তদন্ত প্রতিবেদন জমা, রবির সেই শিক্ষিকার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আজ

সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের (রবি) ১৪ শিক্ষার্থীর মাথার চুল কেটে দেয়ার ঘটনায় দুই দফা সময় নিয়েও তদন্ত কমিটির কাছে বক্তব্য উপস্থাপন করতে আসেননি অভিযুক্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় তদন্ত কমিটির কাছে উপস্থিত হয়ে তার বক্তব্য উপস্থাপনের কথা ছিল। তবে তদন্ত কমিটি বিকেল ৩টা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও তিনি আসেননি। ফলে তার সাথে কথা না বলেই এ দিন তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি।

বিকেল ৫টার দিকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো: সোহরাব আলীর কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র অধ্যায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান লায়লা ফেরদৌস হিমেল গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

লায়লা ফেরদৌস হিমেল বলেন, আমরা অভিযুক্ত শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের জন্য বিকেল ৩টা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও তিনি আসেননি। কোনো যোগাযোগও করেননি তিনি। পরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অন্যান্যদের সাথে কথা বলে এবং সিসি টিভি ফুটেজ দেখে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিকেল ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো: সোহরাব আলীর কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।

লায়লা ফেরদৌস হিমেল আরো বলেন, আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলেও সেটি এখনো খোলা হয়নি। শুক্রবার অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় সবার সামনে এটা খোলা হবে। এরপর সিন্ডিকেট সদস্যদের আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে অভিযুক্ত শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, যেহেতু বেশিরভাগ সিন্ডিকেট সদস্য ঢাকাতে অবস্থান করেন তাই এই সিন্ডিকেট সভাটি ঢাকাতে অনুষ্ঠিত হবে। শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে ঢাকায় সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

এ ব্যাপারে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রেজারার আব্দুল লতিফ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সিন্ডিকেট সভায় সবার সামনে সেটি উন্মোচন করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদনের ওপরে ভিত্তি করে সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

সম্প্রতি রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন ক্লাস চলাকালে চুল বড় রাখায় ছাত্রদের বকাঝকা করেন। পরে গত ২৫ সেপ্টেম্বর পরীক্ষার হলের দরজার সামনে কাঁচি হাতে দাঁড়িয়ে কক্ষে ঢোকার সময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের চুল মুঠোর মধ্যে ধরা গেছে, তাদের মাথার সামনের কিছু চুল জোর করে কেটে দেন।

২৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে ওই বিভাগের বাংলাদেশের ইতিহাস বিষয়ে পরীক্ষা শুরুর আগে লাঞ্ছিত শিক্ষার্থী ও তাদের সহপাঠীরা এ ঘটনার প্রতিবাদে পরীক্ষা বর্জন করেন। তারা বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের জন্য বিসিক বাসস্ট্যান্ড এলাকার রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস-১-এর ফটকে জমায়েত হন। এ সময় একটি পক্ষ তাদের পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে ও চাপ দিয়ে সবাইকে পরীক্ষার হলে যেতে বাধ্য করেন। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে নাজমুল নামে প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী লজ্জায় ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে ঘটনা জানাজানি হয়।

এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে আন্দোলন শুরু করলে ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় অভিযুক্ত শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন তার দায়িত্বে থাকা তিনটি পদ (সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান, সহকারী প্রক্টর ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য) থেকে স্থায়ীভাবে পদত্যাগ করেন। কিন্তু তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পদ থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্তের দাবিতে আমরণ অনশনসহ আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। পরে ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।