শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে যা বলছেন নর্থ সাউথ ভিসি

করোনা মহামারির কারণে টিউশন ফি ৩০ শতাংশ কমানোর পাশাপাশি স্টুডেন্টস অ্যাক্টিভিটি ফি সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দাবি না মানলে কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষার্থী।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় চাইলেও তাতে রাজি হননি তারা ।

জানা যায়, সেমিস্টার ফি কমানোর দাবিতে এ মাসের শুরুতে দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ই-মেইলের মাধ্যমে পিটিশন জমা দিলেও কর্তৃপক্ষের কোনো সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নামেন।

আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী জানান, তারা প্রতি সেমিস্টারে টিউশন ফি ছাড়াও স্টুডেন্টস অ্যাক্টিভিটি ফি অর্থাৎ কম্পিউটার ল্যাব, লাইব্রেরি ইত্যাদি ফি বাবদ সেমিস্টার ভেদে সাড়ে ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পরিশোধ করে থাকেন। করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস কার্যক্রম যেহেতু বন্ধ, তাই ওই ফি সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার এবং ক্লাস যেহেতু অনলাইনে চলছে এজন্য টিউশন ফি’র ৩০ শতাংশ ছাড়ের দাবি জানান তারা।

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা তো অনলাইনে ক্লাস করছি। আর অনলাইনে ক্লাস করার সব জিনিসপত্র যেমন ল্যাপটপ, কম্পিউটার আমাদের নিজেদের। বাসার বিদ্যুৎ লাইন ব্যবহার করছি। এই সময়ে ক্যাম্পাসের কম্পিউটার ল্যাব, লাইব্রেরি বা অন্য কোনো সুবিধাই তো আমরা গ্রহণ করছি না। তাহলে এগুলোর জন্য বাড়তি ফি কেন দিবো? আর মহামারির কারণে অনেকেই কষ্টে আছে। কর্তৃপক্ষ সেটা কি ভাবে না?’

ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আতিকুল ইসলাম জানান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট অনুযায়ী ফি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টি নিয়ে থাকেন। তবে শিক্ষার্থীদের যে দাবি তা বোর্ডকে জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলেও ভার্চুয়ালি সব কার্যক্রম চলছে। ভর্তি, সার্টিফিকেট তোলা, অনলাইন ক্লাস কোনোটাই বাদ নেই। ওই বাবদ খরচ তো হচ্ছেই। আমাদের অর্থনৈতিকভাবে কোনো সমস্যা নেই। তবে এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে আমরা সঙ্কটে পড়ার আশঙ্কা করছি।’

এর আগের সেমিস্টারেও শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০ শতাংশ টিউশন ফি মওকুফ করেছিল। কিন্তু আসন্ন সেমিস্টারে কোনো ঘোষণা ছাড়াই এই সুবিধা বাতিল করে পরের সেমিস্টারের কোর্স রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চালু করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এর কারণ হিসেবে ভিসি বলেন, ‘করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা এক সেমিস্টারের ফি মওকুফ করেছিলাম। এখন নতুন সেমিস্টার আসার পর ওয়েবসাইট থেকে (ফি) অটোমেটিক চলে গেছে। এখন বোর্ড বিবেচনা করবে যে, তারা এই সুবিধা আবার দিবে কি না।’

এদিকে, ফি মওকুফের এই সুবিধা তুলে নেয়ার প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করলে তাদের শান্ত করতে রোববার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসএমএসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জানায়, ২২ নভেম্বরে সেমিস্টার ফি কমানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে। শিক্ষার্থীরা যেন যার যার বাড়িতে ফিরে যান।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে পাঁচজন প্রতিনিধির সাথে বলে জানান, ২২ তারিখ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের দাবি সোমবারের মধ্যে সিদ্ধান্ত না এলে তারা আরো কঠোর অবস্থান নেবেন।

আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ বলছে ২২ তারিখে সিদ্ধান্ত জানাবে, কিন্তু ২২ তারিখে তো ক্লাস শুরু। কোনো সিদ্ধান্ত দিতে হলে তা আগেই জানাতে হবে। সোমবারের মধ্যে সিদ্ধান্ত না এলে আমরা বিক্ষোভ অব্যাহত রাখবো।’

এ ব্যাপারে ভিসি আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বোর্ডকে তাদের দাবির বিষয়টি জানিয়ে সদয়ভাবে বিবেচনার কথা বলেছি। এজন্য ২২ তারিখ পর্যন্ত সময় চেয়েছি। ওই সময় ক্লাস চালু হলেও কোনো সমস্যা নেই, টাকা তো তখনই দিতে হবে না। পরে দিলেও হবে। আমরা টাকা দেয়ার তারিখ বাড়িয়ে দেব। আমরা শিক্ষার্থীদের বলবো রেজিস্ট্রেশন করে ক্লাস শুরু করে দিতে। বোর্ড যদি টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তাহলে তা কমিয়েই রাখা হবে।’

জানা যায়, রোববার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্যাম্পাসের মূল ফটকের বাইরে অবস্থান নেন বিক্ষুব্ধ পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী। এসময় তারা ব্যানার হাতে মানববন্ধন করার পাশাপাশি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ভেতরে মিছিল করে বিক্ষোভ করে। বিকেলের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রবেশ পথ অবরুদ্ধ করে রাখায় টানা চার-পাঁচ ঘণ্টা আটকা ছিলেন ভিসি মো: আতিকুল ইসলামসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।