২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অনশন ভেঙে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার শপথ শাবি শিক্ষার্থীদের

অনশন ভেঙে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার শপথ শাবি শিক্ষার্থীদের - ছবি : সংগৃহীত

ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে অনশন ভেঙে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার শপথ নিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে মোহাইমিনুল বাশার রাজ এই শপথ পাঠ করান।
শপথ বাক্য পাঠ শেষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একাংশ অনশনরতদের অনশন ভাঙ্গানোর জন্য আসেন। এ সময় সবাই সম্মিলিতভাবে অনশনরত শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থার বিষয় বিবেচনা করে অনশন ভাঙ্গার অনুরোধ জানান। পরে অনশনরতরা শিক্ষার্থীরা তাদের কাছে কিছু সময় চান। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অনশন ভাঙার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানা যায়নি।

অর্থ সহায়তার অভিযোগে পাঁচজন আটক 
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত জন্য যে আন্দোলন হচ্ছে সেখানে অর্থ সহায়তার অভিযোগে পাঁচজনকে আটক করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় তাদেরকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) জালালাবাদ থানায় হস্তান্তর করা হয়। সন্ধ্যায় এসএমপি’র কমিশনার নিশারুল আরিফ জালালাবাদকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আন্দোলনে অর্থ সহায়তা করা অপরাধের মধ্যে পড়ে কিনা, এমন প্রশ্নে নিশারুল আরিফ বলেন, ‘এর মধ্যে ইনসাইড কোনো স্টোরি আছে কিনা সেটা আমরা তদন্ত করে দেখবো। এখানে সহায়তাকারী যারা থাকে- আইনে তো আছে- অনেকে কাছে থাকে না, (কিন্তু) অপরাধ সংগঠন যখন হয় তখন তাদেরকে সহায়তা করে বিভিন্নভাবে। তাহলে তারাও আওতার (অপরাধের) মধ্যে চলে আসে। অর্থ দিয়ে সহায়তা করে যদি কেউ অনিষ্ট ঘটায় সেক্ষেত্রে তো তারাও আসামি হয়।’

নিশারুল আরিফ আরো বলেন, ‘তারা কিসের জন্য টাকা দিচ্ছে সেটা তো আমরা এখনি বলতে পারবো না। খাবারের জন্য যে দিচ্ছে সেটাও তো বলা যাচ্ছে না। জঙ্গিরাও তো অর্থ সংগ্রহ করে, বিভিন্নভাবে সেগুলো নিয়ে কাজ হয়েছে অতীতে। এখন কিসের জন্য দিচ্ছে, এটা নিয়ে তারা কী করবে এখনি বলা যাচ্ছে না। আটকৃতদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।’

আটককৃতরা হলেন- টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর দারিপাকা গ্রামের মতিয়ার রহমান খানের ছেলে হাবিবুর রহমান খান (২৬), বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ থানার মুইন উদ্দিনের ছেলে রেজা নুর মুইন (৩১), খুলনা জেলার সোনাডাঙ্গার মিজানুর রহমানের ছেলে এএফএম নাজমুল সাকিব (৩২), ঢাকা মিরপুরের মাজার রোডের জব্বার হাউসিং বি-ব্লকের ১৭/৩ বাসার এ কে এম মোশাররফের ছেলে এ কে এম মারুফ হোসেন (২৭) এবং কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানাধীন নিয়ামতপুর গ্রামের সাদিকুল ইসলামের ছেলে ফয়সল আহমেদ (২৭)। এর আগে গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর ফার্মগেট ও উত্তরা এলাকা থেকে ওই পাঁচ সাবেক শিক্ষার্থীকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ বিষয়ে সিআইডির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্যের ভিত্তিতে তাদের ধরতে সহায়তা করেছে সিআইডি।

কি শপথ পাঠ করলেন : মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন যেতে শপথ করলেন। শপথ বাক্যে তারা বলেন, আমি শপথ করছি যে, স্বৈরাচারী ফরিদ উদ্দিনের পদত্যাগের আগ পর্যন্ত আমরা আমাদের দাবি আদায়ের লড়াই অব্যাহত রাখবো। অনশনরত ভাই বোনদের এতদিনের অকুতোভয় সংগ্রামের অনুপ্রেরণা বুকে ধারণ করে আরও দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে আমরা আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাবো। তবে এই দুর্বিষহ যন্ত্রণা আমরা বৃথা যেতে দিবো না। দিন হউক রাত হউক আমরা এই আন্দোলনের মাঠ ছেড়ে যাবো না, আমরা আমাদের একদফা দাবি আদায় করেই তবে ঘরে ফিরবে।

শপথ বাক্য পাঠ করার পর শিক্ষার্থীরা তাদের অনশনরতদের অনশন ভাঙ্গানোর জন্য আসেন। এ সময় সবাই সম্মিলিতভাবে অনশনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙ্গার জন্য অনুরোধ করেন এবং অনশনরতদের উপস্থিত শিক্ষার্থীরা জানান দাবি আদায়ের আন্দোলন চালিয়ে যাবে কিন্তু শারীরিক অবস্থার বিষয় বিবেচনা করে তারা যেন অনশন ভাঙ্গেন। পরবর্তীতে অনশনরতরা অন্যান্য শিক্ষার্থীদের কাছে কিছু সময় চান।

মেডিক্যাল সাপোর্ট বন্ধ
শাবিপ্রবি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মেডিকেল সাপোর্ট বন্ধের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার রাত আড়াইটার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আয়োজিত জরুরী প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়টি জানানো হয়।

এ সময় অনশনকারীদের জীবনঝুঁকির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আন্দোলনকারীদের এক মুখপাত্র বলেন, অনশনরত শিক্ষার্থীদের সবার অবস্থার অবনতি হচ্ছে এবং তারা ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। তারা সবাই খিঁচুনি, ব্লাডে অক্সিজেন ও সুগার লেভেল কমে যাওয়া, ব্লাড পেশারসহ নানা শারীরিক জটিলতায় পড়ছেন। তারা অর্গান ড্যামেজের ঝুঁকিতে আছেন।

তিনি আরো বলেন, অনশনকারীদের মেডিক্যাল রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে সিনিয়র চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অনশন দীর্ঘায়তি হলে যেকোনো মুহূর্তে হার্ট ফেইলিওরসহ কোমায় চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ফের আন্দোলনকারীদের বাধার মুখে শিক্ষকরা
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তার বাসভবন অবরুদ্ধ করে রেখেছে। বাসভবনে সাংবাদিক ও পুলিশ ছাড়া আর কাউকে ঢুকতে দিচ্ছেন না তার। ফের বাঁধার মুখে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১টায় শাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. তুলসি কুমার দাশ, সাধারণ সম্পাদক মহিবুল আলম, সহসভাপতি ড. আশরাফুল ইসলামসহ কয়েকজন শিক্ষক ভিসির জন্য খাবর নিয়ে বাসভবনে প্রবেশ করতে চাইলে বাসভবনের সামনে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা তাদেরকে বাধা দেন। এ সময় আলোচনার টেবিলে বসে নিজেদের দাবি দাওয়া জানাতে শিক্ষার্থীদের আহবান জানান শিক্ষকবৃন্দ। কিন্তু শিক্ষকদের কোনো কথাই শুনতে রাজি হননি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

এর আগে, গত সোমবার সন্ধ্যায় শাবির বেশ কয়েকজন শিক্ষক খাবার নিয়ে ভিসির বাসভবনে যেতে চাইলে শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে পড়েন। তখন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছুটা উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।


আরো সংবাদ



premium cement