১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অনিশ্চয়তায় কোটি শিক্ষার্থী

করোনার মধ্যেই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
করোনা ও বন্যায় অনিশ্চয়তায় পড়েছে কোটি শিক্ষার্থী - ফাইল ছবি

করোনার মধ্যেই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে স্কুল কলেজ খুললেও ক্লাসে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছে দেশের কোটি শিক্ষার্থী। সম্প্রতি বন্যায় দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলায় পানিতে তলিয়ে গেছে বহু স্কুল কলেজ। বড় ধরনের সংস্কার আর মেরামত ছাড়া এসব প্রতিষ্ঠান করোনার পরেও শিক্ষাকার্যক্রম চালু করতে পারবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ দিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, জাতিসঙ্ঘ এবং উন্নয়ন সংস্থাগুলো যৌথভাবে দেশের চলমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। অন্য দিকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) পৃথকভাবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একটি খসড়া তালিকা তৈরি করেছে। সেই তালিকা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যে তালিকা পাওয়া যাচ্ছে সেখানে নতুন করে প্রতিদিনই যোগ হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের নাম।

সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদনের চিত্র গত কয়েক দিনে পাল্টে বেড়ে গেছে বহুগুণ। গত সোমবার পর্যন্ত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সারা দেশে দুই হাজারের বেশি বিদ্যালয় ও কলেজ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সংস্থাগুলোর দেয়া তথ্য মতে ক্ষতিগ্রস্ত এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় এক কোটি শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। বই, খাতা, কলম, পেন্সিলসহ শিক্ষা উপকরণ ভেসে গেছে কয়েক লাখ শিক্ষার্থীর। ওই তথ্যানুযায়ী, সবচেয়ে বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে রংপুর বিভাগে; প্রায় আট শ’। এরপর সিলেট বিভাগে সাড়ে ছয় শ’ ও ময়মনসিংহ বিভাগে সাড়ে চার শ’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বন্যার কবলে পড়েছে বহু প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখন পর্যন্ত দেশের ২৫-২৬ জেলায় বন্যায় প্রায় আড়াই হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে পানি ঢুকে যাওয়ায় অবকাঠামো, আসবাবপত্র, খেলার মাঠ, বই-খাতাসহ ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র নষ্ট হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ৬৫১টি বিদ্যালয়।

এ দিকে বন্যাকবলিত হয়েছে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজসহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা ও ক্ষতি নিরূপণের কাজ করছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)।

ডিপিই সূত্র জানায় আকস্মিক বন্যায় পানিবন্দী প্রায় আড়াই হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব বিদ্যালয়ের ভেতরে পানি ঢুকে যাওয়ায় অবকাঠামো, আসবাবপত্র, খেলার মাঠ, বই-খাতাসহ ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, ক্ষতির পরিমাণ প্রতিদিন বাড়ছে। বন্যা শেষ হলে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সারা দেশ থেকে পাঠানো তালিকা থেকে দেখা গেছে, বন্যাকবলিত হয়ে লালমনিরহাটের বিভিন্ন উপজেলায় ৮৬, কুড়িগ্রামে ৭৯, গাইবান্ধায় ৬২, নীলফামারীতে ৫৮, রংপুরে ৫২, বগুড়ায় ৫৫, জামালপুরে ১২৩, সিরাজগঞ্জে ৪৯, টাঙ্গাইলে ৪৫, মানিকগঞ্জে ৩১, ফরিদপুরে ৪৭, নেত্রকোনায় ৭৯, ফেনীতে ৪৯, মাদারীপুরে ৭২, রাজবাড়ীতে ৪৮, শরীয়তপুরে ৪১, ঢাকায় ৫৫, নওগাঁয় ৬৬, সিলেটে ৭২, সুনামগঞ্জে ৪১, পাবনায় ৩২, কিশোরগঞ্জে ৪৭ এবং কক্সবাজারে ৬৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া আরো কিছু জেলা-উপজেলায় কম বেশি প্রতিষ্ঠান বন্যাকবলিত হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, বন্যা শেষ হলে সব জেলা থেকে তালিকা পাওয়ার পর চূড়ান্তভাবে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হবে। ডিপিই মহাপরিচালক মো: ফসিউল্লাহ জানান, বন্যায় ঠিক কী পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে তা নির্ণয় করতে কাজ করছেন কর্মকর্তারা। তবে ক্ষতিগ্রস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংস্কার বা মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ আছে বলে জানান তিনি।

এ দিকে ইতোমধ্যেই প্লাবিত অঞ্চলে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে সব স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। অধিদফতর থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং মাঠপর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তাদের চিঠি পাঠানো হয়েছে। মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বন্যাদুর্গত এলাকার সব স্কুল ও কলেজ সংশ্লিষ্ট এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে জরুরি ভিত্তিতে খুলে দিতে হবে। অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা সংশ্লিষ্ট জেলা শিক্ষা অফিসাররা ইমেইলে (dsheflood2019@gmail.com) অধিদফতরে পাঠাবেন এবং আঞ্চলিক পরিচালক ও পরিচালককে অনুলিপি দেবেন।


আরো সংবাদ



premium cement