২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

A বললেই কেন আপেলের কথা মাথায় আসে?

A বললেই কেন আপেলের কথা মাথায় আসে? - ছবি : সংগৃহীত

বর্তমান সমাজে ঘটে যাওয়া নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে আমদের শিক্ষায় রয়েছে নানা ত্রুটি, নানা জটিলতা। শিক্ষাব্যবস্থায় ত্রুটির ফল আমরা এখন দেখতে পাই সমাজের নানা স্তরে। বর্তমান প্রজন্মকে শিক্ষিত হওয়ার পরও বেকারত্ব, মানবিক মূল্যবোধের বিপর্যয়, চিন্তাশীল মননের অভাব, সৃষ্টিশীল কাজে সঠিক মর্যাদা না পাওয়া, অসামঞ্জস্যতা নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধারের জন্য প্রাথমিক অবস্থায় অর্থাৎ স্কুল পর্যায়ে শিক্ষাব্যবস্থায় সংস্কার প্রয়োজন। বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণার না থাকা, সৃজনশীলতার অভাব, বাচ্চাদের হতাশায় নিমগ্ন হওয়া শিক্ষাব্যবস্থায় প্রতিফলিত প্রধান কয়েকটি প্রধান ত্রুটি।

কিন্তু এগুলো শিক্ষায় ত্রুটির লক্ষণ মাত্র। এই ত্রুটির পিছনের মূল কারণ নিয়ে এখন ভাবনার সময় এসেছে।

একটা উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা স্পষ্ট করা যাক। এখন যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয় 'A' দিয়ে একটি শব্দ বলুন, আপনার নির্ধারিত সময় মাত্র দুই সেকেন্ড৷ আপনার উত্তরটি Apple হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় এক শ' ভাগ। দেখা যায়, প্রায় ৯৮ শতাংশ মানুষের মাথায় A তে Apple শব্দটি প্রথম এসে থাকে। কখনো ভেবে দেখেছেন কেন?

এর মূল কারণ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। কিন্ডারগার্টেন পর্যায়ে আমাদের A-তে Apple শিখতে বাধ্য করা হয়েছে। অক্ষর পরিচয়ের পর সাধারণত এক এক বাচ্চার মাথায় ভিন্ন ভিন্ন শব্দ এসে থাকে। কেউ হয়তো ভাবে Ant কেউবা ভেবে থাকে April, কারো মাথায় হয়তো Airplane-এর চিত্র ভেসে ওঠে। কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় আমরা বাচ্চার চিন্তার বিষয়টি জানার চেষ্টাই করি না। শিক্ষক, বাবা-মা সবাই মিলে তার মাথায় একটি নির্দিষ্ট শব্দ ঢুকিয়ে দিয়ে তাকে সেভাবেই চিন্তা করতে বাধ্য করা হয়। যার ফল স্বরূপ আজ A-তে Apple ছাড়া অন্য শব্দ আপনার মাথায় আসছে না।

প্রত্যেকটি বাচ্চা বিদ্যালয় যাত্রা শুরুর আগে তার নিজের এক ভিন্ন জগৎ ও চিন্তা নিয়ে বড় হতে থাকে। কিন্তু তাদের চিন্তা জগতের ভিন্ন ভিন্ন রঙয়ের ফুলকে আমরা একটি মাত্র রঙে পাল্টে দেই। এতে নষ্ট হয়ে যায় তাদের সৃজনশীল ক্ষমতা।

শুধু তাই নয়, মুখস্ত ও উত্তর নির্ভর পড়াশোনা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধারণাভিত্তিক জ্ঞান ছাড়াই বড় করে তুলছে। কোনো বাচ্চার মাথায় যখন স্বভাবতই প্রশ্ন আসে সূর্য কী? অথবা গাছ খাবার পায় কিভাবে? তখন তার অভিভাবক বা শিক্ষক তাকে সর্বোচ্চ চেষ্টার মাধ্যমে তাৎক্ষণিক গদবাঁধা সঠিক উত্তরটি মুখস্ত করিয়ে দেন। প্রমথ চৌধুরীর ভাষায় যাকে বলা হয় শিক্ষা গলধঃকরণ করানো। ওই তোতাপাখির বুলির মতো মুখস্ত লাইনগুলো বাচ্চার প্রশ্নের উত্তর হলেও এটি তার চিন্তাশক্তিতে ব্যঘাত ঘটায়। সূর্য কী? এটি নিয়ে সে আর ভাবে না, কারণ তার মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে সূর্যের একটি চমৎকার সংজ্ঞা। যা আমার বা আপনার বোধগম্য হলেও ওই বয়সে বাচ্চাটি তার সামান্যই গ্রহণ করতে পারে। এভাবে শিশু বয়সেই নষ্ট হয়ে যায় তাদের কল্পনাশক্তি।

যুক্তরাষ্ট্রের দ্যা ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস এডমিনিস্ট্রেশন অর্থাৎ নাসার তথ্য মতে, প্রাথমিক অবস্থায় প্রায় ৯৮ ভাগ শিশুর ভিন্ন বা আলাদা চিন্তা ও বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বড় হয়। কিন্তু এই শিক্ষাব্যবস্থায় অতিক্রম করে আসা ২৫ বছরের প্রাপ্তবয়স্কদের মাঝে দেখা গেছে মাত্র দুই শতাংশ আলাদা চিন্তা ধারণ করছে আর বাকি ৯৮ শতাংশ একই চিন্তা বা ধারণা করে থাকেন। ব্যতিক্রম চিন্তাধারা বিলুপ্ত হওয়া ও বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান স্পষ্ট না থাকায় পরবর্তী জীবনে তিনি পিছিয়ে পড়েন। আর পরিশেষে সমাজের দোষারোপ তাকে হতাশায় টেনে নেয়।

তবে শিক্ষাব্যবস্থার এ ধরনের গৎবাঁধা নিয়মের পিছনে কিছু যৌক্তিক কারণও রয়েছে।

আমাদের অধিকাংশেরই মাথায় ছোটবেলায় একটা প্রশ্ন বিরক্তভরেই এসেছে। আর সেটা হলো স্কুল কে প্রথম তৈরি করেছে?

হরেসি ম্যান নামে একজন আমেরিকান ভদ্রলোক ১৮৪৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম স্কুল সিস্টেমের সূচনা করেন। মূলত ১৮ শতকের দিকের ওই সময়টি ছিল শিল্প বিপ্লবের যুগ। তখন প্রয়োজন ছিল এমন কিছু মানুষের যারা নির্দিষ্ট একটি বুদ্ধিমত্তা নিয়ে নির্দেশনা মেনে কাজ করতে সক্ষম হবে। অর্থাৎ কল-কারখানা নির্ভর কাজ জানাটাই ছিল তৎকালীন শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য। বিষয়টি ছিল অনেকটা কর্মদক্ষতা সম্পন্ন রোবটের মতো। তাই তখনকার শিক্ষাব্যবস্থাকে সাজানো হয়েছিল ওই আদলে যা আমরা বর্তমান সময়েও দেখতে পাই। শিল্প বিপ্লবের সময় পরিবর্তন হলেও পাল্টায়নি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। যার ফলে এত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর সেখান থেকে ভুড়ি ভুড়ি সার্টিফিকেট নিয়ে বেরোনোর পরও আমাদের দেখতে হচ্ছে হতাশা ডুবে যাওয়া শিক্ষিত জাতি। ব্যক্তিজীবনে পদে পদে হোঁচট খেতে হয় নতুন সব সমস্যা মোকাবেলায়, মানসিকভাবে সবসময় নির্ভরশীল থাকতে হয় অন্য কারো উপর। কেননা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় শেখানো হয়ে থাকে কিছু হাতে গোনা সমস্যা ও তার সমাধান। পরে ব্যক্তি তার বাস্তব জীবনের সমস্যার সাথে এসবের সামান্যই মিল খুঁজে পান।

এখন সময় এসেছে এই সমস্যা সমাধানের। যার জন্য শিশুর প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। অভিভাবকসহ শিক্ষাব্যবস্থার সাথে জড়িত সকলকে একসাথে এই শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে।
ইউটিউব থেকে

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
থামছে না পুঁজিবাজারে পতন বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদ ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ভোট শুরু: নাগাল্যান্ডে ভোটার উপস্থিতি প্রায় শূন্য কারাগার এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী আন্দোলনে ব্যর্থ বিএনপির হাল ধরার কেউ নেই : ওবায়দুল কাদের পাবনায় ভারতীয় চিনি বোঝাই ১২টি ট্রাকসহ ২৩ জন আটক স্বচ্ছতার সাথে সরকারি অনুদানের চলচ্চিত্র বাছাই হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী মিয়ানমার বিজিপির আরো ১৩ সদস্য পালিয়ে এলো বাংলাদেশে শ্যালকের অপকর্মে দুঃখ প্রকাশ করলেন প্রতিমন্ত্রী পলক মন্দিরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ তুলে ২ ভাইকে হত্যা ইরানে ইসরাইলি হামলার খবরে বাড়ল তেল সোনার দাম যতই বাধা আসুক ইকামাতে দ্বীনের কাজ চালিয়ে যাবো : ডা: শফিকুর রহমান

সকল