২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
প্রেমের সম্পর্ক সোহাগের সাথে ধর্ষণের অভিযোগ মামুনের বিরুদ্ধে

নুরদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনলেন ঢাবির সেই ছাত্রী

নুরদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনলেন ঢাবির সেই ছাত্রী - ছবি : সংগৃহীত

বিয়ের প্রলোভনে দর্শনের অভিযোগ কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। সোমবার রাজধানীর লালবাগ থানায় এ মামলা দায়ের করা হয় বলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আশরাফ উদ্দিন নিশ্চত করেন।

মামলায় নথি থেকে জানা যায়, ছয় আসামির মধ্যে বাকি পাঁচজন হলেন- ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর, নাজমুল হাসান সোহাগ, মো. সাইফুল ইসলাম, নাজমুল হুদা ও আবদুল্লাহ-হিল-বাকি। এতে নুরুল হক নুরকে তিন নম্বর এবং আবদুল্লাহ-হিল-বাকিকে ছয় নম্বর আসামি করা হয়েছে।

এদের মধ্যে হাসান আল মামুনের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ এবং বাকিদের বিরুদ্ধে সহায়তা ও হুমকি প্রদানের অভিযোগ আনা হয়। মামলাকারী ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে পড়ুয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ছাত্রী।

মামলার অভিযোগে ওই ছাত্রী উল্লেখ করেছেন, ‘হাসান আল মামুন আমার ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই। বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সুবাদে তার সাথে আমার পরিচয় হয় ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই। নিজ বিভাগের সিনিয়র হওয়ায় ব্যক্তিগত সম্পর্কের একপর্যায়ে তার সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরই ধারাবাহিকতায় আমার সাথে তার বিভিন্ন সময়ে ম্যাসেঞ্জার, ইমো ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে কথোপকথন হয়। সেখানে আমাকে শারীরিক সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়া হয়। গত ৩ জানুয়ারি দুপুরে হাসান আল মামুন আমাকে তার রাজধানীর নবাবগঞ্জ, মসজিদ রোড, ১০৪ নম্বর বাসায় যেতে বলে। সেখানে আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করে সে। ঘটনার পর ৪ জানুয়ারি আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। ১২ জানুয়ারি আমাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় মামুনের বন্ধু সোহাগের মাধ্যমে। হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় আমি ক্যাম্পাস রিপোর্টারদের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে মামুন ও সোহাগ তা হতে দেয়নি। এর আগে মামুনকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে সে রাজি হয়, কিন্তু আমি অসুস্থ হওয়ার পর সে নানা টালবাহান শুরু করে।

অভিযোগে ওই ছাত্রী বলেন, ‘উপায়ন্তু না দেখে ২০ জুন বিষয়টি ভিপি নুরকে মৌখিকভাবে জানাই। সে বলে মামুন আমার পরিষদের, আমার সহযোদ্ধা। তার সাথে বসে একটা সুব্যবস্থা করে দেব। এরপর ২৪ জুন মীমাংসার আশ্বাস দিয়ে তিনি আমার সাথে নীলক্ষেতে দেখা করতে আসেন। কিন্তু মীমাংসার বিষয়টি এড়িয়ে আমাকে এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন। আমি যদি বাড়াবাড়ি করি তাহলে তার ভক্তদের দিয়ে ফেসবুকে আমার নামে উল্টাপাল্টা পোস্ট করাবে এবং আমাকে প্রতিতা বলে প্রচার করবে বলে হুমকি দেয়।
তাদের ছাত্র অধিকার পরিষদের ১.১ মিলিয়ন সদস্যের গ্রুপে এ প্রচারণার হুমকি দেয়া হয়। নুর আরো জানায়, তার একটি লাইভে আমার সব সম্মান চলে যাবে। ইতোমধ্যে মামলার চার নম্বর আসামি সাইফুল ইসলাম আমার নামে কুৎসা রটিয়েছে এবং ৫ ও ৬ নম্বর আসামিকে লাগিয়ে দেয় কুৎসা রটাতে। তারা ম্যাসেঞ্জার চ্যাট গ্রুপে আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করাসহ সম্মিলিতভাবে চক্রান্ত করে।’

অভিযোগে ওই ছাত্রী আরো বলেন, ‘ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা পর্যায়ের কয়েকজন বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করতে চাইলেও আসামিরা তাদের ষড়যন্ত্রকারী বলে অ্যাখ্যা দেয়। এরপর আমি শারীরিক-মানসিকভাবে অসুস্থ থাকায় এবং আত্মীয়-স্বজনদের সাথে কথা বলে মামলা করায়; মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসান আল মামুন গণামধ্যমকে বলেন, মামলার বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। যে অভিযোগের কথা বললেন, এমন কোনো কিছু আমাদের দ্বারা হয়নি। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে, বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আমরা প্রতিবাদ জানাব।

এ বিষয়ে নুরুল হক নুর বলেন, ওই মেয়েকে চিনি না। তাকে আমি কোনদিন দেখিনি। দুই মাস আগে সে আমাকে ফোন দিয়ে সহযোগিতা চেয়েছে যে কোন এক ছেলের সাথে তার রিলেশন ছিল, যেটি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। সে জন্য আমাকে ভূমিকা রাখতে বলা হয়। এরপর ফোন দেবে বলে সে আর কোন যোগাযোগ রাখেনি।
তিনি বলেন, এক সময়ে সে ছেলেটির পরিচয় দেয় আমাকে এবং বলে আমরা যেন ছেলেটিকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করি। কিন্তু আমি খোঁজ নিয়ে জানি ছেলেটির নাম নাজমুল সে আমাদের সংগঠনের কোন দায়িত্বে নেই। তবে সে আমাদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকতো। তাই আমি মেয়েটিকে বলেছি সেতো আমাদের সংগঠনের কেউ না, পদেও নেই। এরপর মেয়েটি বলে নজমুলসহ আরো একজনকে বহিষ্কার করতে হবে যে হচ্ছে আমাদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন। কিন্তু আমি তাকে বলি সে তো আমাদের আহ্বায়ক। আমি আহ্বায়ককে কিভাবে বহিষ্কার করবো। তোমার সমস্যা মনে হলে আমি আইনগত সহযোগিতা করবো। বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরুদ্ধে সেলে অভিযোগে সহযোগিতা করবো। কিন্তু শেষে সে আর যোগাযোগ রাখেনি।

মামলাটি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে করা বলে অভিযোগ করেন নুর। তিনি বলেন, মেয়েটির বাড়ি ময়মনসিংহ। আমি যতটুকু জানতে পেরেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস মেয়েটিকে টাকা পয়সা দিয়ে মামলা করেছে। আসলে আমরা সরকারের স্বৈরাচারী, দুঃশাসন ও ভারতের দালালির বিরুদ্ধে কথা বলায় আমাদের আটকের রাস্তা বের করছে সরকার। যেটিতে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাও জড়িত।

এ বিষয়ে লালবাগ থানার ওসি কে এম আশরাফ উদ্দিন জানান, হাসান আল মামুন বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। আর ভিপি নুরসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে এ কাজে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে। বাকী চার আসামি হলেন- নাজমুল হাসান সোহাগ, মো. সাইফুল ইসলাম, নাজমুল হুদা ও আবদুল্লাহ-হিল-বাকি। মামলার ঘটনাস্থল হিসেবে লালবাগের নবাবগঞ্জকে উল্লেখ করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement