২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতির নির্দেশ

৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতির নির্দেশ - ছবি : সংগৃহীত

দীর্ঘ ১০ মাস বন্ধ থাকার পর ফেব্রুয়ারি থেকে সীমিত পরিসরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন বলে মনে করছেন শিক্ষা গবেষকরা। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারির আগেই জানিয়ে দেয়া হবে কবে নাগাদ স্কুল খুলতে পারে। এর মধ্যেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষ করতে বলা হবে বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোন প্রক্রিয়ায় খোলা হবে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে কী ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হবে, ওই বিষয়েও বৃহস্পতিবার শিক্ষার দায়িত্বে থাকা দুই মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা যায়। দুই-এক দিনের মধ্যে মন্ত্রণালয় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠাবে।

করোনা সংক্রমণের কারণে ১৭ মার্চ থেকে দেশের স্কুল, কলেজসহ সব ধরণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছিল সরকার, যা আজ অবধি চালু হয়নি। এরমধ্যেই বাতিল হয়েছে পিএসসি, জেএসসি, এইচএসসি ও সব শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষা।

এ দীর্ঘ সময় অনলাইন ও সংসদ টিভিতে ক্লাস চললেও ডিভাইস ও নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ৬৮% শিক্ষার্থীর কাছে ওই সেবা পৌঁছায়নি। গণস্বাক্ষরতা অভিযানের সাম্প্রতিক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

দীর্ঘ দিন শিক্ষা কার্যক্রম থেকে দূরে থাকার কারণে এখন ৭৫% শতাংশ শিক্ষার্থী এবং ৭৬% অভিভাবক চাইছেন স্কুলগুলো স্কুলে দেয়া হোক।

প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তান জানুয়ারিতে স্কুল খুলে দেয়ায় ঢাকার বাসিন্দা জাহানারা বেগমও চাইছেন তার সন্তান যেন দ্রুত স্কুলে ফিরতে পারে। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘বাসায় থাকতে থাকতে বাচ্চারা খুব ফ্রাস্ট্রেটেড। আগে তো আমি মোবাইল, ল্যাপটপ হাতে দিতাম না। এখন ক্লাস, কোচিং করতে ওইগুলো তো লাগেই। আর বাকি সময়ও এ ডিভাইস নিয়েই পড়ে থাকে। আর অনলাইনের ক্লাস, পরীক্ষায় সঠিক মূল্যায়নটাই হয় না। আমি চাই যতটা সম্ভব নিরাপদ রেখে স্কুল খুলে দেয়া হোক, অনেক দিন তো হলো।’

জাহানারা বেগমের মতো সারা দেশের অভিভাবক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের মতামত বিবেচনায় নিয়ে এবার সীমিত পরিসরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষার দায়িত্বে থাকা দুই মন্ত্রণালয়।

৪ ফেব্রুয়ারির আগেই স্কুল খোলার প্রস্তুতি শেষ করতে কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠানোর কথা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে চতুর্থ, পঞ্চম, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। মূলত এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।

এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় স্বাস্থ্যবিধি কীভাবে নিশ্চিত করা হবে এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়ের বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করতে অন্তত ৬০টি নির্দেশনা প্রস্তুত করা হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে একেকটি বেঞ্চে একজন করে শিক্ষার্থী বসবে। শিক্ষার্থীদের প্রবেশ ও বেরিয়ে যাওয়ার পথ আলদা হবে। একটি ক্লাসে কতজন শিক্ষার্থী বসবে তা নির্ভর করবে ক্লাসের আয়তনের ওপর। উপস্থিত সব শিক্ষার্থীকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পড়তে হবে। মাস্ক সরবরাহ করা হবে স্কুল থেকেই। হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং সাবান পানিতে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকবে।

এ ছাড়া স্কুলের শ্রেণীকক্ষ, টয়লেট, স্কুল প্রাঙ্গণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা, এগুলোর সঠিক সম্পর্কেও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেয়া হবে।

বেসরকারি স্কুল তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে যাবতীয় খরচ বহন করবে। অন্যদিকে সরকারি স্কুলগুলোর খরচ দেবে সরকার।

বাংলাদেশে গত কয়েক সপ্তাহ নমুনা পরীক্ষা সাপেক্ষে করোনার সংক্রমণের চার থেকে পাঁচ শতাংশে নেমে এসেছে যা গত জুন-জুলাই মাসেও ২৫% থেকে ৩৫% ছিল। শীতের মৌসুমে মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানতে পারে বলে যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, তাও হয়নি।

এ ছাড়া করোনার টিকা চলে আসায় পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে বলে সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি গণস্বাক্ষরতা অভিযান সারাদেশের শিক্ষক শিক্ষার্থী অভিভাবক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ প্রায় তিন হাজার জনের ওপর জরিপ পরিচালনা করে দেখেছে যে, প্রায় ৬৯% শিক্ষার্থী করোনাকালে দূর-শিক্ষণে অংশ নিতে পারেনি।

শিক্ষার এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে স্কুলগুলো দ্রুত খুলে দিয়ে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের আওতায় শ্রেণী শিক্ষা চালু করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সমস্ত প্রস্তুতি নিয়ে ধাপে ধাপে শ্রেণী কার্যক্রম শুরু করার জন্য যত দ্রুত সম্ভব ঘোষণা করা প্রয়োজন। এটি বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষা প্রশাসন ও বেসরকারি সংগঠনকে যুক্ত করে প্রস্তুতি নিতে হবে, ওই ব্যবস্থা মনিটরিং করতে হবে। সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফেব্রুয়ারির মধ্যে স্কুলগুলো খোলার ব্যবস্থা করতে হবে।’

এর আগে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন ঢাকার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক।

এ ব্যাপারে গত ১১ জানুয়ারি সরকারকে পাঠানো আইনী নোটিশে বলা হয়, দীর্ঘ দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। তাই ছুটি না বাড়িয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়া হোক।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement