২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল শাবিপ্রবি, অবরুদ্ধ ভিসি

পুলিশের গুলি ও টিয়ারশেলে আহত ২০ শিক্ষার্থী
শাবিপ্রবিতে মুখোমুখি অবস্থানে শিক্ষার্থী ও পুলিশ - ছবি : নয়া দিগন্ত

তিন দফা দাবীতে আন্দোলনরত ছাত্রীদের উপর ছাত্রলীগকর্মীদের হামলা ও হেনস্তার ঘটনায় উত্তাল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)। এর জেরে রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা।

খবর পেয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ বাহিনী ‘ক্রাইসিস রেসপন্স টিম’ (সিআরটি) ও শতাধিক পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে ভবনের তালা ভেঙে ভিসিকে বের করে। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বাধা দিলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে শিক্ষার্থীদের উপর টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পুলিশ। এতে অন্তত ২০ শিক্ষার্থী আহত হন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রোববার বিকেল ৩টার দিকে একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং শেষে রেজিস্ট্রার ভবন থেকে ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বের হন। ভিসিকে দেখা মাত্র গোল চত্বরে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা দৌড়ে দিয়ে তাকে ঘিরে ফেলে। এ সময় ভিসির পাশে থাকা অন্য শিক্ষক ও কর্মকর্তারা তাকে ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া ভবনে আশ্রয় নিতে চাইলে শিক্ষার্থীরা তাদের ঘিরে টানাহেঁচড়া করতে থাকে। প্রায় ৫ মিনিট পর শিক্ষক ও কর্মকর্তারা ভিসিকে আইআইসিটি ভবনের ভিতরে নিয়ে যান। এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ভবনের ভেতরে জোরপূর্বক ঢুকতে চাইলে ভবনে থাকা নিরাপত্তাকর্মীরা তাদেরকে বাধা দিলে শিক্ষার্থীরা ভবনের সবগুলো গেইটের তালা লাগিয়ে দেন।

ভিসিকে উদ্ধারে বিকেল ৪টার দিকে ক্যাম্পাসে পুলিশ প্রবেশের পরপরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা উত্তেজনাকর স্লোগান দিতে শুরু করেন। তীব্র উত্তেজনার মুখে সাড়ে ৫টার দিকে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এতে একজন পুলিশ সদস্য ও অন্তত ২০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

এর আগে পৌনে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক তুলসী কুমার দাস, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মহিবুল আলম, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক জহীর উদ্দীন আহমেদ, প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. আলমগীর কবীরসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রধান আন্দোলনকারীদের সাথে কথা বলেন। এই সময় তারা শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়েছেন জানিয়ে এক সপ্তাহের সময় চান। কিন্তু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তা না মানায় শিক্ষকররা ওই স্থান ত্যাগ করেন।

এদিকে রোববার সকাল থেকেই বেগম সিরাজুন্নেছা হলের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভে নামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে সকাল থেকে ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের যানবাহন ঢুকতে ও বাহির হতে দেয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ‘প্রক্টরের উপস্থিতিতে হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘হামলা করে আন্দোলন, বন্ধ করা যাবে না’, ‘সাস্টিয়ান সাস্টিয়ান, এক হও লড়াই করো’, ‘ছাত্রলীগের হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘তিন দফা তিন দাবি, মানতে হবে মেনে নাও’, ‘প্রভোস্ট বডির পদত্যাগ, করতে হবে করতে হবে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

এদিকে গত শনিবার ছাত্রীদের আন্দোলনে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট একাত্মতা প্রকাশ করলেও পরে তারা আন্দোলন থেকে সরে যায়। রোববার দুপুরে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তারা জানায়, বেগম সিরাজুন্নেছা হলের শিক্ষার্থীদের চলমান তিন দফা দাবির প্রেক্ষিতে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ১৫ জানুয়ারি রাত ৯টায় নৈতিক সম্মতি জ্ঞাপন করে এবং শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনের পরিপূর্ণ সমর্থন করে। কিন্তু এই আন্দোলন রোববার হঠাৎ সহিংস রূপ নেওয়ায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এই আন্দোলন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের আন্দোলনে ছাত্রলীগের অতর্কিত হামলা এবং কর্তৃপক্ষ তিন দফা দাবি না মানায় অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল বিভাগের ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গত শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে এসব সিদ্ধান্ত জানান শিক্ষার্থীরা। এরপর ক্যাম্পাসের গোলচত্বর থেকে একটি মশাল মিছিল বের করা হয়।

এই ব্যাপারে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. আলমগীর কবীরের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শতাধিক পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের উপর টিয়ারশেল ও গুলি ছুঁড়া হয়েছে কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ এই পদক্ষেপ নিয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement