১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
বিরোধীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা

ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন

-

আওয়ামী লীগ নতুন করে সরকার গঠনের পর বিরোধীরা বেশ কয়েক মাস কর্মসূচি দেননি। এর আগে নির্বাচন ঘিরে সরকারবিরোধী আন্দোলন কঠোরভাবে দমন করা হয়েছে। এতে অনেকের প্রাণ গেছে, পঙ্গু হয়েছেন অনেকে। ওই সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আন্দোলনকারীদের প্রতিপক্ষ বানিয়ে দেয়া হয়েছিল। সাথে ছিল সরকারি দলের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন। তাদের সম্মিলিত আক্রমণে বিরোধী নেতাকর্মীদের একটি অংশকে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে হয়। প্রকৃত বাস্তবতায় দেশে এখন বিরোধী নেতাকর্মীর ওপর নির্দয় হামলা প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের কর্মসূচিতে পৈশাচিক কায়দায় হামলার ঘটনা যেন কোনো অপরাধ নয়। যদিও দুর্বল কোনো গণতান্ত্রিক দেশেও এ পরিস্থিতি কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
কয়েক মাস বিরতির পর বিরোধী দল যখন এবার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেয়, তা-ও বিভিন্ন জায়গায় ক্ষমতাসীনদের হামলার শিকার হয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে বিএনপি সমাবেশের ডাক দেয়। এই কর্মসূচিতে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির বেশ কিছু নেতাকর্মী আহত হন। কয়েকজন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সমাবেশ পণ্ড করে দিতে সরকারি দলের সন্ত্রাসী হামলার পাশাপাশি পুলিশকেও বিভিন্ন জায়গায় চড়াও হতে দেখা যায়। নাটোরে দলটির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম বাচ্চুকে যুবলীগ কর্মীরা কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। জেলা কার্যালয়ের সামনে প্রকাশ্যে এ হামলা চালানো হয়। তার আগে তারা মোটরগাড়ির একটি বহর নিয়ে এসে ককটেল নিক্ষেপ ও গুলি চালান। এই সময় সমাবেশের প্রধান অতিথি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেনকেও পিটিয়ে আহত করা হয়। শহরের অলিগলিতে সমাবেশ অভিমুখী বিএনপি নেতাকর্মীদের বেধড়ক পেটানো হয়। পটুয়াখালীতেও সমাবেশে আগত নেতাকর্মীদের সরকারি দলের লোকেরা বেধড়ক পিটিয়েছেন। এতে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতা গুরুতর আহত হন। হামলায় আরো ১৩ জন আহত হন। পুলিশের বাধায় সমাবেশ করতে পারেনি বাঘেরহাট জেলা বিএনপি।
হামলার ধরন থেকে এটা স্পষ্ট, এগুলো ভয় দেখানোর কলাকৌশল। এমন কৌশল বর্তমান সরকারের সময় বহুভাবে দেখা গেছে। নিশানা করে বিরোধী নেতাদের আটক করাও এর একটি অংশ। পরে তাদের ব্যাপারে কোনো খোঁজখবর না দেয়া। আগে এভাবে গুমের শিকার হয়েছেন বিরোধীরা। এখন তা ঘটছে সাদা পোশাকে আটকের মাধ্যমে। তবে তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে পরে। রাজধানীতে গত কয়েক দিনে ছাত্রদলের তিন নেতা নিখোঁজ হয়েছেন। পরিবারের দাবি, সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের আটক করে নিয়ে গেছে।
বর্তমান সরকারের আমলে বিরোধীদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভের সুযোগ একেবারে সীমিত করা হয়েছে। অনুমতি নিয়ে কিছু ক্ষেত্রে সমাবেশ করা গেলেও এতে ঝুঁকি থাকে পুলিশের বাধার। সবচেয়ে আশঙ্কার ব্যাপার থাকে সন্ত্রাসী হামলার। যেকোনো বিষয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের অধিকার দেশের নাগরিকমাত্র সবার সাংবিধানিক অধিকার। সরকারের উচিত সবার এই অধিকারের সুরক্ষা দেয়া এবং ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো। সেই সাথে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। যাতে করে সবাই তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চা করতে পারেন।


আরো সংবাদ



premium cement