২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শিক্ষকদের বেতন বৈষম্যে মাঠপর্যায়ে বাড়ছে ক্ষোভ

সফটওয়্যারের ত্রুটি
শিক্ষকদের বেতন বৈষম্যে মাঠপর্যায়ে বাড়ছে ক্ষোভ - ফাইল ছবি

শিক্ষকদের বেতননির্ধারণী সফটওয়্যারের ত্রুটির কারণে বেতন বোনাস প্রাপ্তিতে বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে। আর এ কারণে আসন্ন ঈদে প্রায় ৫২ কোটি টাকার উৎসবভাতা থেকে বঞ্চিত হবেন শিক্ষকরা। এ নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে সারা দেশের শিক্ষকদের মধ্যে। শিক্ষকদের বেতননির্ধারণের সরকারি সফটওয়্যার ‘আইবাস প্লাস প্লাস’-এ ফিক্সেশন না হওয়ায় শিক্ষকরা বেতন ও বিভিন্ন ভাতা মিলিয়ে বর্তমানে প্রতি মাসে প্রায় দুই থেকে তিন হাজার টাকা কম পাচ্ছেন। আসছে ঈদুল ফিতরে সারা দেশের প্রায় সাড়ে তিন লাখ শিক্ষকের প্রত্যেকে এক হাজার ৩০০ টাকা করে উৎসবভাতা কম পাবেন।

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম জানান, মাঠপর্যায়ে দু-একটি জায়গায় বেতন ফিক্সেশন হলেও বেশির ভাগ উপজেলাতেই তা হয়নি। তাই আগামী ১০ মের মধ্যে আইবাস প্লাস প্লাস-এ বেতন ফিক্সেশনের জন্য নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। উল্লেখ্য, গত বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি সারা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন জাতীয় বেতন স্কেলের ১৩তম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছিল। এতে সহকারী শিক্ষকদের ১১ হাজার টাকা স্কেলে মূল বেতন পাওয়ার কথা। অথচ এক বছরেও এই শিক্ষকদের বেতন ১৩তম গ্রেডে ফিক্সেশন করা যায়নি।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ১৩তম গ্রেডে উন্নীত করা হয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘আইবাস ++’ সংযুক্ত করা হয়। এরপর জেলা, উপজেলা ও ডিডিও আইডি থেকে বেতন নির্ধারণের সুযোগ দেয়া হয়। সফটওয়্যারে স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রির চেয়ে কম শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকদের উন্নীত স্কেলের বেতন নির্ধারণের অপশন সংযোজনের জন্য আইবাস++ প্রকল্প দফতরকে পত্র দেয়া হয়েছে। অপশন সংযোজন করার উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। এরপরও মাঠপর্যায়ে উপজেলা শিক্ষা অফিস শিক্ষকদের উন্নীত বেতন স্কেলে বেতননির্ধারণ সম্পন্ন করেনি। এ কারণে উপজেলা শিক্ষা অফিস, জেলা শিক্ষা অফিস ও বিভাগীয় শিক্ষা অফিসের কর্মবণ্টন করে দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। এতে উপজেলা শিক্ষা অফিসের করণীয় হিসেবে বলা হয়েছে, শিক্ষকদের নাম, বিদ্যালয়ের নাম, যোগদানের তারিখ, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, বর্তমান বেতন গ্রেড, রেকর্ডসহ ইত্যাদি প্রাপ্তি স্বীকার করে ২৮ এপ্রিলের মধ্যে উপজেলা/জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে পাঠাতে হবে। হিসাবরক্ষণ অফিসকে ৫ মের মধ্যে এ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। এরপর কত জন শিক্ষক বেতন স্কেলে উন্নীত হয়েছেন, কত জন হননি বা কারো কোনো সমস্যা থাকলে প্রতিবেদন আকারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে ৬ মের মধ্যে পাঠাতে হবে।

অন্য দিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের করণীয় হিসেবে আদেশে বলা হয়েছে, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দেয়া তথ্য সঙ্কলন করে জেলাভিত্তিক প্রতিবেদন ৯ মের মধ্যে নিজ নিজ বিভাগীয় উপপরিচালকের কার্যালয়ে পাঠাতে হবে। এরপর জেলাভিত্তিক বিস্তারিত প্রতিবেদন ১০ মের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালকের (অর্থ) কাছে পাঠাতে হবে। এরপর ১৩তম গ্রেড নির্ধারণ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করে পরিচালক অর্থ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের ঠিকানায় হার্ডকপি বা সফটকপি বা ইমেইল করে ১০ মের মধ্যে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনবৈষম্য নিরসনের দাবি দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে প্রধান শিক্ষকদের সাথে সহকারী শিক্ষকদের ৩ গ্রেড বেতনবৈষম্য নিয়ে সহকারী শিক্ষকরা ২০১৩ সাল থেকে আন্দোলন করে আসছেন। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারেও তাদের বৈষম্য নিরসনের দাবি স্থান পায়। জাতীয় নির্বাচনের পরপর নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে শিক্ষকরা আবারো আন্দোলন শুরু করলে সরকার প্রাথমিকভাবে বৈষম্য কিছুটা কমাতে সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ করে।

শিক্ষকরা জানান, ঈদের আগে বেতন ফিক্সেশন হলে তারা ঈদ বোনাস হিসেবে ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত বেশি পেতেন। বিগত দুই ঈদ, পূজা ও গত বৈশাখী ভাতাতেও তারা এই অর্থ কম পেয়েছেন। এ ছাড়া ১৩তম গ্রেডে বেতন ফিক্সেশন না হওয়ায় শিক্ষকরা বেতন ও বিভিন্ন ভাতা মিলিয়ে প্রতি মাসে দুই থেকে তিন হাজার টাকা কম পাচ্ছেন। শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ও বিভিন্ন বোনাসের অতিরিক্ত অর্থের বকেয়া পাওয়ার সুযোগ নেই, তাই এই অর্থ থেকে তারা স্থায়ীভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন। সব মিলিয়ে গত দেড় বছরে গড়ে ৩০ হাজার টাকারও বেশি আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা।

বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমাজের সভাপতি শাহিনুর আল আমিন বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের বেতননির্ধারণী সফটওয়্যারে একটি অপশন অর্থাৎ স্নাতক দ্বিতীয় শ্রেণীর বাধ্যবাধকতার অপশনটি বাদ দিয়ে দিলে সব শিক্ষক ১৩তম গ্রেডের ফিক্সেশন করতে পারবেন। এ নিয়ে তারা লকডাউনের আগে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের সাথে সাক্ষাৎ করেন। মহাপরিচালক দ্রুত ১৩তম গ্রেডে বেতন ফিক্সেশনের বিষয়ে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের তাগিদ দেন।


আরো সংবাদ



premium cement