপ্ন পূরণে পা বাড়ান। ৫০ বছর বয়সে ২০১৭ সালে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া শুরু করেন।

২০১৯ সালে ঢাকার বাসাবোর দারুল ইসলাম আলিম মাদ্রাসা থেকে এসএসসি পাস করেন। আর ২০২১ সালে রাজধানীর রামপুরার মহানগর কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

এসএসসিতে জিপিএ ৪.৪৩ ও এইসএসসিতে জিপিএ ৪.৫৮ পান বেলায়েত।

এরপর শ্রীপুরের মাওনার সাইফুর’স শাখায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোচিং করেন বেলায়েত। কিন্তু তার স্বপ্ন পূরণ হয়নি। উত্তীর্ণ হতে পারেননি। কিন্তু তিনি দমে যাবেন না। চেষ্টা করে যাবেন শেষ পর্যন্ত।


আরো সংবাদ



premium cement